আর বেদুঈনদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর নিকট নৈকট্য ও রাসূলের দো‘আর উপায় হিসেবে গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
কতক বেদুঈন আল্লাহতে ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে আর তারা যা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাকে তারা আল্লাহর নৈকট্য ও রসূলের দু‘আ লাভের মাধ্যম মনে করে, সত্যিই তা তাদের (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের মাধ্যম, অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করবেন, অবশ্যই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল
আর গ্রামবাসীদের মধ্যে কতিপয় লোক এমনও আছে যারা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামাত দিনের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখে, আর যা কিছু ব্যয় করে ওকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপকরণ ও রাসূলের দু‘আ লাভের উপকরণ রূপে গ্রহণ করে। স্মরণ রেখ, তাদের এই ব্যয় কার্য নিঃসন্দেহে তাদের জন্য (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের কারণ; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে নিজের রাহ্মাতে দাখিল করে নিবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন অতি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। মুজিবুর রহমান
But among the bedouins are some who believe in Allah and the Last Day and consider what they spend as means of nearness to Allah and of [obtaining] invocations of the Messenger. Unquestionably, it is a means of nearness for them. Allah will admit them to His mercy. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International
৯৯. আর মরুবাসীদের কেউ কেউ আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সন্নিধ্য ও রাসূলের দোআ লাভের উপায় গণ্য করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়; অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে দাখিল করবেন।(১) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(২)
(১) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সে সব বেদুঈনের আলোচনা সংগত মনে করেছেন যারা সত্যিকার ও পাকা মুসলিম। আর তা এজন্য যাতে একথা প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, সব বেদুঈনই এক রকম নয়। তাদের মধ্যেও নিঃস্বার্থ, নিষ্ঠাবান ও জ্ঞানী লোক আছে। তাদের অবস্থা হল এই যে, তারা যে যাকাত-সদকা দেয়, তাকে তারা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের উপায় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোআ প্রাপ্তির আশায় দিয়ে থাকে। ইবন আব্বাস বলেন, এখানে (وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ) বলে রাসূল তাদের জন্য যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন সেটা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]
(২) আলোচ্য আয়াত থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা পাই। এক. বেদুঈনরাও শহরবাসীর মতই। তাদের মধ্যেও ভালো-খারাপ উভয় ধরনের লোক রয়েছে। সুতরাং তারা বেদুঈন হয়েছে বলেই তাদের দুর্নাম করা হয়নি। বরং তারা আল্লাহর নির্দেশ না জানাটাই তাদের নিন্দার কারণ। দুই. কুফর ও নিফাক অবস্থাভেদে বেশী, কম, কঠোর ও হাল্কা হয়ে থাকে। তিন. এ আয়াত দ্বারা ইলমের সম্মান বুঝা যাচ্ছে। যার ইলম নেই সে ক্ষতির অধিক নিকটবর্তী সে লোকের তুলনায়, যার কাছে ইলম আছে। আর এজন্যই আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন। চার. এ আয়াত থেকে আরও বুঝা যায় যে, উপকারী ইলম সেটাই যা মানুষের কাজে লাগে। যা থাকলে মানুষ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা জানতে পারে। যেমন, ঈমান, ইসলাম, ইহসান, তাকওয়া, সফলতা, আনুগত্য, সৎ, মদ, সুদ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা; কেননা এগুলো জানলে আল্লাহর নির্দেশগুলো মানা যায়, আর নিষেধকৃত বস্তুগুলো পরিত্যাগ করা যায়। পাঁচ. ঈমানদারের উচিত তার কর্তব্যকর্ম অত্যন্ত খুশীমনে আদায় করা। সে সবসময় খেয়াল রাখবে যে সে এগুলো করতে পেরে লাভবান, ক্ষতিগ্রস্ত নয়। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৯) আর মরুবাসীদের মধ্যে কতিপয় লোক এমনও আছে যারা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, আর যা কিছু ব্যয় করে, তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপকরণ ও রসূলের দুআ লাভের উপকরণরূপে মনে করে।[1] স্মরণ রাখ, তাদের এই ব্যয়কার্য নিঃসন্দেহে তাদের জন্য (আল্লাহ) নৈকট্য লাভের কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে নিজ করুণায় প্রবেশ করাবেন;[2] নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
[1] এটা বেদুঈনদের দ্বিতীয় শ্রেণী, শহর থেকে দূরে থাকার পরেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনার তাওফীক দান করেছিলেন এবং সেই ঈমান দ্বারা তাদের ঐ অজ্ঞতাও দূর করে দেন, যা বেদুঈন হওয়ার কারণে বেদুঈনদের মধ্যে সাধারণতঃ পাওয়া যেত। সুতরাং তারা আল্লাহর পথে ব্যয়কৃত সম্পদকে জরিমানা ভাবত না; বরং তা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দু’আ পাওয়ার উপায় মনে করত। এ দ্বারা স্বাদাক্বাহ প্রদানকারীদের জন্য নবী (সাঃ) যে বর্কতের দু’আ করতেন তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একজন স্বাদাক্বাহ প্রদানকারীর জন্য নবী (সাঃ) এই বলে দু’আ করেছিলেন, (اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِيْ أَوْفَى) ‘‘হে আল্লাহ ! আবু আওফার বংশের উপর রহমত বর্ষণ করুন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
[2] এটা সুসংবাদ যে, তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা আল্লাহর রহমতের অধিকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান