তুমি সেখানে কখনো (সালাত কায়েম করতে) দাঁড়িও না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। আল-বায়ান
তুমি ওর ভিতরে কক্ষনো দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মাসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা লাভকারীদের ভালবাসেন। তাইসিরুল
(হে মুহাম্মাদ!) তুমি কখনও ওতে (সালাতের জন্য) দাঁড়াবেনা; অবশ্য যে মাসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে তা এর উপযোগী যে, তুমি তাতে (সালাতের জন্য) দাঁড়াবে; ওতে এমন সব লোক রয়েছে যারা উত্তম রূপে পবিত্র হওয়াকে পছন্দ করে, আর আল্লাহ উত্তম রূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদেরকে পছন্দ করেন। মুজিবুর রহমান
Do not stand [for prayer] within it - ever. A mosque founded on righteousness from the first day is more worthy for you to stand in. Within it are men who love to purify themselves; and Allah loves those who purify themselves. Sahih International
১০৮. আপনি তাতে কখনো সালাতের জন্য দাঁড়াবেন না(১); যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার উপর(২), তাই আপনার সালাতের জন্য দাঁড়ানোর বেশী হকদার। সেখানে এমন লোক আছে যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে, আর পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন।(৩)
(১) এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে মসজিদে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে দাঁড়ানো থেকে নিষেধ করার অর্থ, আপনি সে মসজিদে কখনো সালাত আদায় করবেন না। [ইবন কাসীর]
(২) প্রশংসিত সে মসজিদ কোনটি, তা নির্ণয়ে দুটি মত রয়েছে, কোন কোন মুফাসসির আয়াতের বর্ণনাধারা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তা হলো মসজিদে কুবা। [ইবন কাসীর; সা’দী] যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সালাত আদায় করতে আসতেন। [মুসলিম: ১৩৯৯] যার কেবল জিবরীল নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন [আবু দাউদ: ৩৩; তিরমিযী: ৩১০০; ইবন মাজাহ: ৩৫৭] যেখানে সালাত আদায় করলে উমরার সওয়াব হবে বলে ঘোষণা করেছেন। [তিরমিযী: ৩২৪; ইবন মাজাহ: ১৪১১] হাদীসের কতিপয় বর্ণনা থেকেও এটিই যে তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত মসজিদ সে কথার সমর্থন পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এ মসজিদ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ উল্লেখ করা হয়েছে। [উদাহরণস্বরূপ দেখুন, মুসলিম: ১৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৩১] বস্তুত: এ দুয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ উভয় মাসজিদই তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [কুরতুবী; সাদী]
(৩) এখানে সেই মসজিদকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযে অধিকতর হকদার বলে অভিহিত করা হয়, যার ভিত্তি শুরু থেকেই তাকওয়ার উপর রাখা হয়েছে। সে হিসেবে মসজিদে কুবা ও মসজিদে নববী উভয়টিই এ মর্যাদায় অভিষিক্ত। সে মসজিদেরই ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তথাকার মুসল্লীগণ পাক-পবিত্রতা অর্জনে সবিশেষ যত্নবান। পাক-পবিত্রতা বলতে এখানে সাধারণ না-পাকী ও ময়লা থেকে পাক-পরিচ্ছন্ন হওয়া বুঝায়। আর মসজিদে নববীর মুসল্লীগণ সাধারণতঃ এসব গুণেই গুণান্বিত ছিলেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবাবাসীদের বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্র হও? তারা বলল, আমরা সালাতের জন্য অযু করি, জানাবাত থেকে গোসল করি এবং পানি দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করি। [ইবন মাজাহ ৩৫৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৮) তুমি কখনো ওতে (নামাযের জন্য) দাঁড়াবে না;[1] অবশ্যই যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই আল্লাহভীতির উপর স্থাপিত হয়েছে, তাতেই (নামাযের জন্য) দাঁড়ানো তোমার অধিক সমুচিত।[2] সেখানে এমন সব লোক রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে পছন্দ করে।[3] আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদেরকে পছন্দ করেন।
[1] অর্থাৎ, তুমি সেখানে গিয়ে নামায পড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, সে অনুযায়ী সেখানে গিয়ে নামায পড়বে না। সুতরাং মহানবী (সাঃ) সেখানে নামায তো পড়েননি; বরং কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে সেই তথাকথিত মসজিদটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এই কর্ম দ্বারা দলীল নিয়ে উলামাগণ বলেন, যদি কোন মসজিদ আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত, মুসলিমদেরকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়, তবে তাকে ‘মসজিদে য্বিরার’ বলা যাবে এবং তা ভেঙ্গে ধ্বংস করে দিতে হবে। যাতে মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও ভেদাভেদ সৃষ্টি না হয়।
[2] ‘যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই আল্লাহ-ভীতির উপর স্থাপিত হয়েছে’ সে মসজিদ কোনটি? এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। কেউ কেউ মসজিদে ক্বুবা, আবার কেউ কেউ মসজিদে নববী বলেছেন। সালাফদের কেউ কেউ উভয়কেই বলেছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, যদি এই আয়াত দ্বারা মসজিদে ক্বুবা ধরা হয়, তবে কতিপয় হাদীস দ্বারা মসজিদে নববীকে (أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى) বলে সমর্থন করা হয়েছে এবং উভয়ের মাঝে কোন বিরোধ নেই। কারণ মসজিদে ক্বুবা যদি (أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى) এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়, তবে মসজিদে নববী তো আরো অধিকভাবে সেই মর্যাদার অধিকারী।
[3] হাদীসে এসেছে যে, তাঁরা হলেন ক্বুবাবাসী। তাঁরা পবিত্রতা অর্জনে পানি ব্যবহার করতেন বলে মহান আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করেছেন। (প্রকাশ থাকে যে, ঢেলার সাথে পানি ব্যবহার করার হাদীস সহীহ নয়। ইরওয়াউল গালীল ৪২নং দ্রঃ) ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, এই আয়াত এই কথার প্রমাণ যে, এমন পুরাতন মসজিদে নামায আদায় করা উত্তম, যে মসজিদ একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিমিত্তে নির্মাণ করা হয়েছে। অনুরূপ নেক লোকদের জামাআতে এবং এমন ব্যক্তিদের সাথে নামায পড়া উত্তম যারা পূর্ণরূপে ওযূ করতে ও পবিত্রতা অর্জনে বিশেষ যত্নবান।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান