১৭ : ৯৩ اَوۡ یَكُوۡنَ لَكَ بَیۡتٌ مِّنۡ زُخۡرُفٍ اَوۡ تَرۡقٰی فِی السَّمَآءِ ؕ وَ لَنۡ نُّؤۡمِنَ لِرُقِیِّكَ حَتّٰی تُنَزِّلَ عَلَیۡنَا كِتٰبًا نَّقۡرَؤُهٗ ؕ قُلۡ سُبۡحَانَ رَبِّیۡ هَلۡ كُنۡتُ اِلَّا بَشَرًا رَّسُوۡلًا ﴿۹۳﴾

‘অথবা তোমার জন্য স্বর্ণের একটি ঘর হবে অথবা তুমি আসমানে উঠবে, কিন্তু তোমার উঠাতেও আমরা ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল করবে যা আমরা পাঠ করব’। বল, ‘পবিত্র মহান আমার রব! আমি তো একজন মানব-রাসূল ছাড়া কিছু নই’? আল-বায়ান

কিংবা (যতক্ষণ না) তোমার একটা স্বর্ণখচিত গৃহ হবে কিংবা তুমি আসমানে আরোহণ করবে। আর তোমার এ আরোহণকেও আমরা কক্ষনো বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবে যা আমরা পাঠ করব।’ বল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমি একজন মানুষ রসূল ছাড়া কি অন্য কিছু? তাইসিরুল

অথবা তোমার একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ আমরা তখনও বিশ্বাস করবনা যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবে যা আমরা পাঠ করব। বলঃ পবিত্র আমার মহান রাব্ব! আমিতো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল। মুজিবুর রহমান

Or you have a house of gold or you ascend into the sky. And [even then], we will not believe in your ascension until you bring down to us a book we may read." Say, "Exalted is my Lord! Was I ever but a human messenger?" Sahih International

৯৩. অথবা তোমার একটি সোনার তৈরী ঘর হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশ আরোহণে আমরা কখনো ঈমান আনব না যতক্ষন তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল না করবে যা আমরা পাঠ করব।(১) বলুন, পবিত্ৰ মহান আমার রব! আমি তো হচ্ছি শুধু একজন মানুষ রাসূল।(২)

(১) মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, তাদের কথার উদ্দেশ্য হলো, আমাদের প্রত্যেকের নামে চিঠি আসে না কেন? যাতে করে আমরা সে চিঠি সর্বদা বালিশের কাছে রেখে দিতে পারি। [ইবন কাসীর] কাফেরগণ যে এ ধরনের আলাদা আলাদা চিঠি দাবী করেছিল তার বর্ণনা অন্যান্য আয়াতেও এসেছে, বলা হয়েছে, “বস্তুত তাদের প্রত্যেকেই কামনা করে যে, তাকে একটি উন্মুক্ত গ্ৰন্থ দেয়া হোক”। [সূরা আল-মুদ্দাস্‌সিরঃ ৫২]

(২) আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে যে কথাটি বুঝাতে চাচ্ছেন তা হলো, যদি তারা যা চায়। তা দেয়াও হয় তারপরও তারা ঈমান আনবে না। কেননা যারা হতভাগা, যাদের ঈমান আনার ইচ্ছা নেই তারা এরপরও আরো অনেক কিছু খুঁজে বেড়াবে। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্ তা'আলা এ সত্যটিকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “আমি যদি আপনার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি সেটা হাত দিয়ে স্পর্শও করত তবুও কাফিররা বলত, “এটা স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছু নয়।” [সূরা আল-আনআমঃ ৭]

অন্যত্র বলেছেন, “তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের কাছে যদি কোন নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা এতে ঈমান আনত। বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। তাদের কাছে নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না এটা কিভাবে তোমাদেরকে বোঝান যাবে? [সূরা আল-আনআমঃ ১০৯] আরো বলেছেনঃ “আমি তাদের কাছে ফিরিশতা পাঠালেও এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাযির করলেও আল্লাহর ইচ্ছে না হলে তারা কখনো ঈমান আনবে। না।” [সূরা আল-আনআমঃ ১১১]

আবার অন্য জায়গায় বলেছেন, “যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহন করতে থাকে, তবুও তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্ৰস্ত সম্প্রদায়।” [সূরা আল-হিজরঃ ১৪–১৫] আরো বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে আপনার রবের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের কাছে সবগুলো নিদর্শন আসে, এমনকি তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখতে পাবে।” [সূরা ইউনুসঃ ৯৬–৯৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৩) অথবা তোমার একটি স্বর্ণনির্মিত গৃহ হবে,[1] অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে; কিন্তু তোমার আকাশ আরোহণ আমরা কখনো বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ না করবে; যা আমরা পাঠ করব।’[2] বল, ‘পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রসূল মাত্র।’[3]

[1] زُخْرُفٌ এর প্রকৃত অর্থ, সৌন্দর্য। مُزَخْرَفٌ সৌন্দর্যখচিত জিনিসকে বলা হয়। তবে এখানে তার অর্থ  হল, স্বর্ণনির্মিত।

[2] অর্থাৎ, আমাদের প্রত্যেকেই তা পরিষ্কারভাবে পড়তে পারবে।

[3] অর্থাৎ, আমার প্রতিপালকের আছে সব রকমের শক্তি। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সমূহ দাবীকে এক মুহূর্তে كُنْ (হও) শব্দ দ্বারা পূরণ করে দিবেন। কিন্তু আমার ব্যাপারটা হল, আমি (তোমাদেরই মত) একজন মানুষ। কোন মানুষ এ জিনিসগুলো করার শক্তি রাখে কি, যা আমার কাছে তোমরা দাবী করছ? হ্যাঁ, মানুষ হওয়ার সাথে সাথে আমি আল্লাহর একজন রসূলও বটি। তবে রসূলের কাজ শুধু আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আর তা আমি পৌঁছে দিয়েছি এবং পৌঁছাতে আছি। মানুষের দাবী অনুযায়ী মু’জিযা প্রদর্শন করা রিসালাতের কোন অংশ নয়। অবশ্য আল্লাহর ইচ্ছায় রিসালাতের সত্যতা প্রমাণের জন্য এক-আধটা মু’জিযা প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু মানুষের চাহিদা মত মু’জিযা দেখানো শুরু করে দিলে এর গতি কোথাও গিয়ে থামবে না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ চাহিদা মোতাবেক নতুন মু’জিযা দেখার আকাঙ্ক্ষী হবে এবং এর ফলে রসূল কেবল এই কাজেই লেগে থাকবেন। তবলীগ ও দাওয়াতের আসল কাজেই মন্দা পড়ে যাবে। সুতরাং মু’জিযার বিকাশ কেবল আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটা সম্ভব। আর তাঁর ইচ্ছা সেই কৌশল ও ভাল-মন্দের দিক বিচার অনুযায়ী হয়, যার জ্ঞান তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে নেই। আর আমার জন্যও তাঁর ইচ্ছার মধ্যে হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান