২৩ সূরাঃ আল-মুমিনুন | Al-Mu'minun | سورة المؤمنون - আয়াতঃ ১১
২৩:১১ الَّذِیۡنَ یَرِثُوۡنَ الۡفِرۡدَوۡسَ ؕ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۱﴾
الذین یرثون الفردوس هم فیها خلدون ﴿۱۱﴾

যারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আল-বায়ান

তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাইসিরুল

অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা বসবাস করবে চিরকাল। মুজিবুর রহমান

Who will inherit al-Firdaus. They will abide therein eternally. Sahih International

১১. যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের(১) যাতে তারা হবে স্থায়ী।(২)

(১) ফিরদৌস জান্নাতের সবচেয়ে বেশী পরিচিত প্রতিশব্দ। মানব জাতির বেশীরভাগ ভাষায়ই এ শব্দটি পাওয়া যায়। মুজাহিদ ও সায়ীদ ইবন জুবাইর বলেন, ফিরদৌস শব্দটি রুমী ভাষায় বাগানকে বলা হয়। কোন কোন মনীষী বলেন, বাগানকে তখনই ফেরদৌস বলা হবে, যখন তাতে আঙুর থাকবে। [ইবন কাসীর] কুরআনের দুটি স্থানে এ শব্দটি এসেছে। বলা হয়েছেঃ “তাদের আপ্যায়নের জন্য ফিরদৌসের বাগানগুলো আছে।” [সূরা আল কাহফঃ ১০৭] আর এ সূরায় বলা হয়েছেঃ “যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী।”[১১]

অনুরূপভাবে ফিরদৌসের পরিচয় বিভিন্ন হাদীসেও বিস্তারিত এসেছে। এক হাদীসে এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, জান্নাতের রয়েছে একশটি স্তর। যা মহান আল্লাহ তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য তৈরী করেছেন। প্রতি দু’ স্তরের মাঝের ব্যবধান হলো আসমান ও যমীনের মাঝের ব্যবধানের সমান। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহ্‌র কাছে জান্নাত চাইবে তখন তার নিকট ফিরদাউস চাইবে; কেননা সেটি জান্নাতের মধ্যমনি এবং সর্বোচ্চ জন্নাত। আর তার উপরেই রয়েছে দয়াময় আল্লাহর আরশ। সেখান থেকেই জান্নাতের নালাসমূহ প্রবাহিত৷ [বুখারীঃ ২৬৩৭]

(২) উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত লোকদেরকে এই আয়াতে জান্নাতুল-ফেরদাউসের অধিকারী বা ওয়ারিশ বলা হয়েছে। ওয়ারিশ বলার মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি যেমন ওয়ারিশদের মালিকানায় আসা অমোঘ ও অনিবাৰ্য, তেমনি এসব গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিদের জান্নাত প্রবেশও সুনিশ্চিত। তাছাড়া (قَدْ أَفْلَحَ) বাক্যের পর সফলকাম ব্যক্তিদের গুণাবলী পুরোপুরি উল্লেখ করার পর এই বাক্যে আরও ইঙ্গিত আছে যে, পূর্ণাঙ্গ সাফল্য ও প্রকৃত সাফল্যের স্থান জান্নাতই। মুজাহিদ বলেন, প্রত্যেক বান্দার জন্য দু'টি স্থান রয়েছে। একটি স্থান জান্নাতে, অপর স্থানটি জাহান্নামে। মুমিনের ঘরটি জান্নাতে নির্মিত হয়, আর জাহান্নামে তার ঘরটি ভেঙে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফেরের জন্য জান্নাতে যে ঘরটি সেটা ভেঙে দেয়া হয়, আর তার জন্য জাহান্নামের ঘরটি তৈরী করা হয়। [ইবন কাসীর]

কোন কোন মনীষী বলেন, মুমিনরা জন্নাতের কাফেরদের স্থানসমূহেরও মালিক হবে। তারা আনুগত্যের মাধ্যমে এ অতিরিক্ত পুরস্কার লাভ করবে। বরং হাদীসে এটাও এসেছে যে, “কিয়ামতের দিন কিছু মুসলিম পাহাড় পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আসবে, তারপর আল্লাহ তাদের সে গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং সেগুলোকে ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর রাখবেন। [মুসলিম: ২৭৬৭] এ আয়াতটির মত অন্য আয়াত হচ্ছে, “এ সে জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে” [সূরা মারইয়াম: ৬৩] “আর এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কাজের ফলস্বরূপ।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) উত্তরাধিকারী হবে ফিরদাউসের; যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। [1]

[1] উক্ত গুণাবলীর অধিকারী মু’মিনই কেবলমাত্র সফলতা অর্জন করতে পারবে, যে জান্নাতের উত্তরাধিকারী ও হকদার বিবেচিত হবে। কেবল সাধারণ জান্নাতই নয়; বরং জান্নাতুল ফিরদাউস যা আটটি জান্নাতের সর্বোচ্চ জান্নাত; যেখান হতে জান্নাতের নদীমালা প্রবাহিত হয়েছে।

(সহীহ বুখারী জিহাদ অধ্যায়, তাওহীদ অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান