নিশ্চয় সাবা সম্প্রদায়ের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল একটি নিদর্শন : দু’টি উদ্যান, একটি ডানে ও অপরটি বামে, (তাদেরকে বলা হয়েছিল) ‘তোমরা তোমাদের রবের রিয্ক থেকে খাও আর তাঁর শোকর কর। এটি উত্তম শহর এবং (তোমাদের রব) ক্ষমাশীল রব’। আল-বায়ান
সাবার অধিবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে একটা নিদর্শন ছিল- দু’টো বাগান; একটা ডানে, একটা বামে। (তাদেরকে বলেছিলাম) তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযক ভোগ কর আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। সুখ-শান্তির শহর আর ক্ষমাশীল পালনকর্তা। তাইসিরুল
সাবাবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন! দু’টি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে। তাদেরকে বলা হয়েছিলঃ তোমরা তোমাদের রাবব প্রদত্ত রিয্ক ভোগ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম এই স্থান এবং ক্ষমাশীল তোমাদের রাবব! মুজিবুর রহমান
There was for [the tribe of] Saba' in their dwelling place a sign: two [fields of] gardens on the right and on the left. [They were told], "Eat from the provisions of your Lord and be grateful to Him. A good land [have you], and a forgiving Lord." Sahih International
১৫. অবশ্যই সাবাবাসীদের(১) জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শনঃ দুটি উদ্যান, একটি ডান দিকে, অন্যটি বাম দিকে।(২) বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের রবের দেয়া রিযিক ভোগ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।(৩) উত্তম নগরী এবং ক্ষমাশীল রব।
(১) হাদীসে এসেছে, ‘সাবা ছিল আরবের এক ব্যক্তির নাম। আরবে তার বংশ থেকে নিম্নোক্ত গোত্রগুলোর উদ্ভব হয়ঃ কিন্দাহ, হিম্য়ার, আয্দ, আশ’আরিয়্যীন, মায্হিজ, আনমার (এর দুটি শাখাঃ খাস'আম ও বাজীলাহ), আমেলাহ, জুযাম, লাখম ও গাসসান।’ [তিরমিযী: ৩২২২] ইবনে কাসীরের মতে, ইয়ামনের সম্রাট ও সে দেশের অধিবাসীদের উপাধি হচ্ছে সাবা। তাবাবেয়া সম্প্রদায়ও সাবা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। [ইবন কাসীর]
(২) শহরের ডানে ও বায়ে অবস্থিত পাহাড়দ্বয়ের কিনারায় ফল-মুলের বাগান তৈরী করা হয়েছিল। এসব বাগানে খালের পানি প্রবাহিত হত। সমগ্ৰ সাবা রাজ্য শ্যামল সবুজ ক্ষেত ও বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল। তার যে কোন জায়গায় দাঁড়ালে দেখা যেতো ডানেও বাগান এবং বাঁয়েও বাগান। এ সব বাগান পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় পাহাড়ের কিনারায় দু’সারিতে বহুদূর পর্যন্ত ছিল। এগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও পবিত্র কুরআন দুটি বাগানের কথা ব্যক্ত করেছে। কারণ, এক সারির সমস্ত বাগান পরস্পর সংলগ্ন হওয়ার কারণে এক বাগান এবং অপর সারির সমস্ত বাগানকে একই কারণে দ্বিতীয় বাগান বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব বাগানে সবরকম বৃক্ষ ফল-মুল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত। কাতাদাহ প্ৰমুখের বর্ণনা অনুযায়ী একজন লোক মাথায় খালি ঝুড়ি নিয়ে গমন করলে গাছ থেকে পতিত ফলমুল দ্বারা তা আপনা-আপনি ভরে যেত; হাত লাগানোরও প্রয়োজন হত না। [ইবন কাসীর, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
(৩) আল্লাহ তা'আলা নবীগণের মাধ্যমে তাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত এই অফুরন্ত জীবনোপকরণ ব্যবহার কর এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সৎকর্ম ও আল্লাহর আনুগত্য করতে থাক। আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ শহরকে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর শহর করেছেন। শহরটি নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত ছিল এবং আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ ছিল। সমগ্র শহরে মশা-মাছি ছারপোকা ও সাপ-বিছুর মত ইত্যর প্রাণীর নামগন্ধও ছিল না। বাইরে থেকে কোন ব্যক্তি শরীরে ও কাপড়-চোপড়ে উকুন ইত্যাদি নিয়ে এ শহরে পৌঁছালে সেগুলো আপনা-আপনি মরে সাফ হয়ে যেত। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) সাবা’বাসীদের জন্য ওদের বাসভূমিতে এক নিদর্শন ছিল;[1] দু’টি বাগানঃ একটি ছিল ডান দিকে, অপরটি ছিল বাম দিকে;[2] ওদেরকে বলা হয়েছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দেওয়া রুযী ভোগ কর[3] এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[4] এ শহর উত্তম[5] এবং তোমাদের প্রতিপালক ক্ষমাশীল।’ [6]
[1] سَبَأٍ (সাবা’) এক জাতি ছিল, যার রানী সাবা’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। যিনি সুলাইমান (আঃ)-এর সময় (তাঁরই হাতে) মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। জাতির নামে দেশের নামও সাবা’ ছিল। বর্তমানে সে দেশ ইয়ামান নামে প্রসিদ্ধ। উক্ত দেশ বড় সুখী দেশ ছিল। স্থল ও জলপথের বাণিজ্যের জন্যও উত্তম ছিল এবং চাষ-বাস ও ফল-ফসল ইত্যাদিতেও বড় ভাল ছিল। আর বাণিজ্য ও চাষাবাদ উভয়ের উৎকর্ষই যে কোন দেশ ও জাতির সুখের কারণ হয়। এখানে সেই ধন-দৌলতের আতিশয্যকে আল্লাহর বিশাল ক্ষমতার একটি নিদর্শন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
[2] বলা হয়েছে যে, তাদের শহরের দুই দিকে পর্বত ছিল, সেখান থেকে ঝরনা ও নালা বেয়ে পানি শহরে প্রবেশ করত। তাদের শাসকগণ পর্বতের মাঝে বাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছিল এবং তার সাথে বহু বাগান লাগিয়ে দিয়েছিল, যাতে নির্দিষ্টভাবে পানি যাওয়ার রাস্তা হয়ে গিয়েছিল এবং বাগানে পানি পৌঁছতে সহজ ও সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। সেই বাগানগুলিকে ডানে ও বামে দুটি বাগান বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেকে বলেন, جَنَّتَيْنِ এর অর্থ দুটি বাগান নয়; বরং উদ্দেশ্য হল ডান ও বাম পার্শ্ব। আর এ থেকে উদ্দেশ্য এত বাগান যে, যেদিকেই নজর যায় সেদিকেই সবুজ-শ্যামল বাগান আর বাগানই চোখে পড়ে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] এই আদেশ তাদের পয়গম্বরের দ্বারা করা হয়েছিল অথবা উদ্দেশ্য সেই সকল নিয়ামতের বর্ণনা, যা তাদেরকে প্রদান করা হয়েছিল।
[4] অর্থাৎ, সেই দাতা ও অনুগ্রহকারীর আনুগত্য কর এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাক।
[5] অর্থাৎ, বাগানসমূহের আধিক্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূলের কারণে উক্ত শহর উৎকৃষ্ট ছিল। বলা হয় যে, সুন্দর আবহাওয়ার কারণে সেই শহর মশা, মাছি ও অনুরূপ অন্যান্য কষ্টদায়ক জীবজন্তু থেকেও মুক্ত ছিল। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
[6] অর্থাৎ, যদি তোমরা প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা বর্ণনা করতে থাক, তবে তিনি তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। এর অর্থ এও হল যে, যদি মানুষ তওবা করতে থাকে, তাহলে পাপাচরণ ব্যাপক ধ্বংস ও অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না; বরং আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান