১৭:৫৯ وَ مَا مَنَعَنَاۤ اَنۡ نُّرۡسِلَ بِالۡاٰیٰتِ اِلَّاۤ اَنۡ كَذَّبَ بِهَا الۡاَوَّلُوۡنَ ؕ وَ اٰتَیۡنَا ثَمُوۡدَ النَّاقَۃَ مُبۡصِرَۃً فَظَلَمُوۡا بِهَا ؕ وَ مَا نُرۡسِلُ بِالۡاٰیٰتِ اِلَّا تَخۡوِیۡفًا ﴿۵۹﴾
و ما منعنا ان نرسل بالایت الا ان كذب بها الاولون و اتینا ثمود الناقۃ مبصرۃ فظلموا بها و ما نرسل بالایت الا تخویفا ﴿۵۹﴾

আর পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করাই আমাকে তা (নিদর্শনাবলী) প্রেরণ করা হতে বিরত রেখেছে। আর আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম, অতঃপর তারা তার উপর যুলম করেছিল। আমি কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নিদর্শনসমূহ পাঠাই। আল-বায়ান

আমি নিদর্শন প্রেরণ করা হতে এজন্য বিরত থাকি যে, পূর্বের লোকেরা তা মিথ্যা মনে ক’রে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমি সামূদ জাতির নিকট উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম এক প্রত্যক্ষ নিদর্শন হিসেবে কিন্তু তারা তার প্রতি যুলম করল; ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই কেবল আমি নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি। তাইসিরুল

পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করার কারণেই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রাখে; আমি স্পষ্ট নিদর্শন স্বরূপ সামূদের নিকট উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তারা ওর প্রতি যুলম করেছিল; আমি ভয় প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি। মুজিবুর রহমান

And nothing has prevented Us from sending signs except that the former peoples denied them. And We gave Thamud the she-camel as a visible sign, but they wronged her. And We send not the signs except as a warning. Sahih International

৫৯. আর আমাদেরকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে শুধু বিরত রেখেছে যে, তাদের পূর্ববর্তীগণ তাতে মিথ্যারোপ করেছিল। আর আমরা শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম, অতঃপর তারা সেটার প্রতি জুলুম করেছিল। আমরা তো শুধু ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।(১)

১. এখানে বক্তব্য হচ্ছে এই যে, এ ধরনের মু'জিযা দেখার পর যখন লোকেরা একে মিথ্যা বলতে থাকে তখন তাদের উপর আযাব নাযিল হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং তখন এ জাতিকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। মানব জাতির অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, বিভিন্ন জাতি সুস্পষ্ট মু'জিযা দেখে নেবার পরও সেগুলোকে মিথ্যা বলেছে, ফলে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখন এটা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত যে, তিনি এমন ধরনের কোন মু'জিযা আর পাঠাচ্ছেন না। এর মানে হচ্ছে, তিনি তোমাদের বুঝবার ও সংশোধিত হবার অবকাশ দিচ্ছেন। কিন্তু তোমরা এমনি নির্বোধ যে, মু'জিযার দাবী জানিয়ে সামুদ জাতির পরিণাম ভোগ করতে চাচ্ছি। সামূদ জাতি সুস্পষ্ট নিদর্শন চেয়েছিল। তারপর যখন তাদের কাছে তা আসল এবং তারা কুফরী করল তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার নিয়মানুসারে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে জানা থাকলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ 'মক্কাবাসীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ দাবী করল যে, আপনি আমাদের জন্য সাফা পাহাড়কে স্বৰ্ণে পরিণত করে দিন। আমাদের জন্য মক্কার পাহাড়গুলো স্থানান্তরিত করে আমাদের মধ্যে প্রশস্ততার ব্যবস্থা করুন। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “আপনি যদি চান তো আমি তারা যা চায় তা তাদেরকে দিব কিন্তু তারপর যদি তারা কুফরী করে তবে তাদের পূর্ববর্তীগণ যেভাবে ধ্বংস হয়েছে। সেভাবে তাদেরকেও ধ্বংস করে দেব।

আর যদি আপনি চান তো আমি অপেক্ষা করব হয়ত বা তাদের বংশধরদের কেউ ঈমান আনবে।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “বরং আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করব।” তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/২৫৮, দ্বিয়া আল-মাকদেসী, আল-মুখতারাহঃ ১০/৭৮-৮০] সুতরাং কোন ম্যাজিক বা দর্শনীয় খেলা দেখানোর উদ্দেশ্যে কখনো মু'জিযা দেখানো হয় না। সব সময় মু'জিযা এই উদ্দেশ্যে দেখানো হয়েছে যে, লোকেরা তা দেখে সাবধান হয়ে যাবে, তারা বুঝতে পারবে নবীর পেছনে আছে এক সর্বময় শক্তিশালী সত্তার অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর নাফরানীর পরিণাম কি হতে পারে তাও তারা জানতে পারবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) পূর্ববর্তিগণ কর্তৃক নিদর্শন মিথ্যাজ্ঞান করাই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রাখে।[1] আর আমি স্পষ্ট নিদর্শনস্বরূপ সামূদকে উটনী দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা তার প্রতি যুলুম করেছিল।[2] আসলে আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি।

[1] এই আয়াত তখন অবতীর্ণ হয়, যখন মক্কার কাফেররা দাবী করল যে, সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড় বানিয়ে দেওয়া হোক অথবা মক্কার পাহাড়গুলোকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক যাতে সেখানে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। এরই উত্তরে মহান আল্লাহ জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে বার্তা পাঠালেন যে, আমি তাদের সমস্ত দাবী পূরণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু এর পরও যদি তারা ঈমান না আনে, তবে তাদের ধ্বংস সুনিশ্চিত। এর পর তাদেরকে আর অবকাশ দেওয়া হবে না। নবী করীম (সাঃ) এ কথা পছন্দ করলেন যে, তাদের দাবীগুলো পূরণ না করা হোক। যাতে তারা নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হওয়া থেকে বেঁচে যায়। (আহমাদ ১/২৫৮) এই আয়াতেও আল্লাহ তাআলা এই বিষয়টাকেই বর্ণনা করে বলেন যে, তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করা আমার জন্য কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু আমি তা করা থেকে এই জন্য বিরত থাকি যে, পূর্বের জাতিরাও তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিদর্শনসমূহ দাবী করেছিল যা তাদেরকে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা মিথ্যা ভেবে ঈমান আনেনি। যার ফলস্বরূপ তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

[2] সামুদ সম্প্রদায়কে দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, তাদের চাহিদা মোতাবেক শক্ত পাথর থেকে উটনী বের করে দেখানো হয়েছিল, কিন্তু এই অত্যাচারীরা ঈমান আনার পরিবর্তে সেই উটনীকে হত্যা করে দেয়। যার কারণে তিনদিন পর তাদের উপর সর্বনাশী আযাব আসে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান