হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক, সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয় তাদের এ বছরের পর। আর যদি তোমরা দারিদ্র্যকে ভয় কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ অনুগ্রহে তোমাদের অভাবমুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
ওহে বিশ্বাসীগণ! মুশরিকরা হল অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদে হারামের নিকট না আসে। তোমরা যদি দরিদ্রতার ভয় কর, তবে আল্লাহ ইচ্ছে করলে অচিরেই তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাব-মুক্ত করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মাসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে, আর যদি তোমরা দারিদ্রতার ভয় কর তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন, যদি তিনি চান। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় জ্ঞানী, বড়ই হিকমাতওয়ালা। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, indeed the polytheists are unclean, so let them not approach al-Masjid al-Haram after this, their [final] year. And if you fear privation, Allah will enrich you from His bounty if He wills. Indeed, Allah is Knowing and Wise. Sahih International
২৮. হে ঈমানদারগণ মুশরিকরা তো অপবিত্র(১); কাজেই এ বছরের পর(২) তারা যেন মসজিদুল হারামের ধারে-কাছে না আসে।(৩) আর যদি তোমরা দারিদ্রের আশংকা কর তবে আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে তাঁর নিজ করুণায় তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন।(৪) নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) কোন কোন মুফাসসির বলেন, কাফেরগণ ব্যহ্যিক ও আত্মিক সর্ব দিক থেকেই অপবিত্র। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] তবে অধিকাংশ মুফাসসির বলেনঃ এখানে নাপাক বলতে তাদের দেহ সত্তা বুঝানো হয়নি, বরং দ্বীনী বিষয়াদিতে তাদের অপবিত্রতা বোঝানো হয়েছে। সে হিসেবে এর অর্থ, তাদের আকীদাহ-বিশ্বাস, আখলাক-চরিত্র, আমল ও কাজ, তাদের জীবন — এসবই নাপাক। [ইবন কাসীর; সা’দী] আর এ সবের নাপাকির কারণেই হারাম শরীফের চৌহদ্দির মধ্যে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
(২) এ বছর বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরীনদের মতে ৯ম হিজরী বুঝানো হয়েছে। কাতাদা বলেন, এটা ছিল সে বছর যে বছর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদের নিয়ে হজ করেছেন। তখন আলী এ বিষয়টির ঘোষণা লোকদের মধ্যে দিয়েছিলেন। তখন হিজরতের পর নবম বছর পার হচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তী বছর হজ করেছিলেন। তিনি এর আগেও হজ করেন নি, পরেও করেন নি। [তাবারী]
(৩) এখানে “মাসজিদুল হারাম” বলতে সাধারণতঃ বুঝায় বায়তুল্লাহ শরীফের চতুর্দিকের আঙ্গিনাকে যা দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। তবে কুরআন ও সুন্নার কোন কোন স্থানে তা মক্কার পূর্ণ হারাম শরীফ অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। যা কয়েক বর্গমাইল এলাকব্যাপী। যার সীমানা চিহ্নিত করেছেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। যেমন, মে'রাজের ঘটনায় মাসজিদুল হারামের উল্লেখ রয়েছে। ইমামগণের ঐক্যমতে এখানে “মাসজিদুল হারাম” অর্থ বায়তুল্লাহর আঙ্গিনা নয়। কারণ, মে'রাজের শুরু হয় উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘর থেকে, যা বায়তুল্লাহর আঙ্গিনার বাইরে। অনুরূপ সূরা তাওবার শুরুতে ৭ নং আয়াতে যে মসজিদুল হারামের উল্লেখ রয়েছে, তার অর্থও পূর্ণ হারাম শরীফ। কারণ, এখানে উল্লেখিত সন্ধির স্থান হলো ‘হুদায়বিয়া’ যা হারাম শরীফের সীমানার বাইরে তার অতি সন্নিকটে অবস্থিত। [আল-বালাদুল হারাম: আহকাম ওয়া আদাব]
(৪) ইবনে আব্বাস বলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা মুশরিকদের মাসজিদুল হারামে যাওয়া থেকে নিষেধ করলেন, তখন শয়তান মুমিনদের অন্তরে চিন্তার উদ্রেক ঘটাল যে, তারা কোত্থেকে খাবে? মুশরিকদেরকে তো বের করে দেয়া হয়েছে, তাদের বানিজ্য কাফেলা তো আর আসবে না। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। যাতে তিনি তাদেরকে আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে অমুখাপেক্ষী করে দিলেন। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) হে বিশ্বাসিগণ! অংশীবাদীরা তো অপবিত্র।[1] সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকট না আসে।[2] যদি তোমরা দারিদ্রে্র আশঙ্কা কর, তাহলে জেনে রাখ, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ করুণায় তিনি তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। [3] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[1] অংশীবাদী বা মুশরিকরা অপবিত্র কথার অর্থ হল, আকীদা-বিশ্বাস ও আমল হিসাবে তারা (অভ্যন্তরীণভাবে) অপবিত্র। কারো কারো নিকটে মুশরিক বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক উভয়ভাবে অপবিত্র। কেননা, তারা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সেইরূপ খেয়াল রাখে না, যেরূপ শরীয়ত নির্দেশ করেছে।
[2] এটা সেই হুকুম যা সন ৯ হিজরীতে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণার সাথে করা হয়েছিল। যার বিস্তারিত বর্ণনা পূর্বে (১-২নং আয়াতে) উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কেবল মাসজিদুল হারামের জন্য। নচেৎ প্রয়োজন মোতাবেক মুশরিকরা অন্যান্য মসজিদে প্রবেশ করতে পারে। যেমন নবী (সাঃ) সুমামাহ বিন উসালকে মসজিদে নববীর থামে বেঁধে রেখেছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে ইসলাম ও নবীর মহব্বত সৃষ্টি করেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরন্তু অধিকাংশ উলামাগণের নিকট এখানে ‘মাসজিদুল হারাম’ থেকে উদ্দেশ্য পূর্ণ হারাম এলাকা। অর্থাৎ, হারাম-সীমানার ভিতর মুশরিকদের প্রবেশ নিষেধ। কিছু আসার (সাহাবার উক্তি ও কর্ম) অনুসারে এই হুকুম থেকে যিম্মী ও খাদেমদেরকে পৃথক করা হয়েছে। উমার বিন আব্দুল আযীয (রঃ) আলোচ্য আয়াতের ভিত্তিতে নিজ রাজত্বকালে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকেও মুসলিমদের মসজিদে প্রবেশ না করার আদেশ জারী করেছিলেন। (ইবনে কাসীর)
[3] মুশরিকদের উপর হারাম প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারী হওয়ার কারণে কিছু মুসলিমদের মনে চিন্তা হল যে, হজ্জের মৌসুমে অধিকাধিক লোক জমা হওয়ার কারণে যে ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে থাকে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে। আল্লাহ তাআলা বললেন, দারিদ্রে্র ভয় করো না। তিনি অতিসত্বর নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে ধনবান বানিয়ে দেবেন। সুতরাং বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলে বহু গনীমতের মাল মুসলিমদের হস্তগত হল। অতঃপর ধীরে ধীরে সারা আরববাসী মুসলমান হয়ে গেল। পরিণামে হজ্জের মৌসুমে হাজীদের গমনাগমন ঠিক সেইরূপ হয়ে গেল যেমন পূর্বে ছিল; বরং তার থেকেও বেশী হল। আর সেই সংখ্যাবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান