আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আল-বায়ান
যারা অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে। তাইসিরুল
যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে – মুজিবুর রহমান
And they who turn away from ill speech Sahih International
৩. আর যারা আসার কর্মকাণ্ড থেকে থাকে বিমুখ।(১)
(১) পূর্ণ মুমিনের এটি দ্বিতীয় গুণঃ অনর্থক বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। لغو এর অর্থ অসার ও অনর্থক কথা বা কাজ। এর মানে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজ যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন ও যাতে কোন ফল লাভও হয় না। শির্কও এর অন্তর্ভুক্ত, গোনাহের কাজও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে [ইবন কাসীর] অনরূপভাবে গান-বাজনাও এর আওতায় পড়ে [কুরতুবী]
মোটকথা: যেসব কথায় বা কাজে কোন লাভ হয় না, যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, যেগুলোর আসলে কোন প্রয়োজন নেই, যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয় সেগুলোর সবই ‘বাজে’ কাজের অন্তর্ভুক্ত। যাতে কোন দ্বীনী উপকার নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান। এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। রাসূলুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তার ইসলাম সৌন্দর্য মণ্ডিত হতে পারে। [তিরমিযীঃ ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনে মাজাহঃ ৩৯৭৬]
এ কারণেই আয়াতে একে কামেল মুমিনদের বিশেষ গুণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আয়াতের পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে এই যে, তারা বাজে কথায় কান দেয় না এবং বাজে কাজের দিকে দৃষ্টি ফেরায় না। সে ব্যাপারে কোন প্রকার কৌতুহল প্রকাশ করে না। যেখানে এ ধরনের কথাবার্তা হতে থাকে অথবা এ ধরনের কাজ চলতে থাকে। সেখানে যাওয়া থেকে দূরে থাকে। তাতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত হয় আর যদি কোথাও তার সাথে মুখোমুখি হয়ে যায় তাহলে তাকে উপেক্ষা করে, এড়িয়ে চলে যায় অথবা অন্ততপক্ষে তা থেকে সম্পর্কহীন হয়ে যায় ৷ একথাটিকেই অন্য জায়গায় এভাবে বলা হয়েছেঃ “যখন এমন কোন জায়গা দিয়ে তারা চলে যেখানে বাজে কথা হতে থাকে অথবা বাজে কাজের মহড়া চলে তখন তারা ভদ্রভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে চলে যায়।” [সূরা আল ফুরকানঃ ৭২]
এ ছাড়াও মুমিন হয় একজন শান্ত-সমাহিত ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির অধিকারী এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন স্বভাব ও সুস্থ রুচিসম্পন্ন মানুষ। বেহুদাপনা তার মেজাজের সাথে কোন রকমেই খাপ খায় না। সে ফলদায়ক কথা বলতে পারে, কিন্তু আজেবাজে গল্প-গুজব তার স্বভাব বিরুদ্ধ। সে ব্যাঙ্গ, কৌতুক ও হালকা পরিহাস পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু উচ্ছল ঠাট্টা-তামাসায় মেতে উঠতে পারে না, বাজে ঠাট্টা-মস্করা ও ভাড়ামি বরদাশত করতে পারে না এবং আনন্দ-ফুর্তি ও ভাড়ামির কথাবার্তাকে নিজের পেশায় পরিণত করতে পারে না।
তার জন্য তো এমন ধরনের সমাজ হয় একটি স্থায়ী নির্যাতন কক্ষ বিশেষ, যেখানে কারো কান কখনো গালি-গালাজ, পরনিন্দা, পরিচর্চা, অপবাদ, মিথ্যা কথা, কুরুচিপুর্ণ গান-বাজনা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকে না। আল্লাহ তাকে যে জান্নাতের আশা দিয়ে থাকেন তার একটি অন্যতম নিয়ামত তিনি এটাই বৰ্ণনা করেছেন যে, “সেখানে তুমি কোন বাজে কথা শুনবে না।” [সূরা মারইয়ামঃ ৬২, সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ২৫, সূরা আন-নাবাঃ ৩৫, অনুরূপ সূরা আত-তূরের ২৩ নং আয়াত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে। [1]
[1] لَغو (অসার ক্রিয়া-কলাপ) সেই প্রত্যেক কাজ ও কথা, যাতে কোন উপকার নেই অথবা যাতে দ্বীন বা দুনিয়ার কোন প্রকার ক্ষতি আছে। সে সব থেকে বিরত থাকার অর্থঃ সে সবের প্রতি ভ্রূক্ষেপ পর্যন্তও না করা; সে সব বাস্তবে রূপ দেওয়া তো দূরের কথা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান