লগইন করুন
১৭ সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) | Al-Isra | سورة الإسراء - আয়াত নং - ১৫ - মাক্কী
যে হিদায়াত গ্রহণ করে, সে তো নিজের জন্যই হিদায়াত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (স্বার্থের) বিরুদ্ধেই পথভ্রষ্ট হয়। আর কোন বহনকারী অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই। আল-বায়ান
যে সঠিক পথে চলবে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই সঠিক পথে চলবে, আর যে গুমরাহ হবে তার গুমরাহীর পরিণাম তার নিজের উপরেই পড়বে। কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আমি ‘আযাব দেই না যতক্ষণ একজন রসূল না পাঠাই। তাইসিরুল
যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারাতো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য তা অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারাতো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেহ অন্য কারও ভার বহন করবেনা; আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কেহকেও শাস্তি দিইনা। মুজিবুর রহমান
Whoever is guided is only guided for [the benefit of] his soul. And whoever errs only errs against it. And no bearer of burdens will bear the burden of another. And never would We punish until We sent a messenger. Sahih International
১৫. যে সৎপথ অবলম্বন করবে। সে তো নিজেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেরই ধ্বংসের জন্য।(১) আর কোন বহনকারী অন্য কারো ভার বহন করবে না।(২) আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।(৩)
১. অর্থাৎ সৎ ও সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন করে কোন ব্যক্তি আল্লাহ, রসূল বা সংশোধন প্রচেষ্টা পরিচালনাকারীদের প্রতি কোন অনুগ্রহ করে না বরং সে তার নিজেরই কল্যাণ করে। অনুরূপভাবে ভুল পথ অবলম্বন করে অথবা তার উপর অনড় থেকে কোন ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে না, নিজেরই ক্ষতি করে। [আদওয়াউল বায়ান] আল্লাহর রাসূল ও সত্যের আহবায়কগণ মানুষকে ভুল পথ থেকে বাঁচাবার এবং সঠিক পথ দেখাবার জন্য যে প্রচেষ্টা চালান তা নিজের কোন স্বার্থে নয়, বরং মানবতার কল্যাণার্থেই চালান। কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ তা'আলা তা বলেছেন, যেমন, “যে সৎকাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। আপনার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুমকারী নন।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪৬; সূরা আল-জাসিয়াহ: ১৫]
আরও বলেন, “যে কুফরী করে কুফরীর শাস্তি তারই প্রাপ্য; আর যারা সৎকাজ করে তারা নিজেদেরই জন্য রচনা করে সুখশয্যা।” [সূরা আর-রূম: ৪৪] আরও বলেন, “অবশ্যই তোমাদের রব এর কাছ থেকে তোমাদের কাছে চাক্ষুষ প্রমাণাদি এসেছে। অতঃপর কেউ চক্ষুষ্মান হলে সেটা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ অন্ধ সাজলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্ৰস্ত হবে। আর আমি তোমাদের উপর সংরক্ষক নই।” [সূরা আল-আনআম: ১০৪] আরও বলেন, “যে সৎপথ অবলম্বন করে সে তা করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে বিপথগামী হয় সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য আর আপনি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নন।” [সুরা আয-যুমার: ৪১]
২. এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সত্য। কুরআন মজীদে বিভিন্ন স্থানে এ সত্যটি বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ এটি না বুঝা পর্যন্ত মানুষের কার্যধারা কখনো সঠিক নিয়মে চলতে পারে না। এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তির একটি স্বতন্ত্র নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আল্লাহর সামনে এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যক্তিগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি তার সাথে শরীক নেই। তবে অন্যত্র যে বলা হয়েছে, “ওরা নিজেদের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা” [সূরা আল-আনকাবূত: ১৩] এবং আরও যে এসেছে, “ফলে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে তাদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায় এবং তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত বিভ্ৰান্ত করেছে”। [সূরা আন-নাহল: ২৫]
আয়াতদ্বয় এ আয়াতে বর্ণিত মৌলিক সত্যের বিরোধী নয়। কারণ তারা খারাপ কাজের প্রতি মানুষকে আহবান করে তাদের নিজেদেরকেই কলুষিত করেছে। তাই তারা অন্যের বোঝাকে নিজেদের বোঝা হিসেবে বহন করবে। অন্যের বোঝা হিসেবে বহন করবে না। এটা বান্দাদের সাথে আল্লাহর রহমত ও ইনসাফেরই বহিঃপ্রকাশ [দেখুন, ইবন কাসীর]
৩. তবে এ ধরনের আয়াত পড়ে যাদের কাছে কোন নবীর পয়গাম পৌঁছেনি। তাদের অবস্থান কোথায় হবে, এ প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানোর চেয়ে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির চিন্তা করা উচিত, তার নিজের কাছে তো পয়গাম পৌঁছে গেছে, এখন তার অবস্থা কি হবে? আর অন্যের ব্যাপারে বলা যায়, কার কাছে, কবে, কিভাবে এবং কি পরিামাণ আল্লাহর পয়গাম পৌছেছে এবং সে তার সাথে কি আচরণ করেছে এবং কেন করেছে। তা আল্লাহই ভালো জানেন। আলেমুল গায়েব ছাড়া কেউ বলতে পারেন না। কার উপর আল্লাহর প্রমাণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কার উপর হয়নি। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস'আলা হলো, নাবালক বাচ্চাদের নিয়ে। তাদের কি হুকুম হবে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট কথা হলো এই যে, মুমিনদের সন্তানগণ জান্নাতি হবে। কিন্তু কাফের মুশরিকদের সন্তানদের ব্যাপারে আলেমগণ বিভিন্ন হাদীসের কারণে সর্বমোট চারটি মতে বিভক্ত হয়েছেঃ
১. তারা জান্নাতে যাবে। এ মতের সপক্ষে তারা এ আয়াত এবং সহীহ বুখারীর এক হাদীস [৪০৪৭] দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন। অনুরূপ কিছু হাদীস মুসনাদে আহমাদ [৫/৫৮] ও মাজমাউয-যাওয়ায়েদ [৭/২১৯] ও এসেছে।
২. তাদের সম্পর্কে কোন কিছু বলা যাবে না। এ মতের সপক্ষেও সহীহ বুখারীর এক হাদীস [৩৮৩১, ৪৮৩১] থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩. তারা তাদের পিতাদের অনুগমণ করবে। [মুসনাদে আহমদে [৬/৪৮] বর্ণিত হাদীস থেকে এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়।
৪. তাদেরকে হাশরের মাঠে পরীক্ষা করা হবে। সে পরীক্ষায় যারা পাশ করবে তারা হবে জান্নাতি। আর পাশ না করলে হবে জাহান্নামি। এ মতটি সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য মত। এ ব্যাপারে মুসনাদে আহমাদের [৪/২৪] এক হাদীস থেকে প্রমাণ পাই। সত্যান্বেষী আলেমগণ এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ইবন কাসীর এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) যারা সৎপথ অবলম্বন করবে, তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্যই সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে, তারা নিজেদেরই ধ্বংসের জন্যই হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না।[1] আর আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। [2]
[1] অবশ্য যে নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করবে, সে নিজের ভ্রষ্টতার বোঝার সাথে সাথে যাদেরকে সে স্বীয় প্রচেষ্টায় ভ্রষ্ট করেছে, তাদের গুনাহের বোঝাও (তাদের গুনাহতে কোন কমতি না করেই) তাকে বহন করতে হবে। এ কথা কুরআনের অন্য কয়েকটি স্থানে এবং বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে এটা হবে তাদেরই গুনাহের বোঝা যা অন্যদেরকে ভ্রষ্ট করে তারা অর্জন করেছে।
[2] কোন কোন মুফাসসির এ থেকে কেবল পার্থিব শাস্তিকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, আখেরাতের আযাব থেকে স্বতন্ত্র হবে না। কিন্তু কুরআনে কারীমের অন্যান্য আয়াত থেকে এ কথা পরিষ্কার হয় যে, মহান আল্লাহ মানুষদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তোমাদের কাছে কি আমার রসূল আসেনি? তারা ইতিবাচক উত্তর দিবে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রসূল প্রেরণ এবং গ্রন্থ অবতরণ ছাড়া তিনি কাউকে আযাব দেবেন না। তবে কোন্ জাতি বা কোন্ ব্যক্তির কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছেনি, সে ফায়সালা কিয়ামতের দিন তিনিই করবেন। সেখানে অবশ্যই কারো সাথে অবিচার করা হবে না। বধির, পাগল, নির্বোধ এবং দুই নবীর মধ্যবর্তী যুগে মৃত্যুবরণকারী (যাদের নিকট দ্বীনের খবর একেবারেই অজানা সেই) ব্যক্তিদের ব্যাপারও অনুরূপ। এদের ব্যাপারে কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের প্রতি ফিরিশতা পাঠাবেন এবং ফিরিশতারা তাদেরকে বলবেন যে, ‘জাহান্নামে প্রবেশ কর।’ অতএব তারা যদি আল্লাহর এই নির্দেশকে মেনে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করে যায়, তাহলে জাহান্নাম তাদের জন্য ফুল বাগান হয়ে যাবে। অন্যথা তাদেরকে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসনাদ আহমদ ৪/২৪, ইবনে হিব্বান ৯/২২৬, সহীহুল জামে’ ৮৮১নং) মুসলিম শিশুরা জান্নাতে যাবে। তবে কাফের ও মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে নীরব থেকেছেন। কেউ কেউ জান্নাতে যাওয়ার এবং জাহান্নামে যাওয়ার অভিমত পেশ করেছেন। ইমাম ইবনে কাসীর বলেছেন, হাশরের মাঠে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। যারা আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করবে, তারা জান্নাতে এবং যারা অবাধ্যতা করবে, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তিনি (ইবনে কাসীর) এই উক্তিকেই প্রাধান্য দিয়ে বলেন যে, এর ফলে পরস্পর বিরোধী বর্ণনাগুলোর মধ্যে সম¦বয় সাধন করা যায়। (বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীর ইবনে কাসীর দ্রষ্টব্য) তবে সহীহ বুখারীর বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুশরিকদের শিশুরাও জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(দ্রষ্টব্যঃ সহীহ বুখারী ৩/২৫৭, ১২/৩৪৮ ফাতহুল বারী সহ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান