২৭ সূরাঃ আন-নামাল | An-Naml | سورة النمل - আয়াতঃ ১৬
২৭:১৬ وَ وَرِثَ سُلَیۡمٰنُ دَاوٗدَ وَ قَالَ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ عُلِّمۡنَا مَنۡطِقَ الطَّیۡرِ وَ اُوۡتِیۡنَا مِنۡ كُلِّ شَیۡءٍ ؕ اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡفَضۡلُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۱۶﴾
و ورث سلیمن داوٗد و قال یایها الناس علمنا منطق الطیر و اوتینا من كل شیء ان هذا لهو الفضل المبین ﴿۱۶﴾

আর সুলাইমান দাঊদের ওয়ারিস হল এবং সে বলল, ‘হে মানুষ, আমাদেরকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাদেরকে সকল কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ’। আল-বায়ান

সুলাইমান দাঊদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল। সে বলেছিল- ‘হে মানুষেরা! আমাকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে আর আমাদেরকে সব কিছু দেয়া হয়েছে, এটা (আল্লাহর পক্ষ হতে) অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’ তাইসিরুল

সুলাইমান হয়েছিল দাউদের উত্তরাধিকারী এবং সে বলেছিলঃ হে লোক সকল! আমাকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু হতে প্রদান করা হয়েছে; এটা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। মুজিবুর রহমান

And Solomon inherited David. He said, "O people, we have been taught the language of birds, and we have been given from all things. Indeed, this is evident bounty." Sahih International

১৬. আর সুলাইমান হয়েছিলেন দাউদের উত্তরাধিকারী(১) এবং তিনি বলেছিলেন, হে মানুষ! আমাদেরকে(২) পাখিদের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেয়া হয়েছে(৩), এটা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।

(১) উত্তরাধিকার বলে এখানে জ্ঞান ও নবুওয়তের উত্তরাধিকার বোঝানো হয়েছে-আর্থিক উত্তরাধিকার নয়। [ইবন কাসীর] কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমরা নবীগোষ্ঠি আমরা কাউকে ওয়ারিশ করি না” [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৪৬৩, মুসনাদে হুমাইদীঃ ২২] অর্থাৎ নবীগণ উত্তরাধিকারী হন না এবং কেউ তাদের উত্তরাধিকার হয় না। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী; কিন্তু নবীগণ দীনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না বরং তারা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী করে থাকেন। সুতরাং যে কেউ সেটা গ্রহণ করতে পেরেছে সে তা পূর্ণরূপেই গ্ৰহণ করতে পেরেছে”। [আবু দাউদঃ ৩৬৪১, মুসনাদে আহমাদ ৫/১৯৬] অর্থাৎ আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী; কিন্তু নবীগণের মধ্যে জ্ঞান ও নবুওয়তের উত্তরাধিকার হয়ে থাকে-আর্থিক উত্তরাধিকার হয় না।

যুক্তির দিক দিয়েও এখানে আর্থিক উত্তরাধিকার বুঝানো যেতে পারে না। কারণ, দাউদ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় তার আরও সন্তান ছিল। আর্থিক উত্তরাধিকার বোঝানো হলে এই পুত্রদের সবাই উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় বিশেষভাবে সুলাইমান আলাইহিস সালামকে উত্তরাধিকারী বলার কোন অর্থ নেই। এ থেকে বুঝা গেল যে, এখানে উত্তরাধিকার বলতে নবুওয়তের উত্তরাধিকার বুঝানো হয়েছে। [বাগভী] এর সাথে আল্লাহ্ তা'আলা দাউদ আলাইহিস সালামের রাজত্বও সুলাইমান আলাইহিস সালামকে দান করেন এবং এতে অতিরিক্ত সংযোজন হিসেবে তার রাজত্ব জিন, জন্তু-জানোয়ার এবং বিহংগকুলের উপরও সম্প্রসারিত করে দেন। বায়ুকে তার নির্দেশাধীন করে দেন।

(২) লক্ষণীয় যে, এখানে সুলাইমান আলাইহিস সালাম ‘আমাদেরকে’ বলে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। অথচ তিনি একজন মাত্র। অধিকাংশ আলেমদের মতে শুধু তাকেই আল্লাহ তা'আলা পশু-পাখিদের ভাষার জ্ঞান দিয়েছিলেন। সে জন্য আলেমগণ বলেন, সুলাইমান আলাইহিস সালাম একা হওয়া সত্বেও নিজের জন্য বহুবচনের পদ রাজকীয় বাকপদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবহার করেছেন, যাতে প্রজাদের মধ্যে তার প্রতি সম্মান ও ভয় সৃষ্টি হয় এবং তারা আল্লাহর আনুগত্যে ও সুলাইমান আলাইহিস সালামের আনুগত্যে শৈথিল্যও প্রদর্শন না করে। এমনিভাবে গভর্ণর, শাসনকর্তা ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ তাদের অধিনস্থদের উপস্থিতিতে নিজের জন্য বহুবচনের পদ ব্যবহার করলে তাতে দোষ নেই, যদি তা শাসনতান্ত্রিক এবং নেয়ামত প্রকাশের উদ্দেশ্যে হয়। অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্যে না হয়। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

আমরা চিন্তা করলে আরো বুঝতে পারব যে, মহান আল্লাহ তাঁর নিজ সত্তাকে কুরআনের অধিকাংশ স্থানে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করে থাকেন, এটাও তাঁর নিজের সম্মান, প্রতিপত্তি প্রকাশের জন্য। যাতে বান্দাগণ তাঁর মত মহান সত্তার ব্যাপারে সাবধান হয়। তাছাড়া একমাত্ৰ মহান আল্লাহর জন্যই বহু-বচনের শব্দ অহংকার ও গর্ব সহকারে বলার অধিকার রয়েছে, আর কারও সেটা নেই। [দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দীনাল মাসীহ: ৩/৪৪৮; ইবন ফারিস, মুজামু মাকায়ীসুল লুগাহ: ৩৫৩; ইবন কুতাইবাহ, শারহু মুশকিলিল কুরআন: ২৯৩]

(৩) সবকিছু বলতে এখানে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, একজন নবী ও বাদশাহর জন্য যা যা দরকার তার সবই আমাকে দেয়া হয়েছে। [সা'দী; মুয়াস্‌সার] ‘আল্লাহর দেয়া সবকিছু আমার কাছে আছে’ একথাটির অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া ধন-দৌলত ও সাজ-সরঞ্জামের আধিক্য। সুলাইমান অহংকারে স্ফীত হয়ে একথা বলেননি। বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দান ও দাক্ষিণ্যের শোকর আদায় করা। [দেখুন: ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) সুলাইমান ছিল দাঊদের উত্তরাধিকারী[1] এবং সে বলেছিল, ‘হে লোক সকল! আমাকে পাখির বুলি শিখানো হয়েছে[2] এবং আমাকে সর্বপ্রকার বস্তু প্রদান করা হয়েছে।[3] এ অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’

[1] এ থেকে নবুঅত ও রাজ্যের উত্তরাধিকার বুঝানো হয়েছে। যার উত্তরাধিকারী শুধুমাত্র সুলাইমানের ভাগ্যেই জোটে। নচেৎ দাঊদ (আঃ)-এর আরো সন্তান ছিল; যারা এর থেকে বঞ্চিত হয়। এমনিতে নবীগণের উত্তরাধিকারের সম্পদ জ্ঞানই হয়ে থাকে। তাঁরা যেসব ধন-সম্পদ ছেড়ে যান তা সাদকাহ বলে গণ্য হয়। যেমন, নবী (সাঃ) বলেছেন। (বুখারীঃ ফারায়েয অধ্যায়, মুসলিম জিহাদ অধ্যায়)

[2] সমস্ত জীব-জন্তুর ভাষাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানে শুধু পাখীদের কথা বিশেষ করে এই জন্য বর্ণনা করা হয়েছে, যেহেতু তাঁকে ছায়া করার জন্য পাখীরা সব সময় তাঁর সাথে থাকত। আবার কেউ কেউ বলেন, কেবল পাখীর ভাষাই তাঁকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। আর পিপীলিকাও পাখীর মধ্যে পরিগণিত। (ফাতহুল কাদীর)

[3] যে সবের তাঁর প্রয়োজন ছিল যেমন, জ্ঞান, নবুঅত, প্রজ্ঞা, ধন-সম্পদ এবং মানব-দানব ও পশু-পক্ষীর আনুগত্য ইত্যাদি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান