আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইবরাহীমকে। নিশ্চয় সে ছিল পরম সত্যবাদী, নবী। আল-বায়ান
এ কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা স্মরণ কর, সে ছিল একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ, একজন নবী। তাইসিরুল
বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যবাদী ও নাবী। মুজিবুর রহমান
And mention in the Book [the story of] Abraham. Indeed, he was a man of truth and a prophet. Sahih International
৪১. আর স্মরণ করুন। এ কিতাবে ইবরাহীমকে(১); তিনি তো ছিলেন এক সত্যনিষ্ঠ(২), নবী।
(১) এখান থেকে মক্কাবাসীদেরকে সম্বোধন করে কথা বলা হচ্ছে। তারা তাদেরকে যুবক পুত্র, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদেরকে ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অপরাধে গৃহত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল যেমন ইবরাহীমকে তার বাপ-ভাইয়েরা দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। কুরাইশ বংশের লোকেরা ইবরাহীমকে নিজেদের নেতা বলে মানতো এবং তাঁর আওলাদ হবার কারণে সারা আরবে গর্ব করে বেড়াতো, একারণে অন্য নবীদের কথা বাদ দিয়ে বিশেষ করে ইবরাহীমের কথা বলার জন্য এখানে নির্বাচিত করা হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
(২) صديق “সিদ্দীক” শব্দটি কুরআনের একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ সত্যবাদী বা সত্যনিষ্ঠ। [ফাতহুল কাদীর] শব্দটির সংজ্ঞা সম্পর্কে আলেমদের উক্তি বিভিন্নরূপ। কেউ বলেনঃ যে ব্যক্তি সারা জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলেননি, তিনি সিদ্দীক। কেউ বলেনঃ যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং কথা ও কর্মে সত্যবাদী, অর্থাৎ অন্তরে যেরূপ বিশ্বাস পোষণ করে, মুখে ঠিক তদ্রুপ প্রকাশ করে এবং তার প্রত্যেক কর্ম ও উঠা বসা এই বিশ্বাসেরই প্রতীক হয়, সে সিদ্দীক। [কুরতুবী, সূরা আন-নিসা: ৬৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ]
সিদ্দীকের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। নবী-রাসূলগণ সবাই সিদ্দীক। কিন্তু সমস্ত সিদ্দীকই নবী ও রাসূল হবেন এমনটি জরুরী নয়, বরং নবী নয়- এমন ব্যক্তি যদি নবী ও রাসূলের অনুসরণ করে সিদ্দীকের স্তর অর্জন করতে পারেন, তবে তিনিও সিদ্দীক বলে অভিহিত হবেন। মারইয়ামকে আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে স্বয়ং সিদ্দীকাহ নামে অভিহিত করেছেন। তিনি নবী নন। কোন নারী নবী হতে পারেন না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) বর্ণনা কর এই কিতাবে (উল্লিখিত) ইব্রাহীমের কথা; নিশ্চয় সে ছিল একজন পরম সত্যবাদী নবী। [1]
[1] صِدِّيق শব্দটি صِدق ধাতুর অতিশয়োক্তিমূলক রূপ। সিদ্দীকের অর্থঃ অত্যন্ত বা পরম সত্যবাদী। অর্থাৎ, যাঁর কথায় ও কাজে অত্যন্ত মিল থাকে এবং সত্যবাদিতাই তাঁর প্রতীক হয়। সিদ্দীক বা চরম সত্যবাদিতার এই মর্যাদা নবুঅতের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ের। প্রত্যেক নবী ও রসূল নিজ নিজ যুগের সবচেয়ে বেশী সত্যবাদী ও সত্যের প্রতীক ছিলেন। সেই জন্য তিনি নবী হওয়ার সাথে সাথে সিদ্দীকও। তবে প্রত্যেক সিদ্দীক নবী নন। কুরআন কারীমে মারয়্যামকে সিদ্দীকাহ বলা হয়েছে, যার অর্থ হল, তিনি আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা (সতীত্ব) ও সত্যবাদিতার উচ্চাসনে আসীন ছিলেন; যদিও তিনি নবী ছিলেন না। মুসলিমদের মধ্যেও সিদ্দীক আছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ); যাঁকে নবীদের পর উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে মান্য করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান