১৯ সূরাঃ মারইয়াম | Maryam | سورة مريم - আয়াতঃ ৩৭
১৯:৩৭ فَاخۡتَلَفَ الۡاَحۡزَابُ مِنۡۢ بَیۡنِهِمۡ ۚ فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ مَّشۡهَدِ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۳۷﴾
فاختلف الاحزاب من بینهم فویل للذین كفروا من مشهد یوم عظیم ﴿۳۷﴾

এরপর তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন দল মতভেদ করল। কাজেই মহাদিবস প্রত্যক্ষকালে কাফিরদের ধ্বংস অনিবার্য। আল-বায়ান

অতঃপর দলগুলো তাদের মধ্যে মতভেদ করল। কাজেই সেই ভয়াবহ দিনের উপস্থিতকালে কাফিরদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। তাইসিরুল

অতঃপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল; সুতরাং এই কাফিরদের মহা দিনের আগমনে ভীষণ দুর্দশা রয়েছে। মুজিবুর রহমান

Then the factions differed [concerning Jesus] from among them, so woe to those who disbelieved - from the scene of a tremendous Day. Sahih International

৩৭. অতঃপর দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল(১), কাজেই দুর্ভোগ কাফেরদের জন্য মহাদিবস প্ৰত্যক্ষকালে।(২)

(১) অর্থাৎ নাসারাগণ ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত হয়ে গেল। তাদের মধ্যে কেউ বলল, তিনি জারজ সন্তান। তাদের উপর আল্লাহর লা'নত হোক। তারা বলল যে, তার বাণীসমূহ জাদু। অপর দল বলল, তিনি আল্লাহর পুত্র। আরেকদল বলল, তিনি তিনজনের একজন। অন্যরা বলল, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। এটাই হচ্ছে সত্য ও সঠিক কথা, আল্লাহ যেটার প্রতি মুমিনদেরকে হেদায়াত করেছেন। [ইবন কাসীর]

(২) এ হচ্ছে যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য সুস্পষ্ট ভীতি-প্রদর্শন। তিনি ইচ্ছে করলে দুনিয়াতেই তাৎক্ষনিক তাদেরকে পাকড়াও করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে কিছু সময় অবকাশ দিয়ে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের সুযোগ দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিতে চান। কিন্তু তারা তাদের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে তিনি অবশ্যই তাদেরকে পাকড়াও করবেন। [ইবন কাসীর]

হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ যালেমকে ছাড় দিতেই থাকেন তারপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার আর পালাবার কোন পথ অবশিষ্ট থাকে না।” [বুখারী: ৪৬৮৬, মুসলিম: ২৫৮৩] আর ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে যে, মহান আল্লাহর জন্য সন্তান ও পরিবার সাব্যস্ত করে? হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কষ্টদায়ক কিছু শুনার পরে আল্লাহর চেয়ে বেশী ধৈর্যশীল আর কেউ নেই, তারা তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করছে অথচ তিনি তাদেরকে জীবিকা ও নিরাপত্তা দিয়েই যাচ্ছেন।” [বুখারী: ৬০৯৯, মুসলিম: ২৮০৪]

পক্ষান্তরে যারা এর বিপরীত কাজ করবে তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কেউ যদি এ সাক্ষ্য দেয় যে, একমাত্র আল্লাহ যার কোন শরীক নেই তিনি ব্যতীত হক কোন মা’বুদ নেই, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, ঈসাও আল্লাহর বান্দা, রাসূল ও এমন এক বাণী যা তিনি মারইয়ামের কাছে ঢেলে দিয়েছিলেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি আত্মা। আর এও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত বাস্তব, জাহান্নাম বাস্তব। আল্লাহ তাকে তার আমল কম-বেশ যা-ই থাকুক না কেন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [বুখারী: ৩৪৩৫, মুসলিম: ২৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) অতঃপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল।[1] সুতরাং এক মহান দিবসের আগমনে অবিশ্বাসীদের ভীষণ দুর্দশা রয়েছে। [2]

[1] এখানে الأَحزَاب (দলগুলি) বলতে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের দলকে বুঝানো হয়েছে; যারা ঈসার ব্যাপারে মতভেদ করেছিল। ইয়াহুদীরা বলেছিল, তিনি জাদুকর ও জারজ সন্তান; অর্থাৎ ইউসুফ (যোসেফ) নাজ্জারের অবৈধ সন্তান। খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রোটেষ্ট্যান্টদের বক্তব্য ঈসা আল্লাহর পুত্র। ক্যাথলিকরা বলে, তিনি তিন আল্লাহর তৃতীয়জন। অর্থোডক্সরা বলে তিনি স্বয়ং আল্লাহ। এভাবে ইয়াহুদীরা তাঁকে হীন জ্ঞান করে, আর খ্রিষ্টানরা তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে।

(আইসারুত তাফাসীর, ফাতহুল কাদীর)

[2] ঐ সমস্ত কাফেরদের জন্য ভীষণ দুর্দশা রয়েছে, যারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে মতভেদ এবং অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। কিয়ামতের দিন যখন উপস্থিত হবে, তখন তারা ধ্বংস হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান