৩৩ সূরাঃ আল-আহযাব | Al-Ahzab | سورة الأحزاب - আয়াতঃ ৬৯
৩৩:৬৯ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِیۡنَ اٰذَوۡا مُوۡسٰی فَبَرَّاَهُ اللّٰهُ مِمَّا قَالُوۡا ؕ وَ كَانَ عِنۡدَ اللّٰهِ وَجِیۡهًا ﴿ؕ۶۹﴾
یایها الذین امنوا لا تكونوا كالذین اذوا موسی فبراه الله مما قالوا و كان عند الله وجیها ﴿۶۹﴾

হে ঈমানদারগণ, তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসাকে কষ্ট দিয়েছিল। অতঃপর তারা যা বলেছিল, তা থেকে আল্লাহ তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছেন। আর সে ছিল আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান। আল-বায়ান

হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা মূসাকে কষ্ট দিয়েছিল। অতঃপর তারা যা বলেছিল আল্লাহ তাত্থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন। সে ছিল আল্লাহর নিকট সম্মানিত। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! মূসাকে যারা ক্লেশ দিয়েছে তোমরা তাদের মত হয়োনা; তারা যা রটনা করেছিল আল্লাহ তা হতে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন; এবং আল্লাহর নিকট সে মর্যাদাবান। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, be not like those who abused Moses; then Allah cleared him of what they said. And he, in the sight of Allah, was distinguished. Sahih International

৬৯. হে ঈমানদারগণ! মূসাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তোমরা তাদের মত হয়ো না; অতঃপর তারা যা রটনা করেছিল আল্লাহ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন(১); আর তিনি ছিলেন আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান।(২)

(১) এ আয়াতে বিশেষভাবে মুসলিমদেরকে আল্লাহ্ ও রাসূলের বিরোধিতা থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা, এই বিরোধিতা তাদের কষ্টের কারণ। তাদেরকে মূসা আলাইহিস সালামের কওমের মত হতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা সবসময় মূসা আলাইহিস সালামকে সার্বিকভাবে কষ্ট দিত। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি হলো, মূসা আলাইহিস সালাম অত্যন্ত লজ্জাশীল হওয়ার কারণে তাঁর দেহ ঢেকে রাখতেন। তাঁর শরীর কেউ দেখত না।

তিনি পর্দার আড়ালে গোসল করতেন। তাঁর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের মধ্যে সকলের সামনে উলঙ্গ হয়ে গোসল করার ব্যাপক প্রচলন ছিল। মূসা আলাইহিস সালাম কারও সামনে গোসল করেন না দেখে কেউ কেউ বলাবলি করল- এর কারণ এই যে, তার দেহে নিশ্চয় কোন খুঁত আছে-হয় তিনি ধবল কুষ্ঠরোগী, না হয় একশিরা রোগী। নতুবা তিনি অন্য কোন ব্যাধিগ্রস্ত। আল্লাহ তা'আলা এ ধরনের খুঁত থেকে মূসা আলাইহিস সালাম-এর নির্দেষিতা প্রকাশ করার ইচ্ছা করলেন।

একদিন মূসা আলাইহিস সালাম নির্জনে গোসল করার জন্যে কাপড় খুলে একখণ্ড পাথরের উপর তা রেখে দিলেন। গোসল শেষে যখন হাত বাড়িয়ে কাপড় নিতে চাইলেন, তখন প্রস্তর খণ্ডটি (আল্লাহর আদেশে) নড়ে উঠল এবং তার কাপড়সহ দৌড়াতে লাগল। মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর লাঠি নিয়ে প্রস্তরের পেছনে পেছনে “আমার কাপড় আমার কাপড়” বলতে বলতে দৌড় দিলেন। কিন্তু প্ৰস্তরটি থামল না- যেতেই লাগল। অবশেষে প্ৰস্তুরটি বনী-ইসরাঈলের এক সমাবেশে পৌঁছে থেমে গেল।

তখন সেসব লোক মুসা আলাইহিস সালাম-কে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে নিল এবং তাঁর দেহ নিখুঁত ও সুস্থ দেখতে পেল। (এতে তাদের বর্ণিত কোন খুঁত বিদ্যমান ছিল না।) এভাবে আল্লাহ্ তা'আলা মুসা আলাইহিস সালাম-এর নির্দোষিতা সকলের সামনে প্রকাশ করে দিলেন। অতঃপর তিনি লাঠি দ্বারা প্রস্তর খণ্ডকে মারতে লাগলেন। আল্লাহর কসম, মূসা আলাইহিস সালাম এর আঘাতের কারণে পাথরের গায়ে তিন, চার অথবা পাঁচটি দাগ পড়ে গিয়েছিল। [বুখারী: ৩৪০৪]

(২) অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন ছিলেন। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) হে বিশ্বাসীগণ! মূসাকে যারা কষ্ট দিয়েছে, তোমরা তাদের মত হয়ো না; ওরা যা রটনা করেছিল আল্লাহ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেছেন।[1] আর আল্লাহর নিকট সে মর্যাদাবান।

[1] এর ব্যাখ্যা হাদীসে এইভাবে এসেছে যে, মূসা (আঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল নবী ছিলেন, সুতরাং তিনি নিজের শরীর কখনো মানুষের সামনে খুলতেন না; বরং ঢেকে রাখতেন। বানী ইস্রাঈলরা বলতে আরম্ভ করল যে, সম্ভবতঃ মূসা (আঃ) এর শরীরে ধবলের দাগ অথবা ঐ ধরনের কোন খুঁত আছে, যার ফলে তিনি সব সময় পোষাক পরে তা ঢেকে রাখেন। এক দিন মুসা (আঃ) নির্জনে কাপড় খুলে পাথরের উপর রেখে একাকী গোসল করতে লাগলেন, (আল্লাহর আদেশে) পাথর তাঁর সেই কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। আর মূসা (আঃ) তার পিছন পিছন দৌড়তে লাগলেন। পরিশেষে বানী ইসরাঈলের এক সমাবেশে পৌঁছে গেলেন। তারা মূসা (আঃ)-কে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে তাদের সব সন্দেহ দূর হয়ে গেল। মূসা (আঃ) একজন সুন্দর এবং সকল প্রকার দাগ ও ত্রুটিমুক্ত ছিলেন। এইভাবে আল্লাহ তাআলা মু’জিযা স্বরূপ পাথর দ্বারা তাঁকে সেই অপবাদ ও সন্দেহ থেকে নির্মল প্রমাণ করলেন, যা বানী ইস্রাঈলদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি আরোপ করা হচ্ছিল। (বুখারীঃ কিতাবুল আম্বিয়া)

মূসা (আঃ)-এর ঘটনা উল্লেখ করে মু’মিনগণকে বোঝানো হয়েছে যে, তোমরা আমার শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বানী ইস্রাঈলদের মত কষ্ট দিও না এবং তাঁর সম্পর্কে এমন কোন কথা বলো না, যা শুনে তাঁর মনে দুশ্চিন্তা ও কষ্ট হয়। যেমন এক সময় গনীমতের (যুদ্ধলব্ধ) মাল বন্টন করার সময় এক ব্যক্তি বলল যে, এ বন্টন ইনসাফের সাথে করা হয়নি। নবী (সাঃ) এই কথা শুনে এমন রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘মূসা (আঃ) এর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ হোক। তাঁকে এর থেকেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। (বুখারী ঐ, মুসলিম কিতাবুয যাকাত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান