১৭:২৯ وَ لَا تَجۡعَلۡ یَدَكَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبۡسُطۡهَا كُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا ﴿۲۹﴾
و لا تجعل یدك مغلولۃ الی عنقك و لا تبسطها كل البسط فتقعد ملوما محسورا ﴿۲۹﴾

আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না*, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। আল-বায়ান

তোমার হাতকে তোমার গলার সাথে বেঁধে দিও না, আর তা একেবারে প্রসারিত করেও দিওনা, তা করলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। তাইসিরুল

তুমি বদ্ধমুষ্টি হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়োনা; তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হবে। মুজিবুর রহমান

And do not make your hand [as] chained to your neck or extend it completely and [thereby] become blamed and insolvent. Sahih International

* আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য- একেবারে কৃপণও হয়ো না, আবার একেবারে ধন-সম্পদ উজাড় করেও দিও না।

২৯. আর তুমি তোমার হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণরূপে মেলেও দিও না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও আফসোসকৃত হয়ে বসে পড়বে। (১)।

১. “হাত বাঁধা” কৃপণতা অর্থেব্যবহৃত হয়। আর “হাত খোলা ছেড়ে দেয়া”র মানে হচ্ছে, বাজে খরচ করা। [ইবন কাসীর] আয়াতে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তার মধ্যস্থতায় সমগ্র উম্মতকে সম্বোধন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এমন মিতাচার শিক্ষা দেয়া, যা অপরের সাহায্যে প্রতিবন্ধকও না হয় এবং নিজের জন্যেও বিপদ ডেকে না আনে। যখনই তুমি তোমার সামর্থ্যের বাইরে হাত প্রশস্ত করবে, তখনই তুমি খরচ করার কিছু না পেয়ে বসে পড়বে। তখন তুমি ‘হাসীর’ হবে। হাসীর বলা হয় সে বাহনকে যে দুর্বল ও অপারগতার কারণে চলতে অপারগ হয়ে গেছে। [ইবন কাসীর] হাসীর এর আরেক অর্থ তিরস্কৃত হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]

মোটকথা: কৃপণতা যেমন খারাপ গুণ, অপচয়ও তেমনি খারাপ গুণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কৃপণ ও খরচকারীর উদাহরণ হচ্ছে সে দু'জন লোকের মত। যাদের উপর লোহার দুটি বর্ম রয়েছে। যা তার দু’স্তন থেকে কণ্ঠাস্থি পর্যন্ত ব্যাপ্ত। খরচকারী যখনই খরচ করে তখনই তা প্রশস্ত হতে থাকে। এমনকি তার পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত প্ৰলম্বিত হয় এবং তার পদচিহ্ন মিটিয়ে দেয়। আর কৃপণ সে যখনই কোন খরচ করতে চায় তখনি তা সে বর্মের এক কড়া আরেক কড়ার সাথে লেগে যায়, সে যতই সেটাকে প্রশস্ত করতে চায় তা আর প্রশস্ত হয় না।” [বুখারী: ২৯১৭]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা দু'জন ফেরেশতা নাযিল হয়। তাদের একজন বলতে থাকে, আল্লাহ্! আপনি খরচকারীকে বাকী থাকার মত সম্পদ দান করুন, অপরজন বলে, আল্লাহ্! আপনি কৃপনাকে নিঃশেষ করে দিন।' [বুখারী: ১৪৪২: মুসলিম: ১০১০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) তুমি বদ্ধমুষ্টি হয়ো না এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না; হলে তুমি তিরস্কৃত ও অনুতপ্ত (নিঃস্ব) হয়ে পড়বে।[1]

[1] পূর্বের আয়াতে ওজর পেশ করার আদবের কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতে ব্যয় করার আদব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আর তা হল, মানুষ এমন কৃপণও হবে না যে, নিজের ও পরিবারবর্গের প্রয়োজনেও ব্যয় করবে না। আর এমন মুক্তহস্তও হবে না যে, নিজ শক্তি ও সামর্থ্যের দিকে লক্ষ্য না করে বেহিসাব ব্যয় করে অপব্যয় ও নিঃস্বতার শিকার হবে। কৃপণতার ফলে মানুষ তিরস্কৃত ও নিন্দিত গণ্য হবে এবং অপব্যয়ের ফলে অবসাদগ্রস্ত ও অনুতপ্ত হবে। محسور বলা হয় এমন পশুকে যে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। অপব্যয়কারীও পরিশেষে হাত শূন্য করে বসে যায়। ‘বদ্ধমুষ্টি হয়ো না’ বা ‘নিজ হাতকে গর্দানের সাথে বেঁধে রেখো না’ অর্থঃ ব্যয়কুণ্ঠ কৃপণ হয়ো না। আর ‘একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না’ অর্থঃ অপব্যয় করো না। مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا হল لَفُّ نَشْرٍ مُرَتَّبٌ অর্থাৎ, তিরস্কার হল কৃপণতার এবং অনুতাপ হল অপব্যয়ের কুফল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান