৫২ সূরাঃ আত-তূর | At-Tur | سورة الطور - আয়াত নং - ২১ - মাক্কী
আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। আল-বায়ান
যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততিরা ঈমানের সাথে পিতামাতাকে অনুসরণ করে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তান সন্ততিকে মিলিত করব। তাদের ‘আমালের কোন কিছু থেকেই আমি তাদেরকে বঞ্চিত করব না। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ। তাইসিরুল
এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করাব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবনা, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী। মুজিবুর রহমান
And those who believed and whose descendants followed them in faith - We will join with them their descendants, and We will not deprive them of anything of their deeds. Every person, for what he earned, is retained. Sahih International
২১. আর যারা ঈমান আনে, আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, আমরা তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে(১) এবং তাদের কর্মফল আমরা একটুও কমাবো না(২); প্ৰত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।(৩)
(১) অর্থাৎ যারা ঈমানদার এবং তাদের সন্তানগণও ঈমানে তাদের অনুগামী, আমরা তাদের সন্তানদেরকে জান্নাতে তাদের সাথে মিলিত করে দেব। [মুয়াসসার] পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ ওয়াদা করা হয়েছে। যেমন, সূরা আর রা'দ এর ২৩ এবং সূরা গাফির এর ৮ নং আয়াত। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তা'আলা সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সন্তান-সন্ততিকেও তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে দেবেন, যদিও তারা কর্মের দিক দিয়ে সেই মর্তবার যোগ্য না হয়- যাতে সম্মানিত মুরব্বীদের চক্ষুশীতল হয়।
সায়ীদ ইবন-জুবায়ের রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, জান্নাতী ব্যাক্তি জান্নাতে প্ৰবেশ করে তার পিতামাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে যে, তারা কোথায় আছে? জওয়াবে বলা হবে যে, তারা তোমার মর্তবা পর্যন্ত পৌছতে পারেনি। তাই তারা জান্নাতে আলাদা জায়গায় আছে। এই ব্যক্তি আরয করবে, হে রব! দুনিয়াতে নিজের জন্যে ও তাদের সবার জন্যে আমল করেছিলাম। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আদেশ হবে, তাদেরকেও জান্নাতের এই স্তরে একসাথে রাখা হোক।
এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আখেরাতে সৎকর্মপরায়ণ পিতৃপুরুষ দ্বারা তাদের সন্তানরা উপকৃত হবে এবং আমলে তাদের মর্তবা কম হওয়া সত্বেও তাদেরকে পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। অপরদিকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান-সন্ততি দ্বারা তাদের পিতা-মাতার উপকৃত হওয়াও হাদীসে প্রমাণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কোন কোন নেকবান্দার মর্তবা তার আমলের তুলনায় অনেক উচ্চ করে দেবেন। সে প্রশ্ন করবে, হে রব! আমাকে এই মর্তবা কিরূপে দেয়া হল? আমার আমল তো এই পর্যায়ের ছিল না। উত্তর হবে, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও দো'আ করেছে। এটা তারই ফল। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫০৯]
(২) আয়াতের অর্থ এইঃ সন্তান-সন্ততিকে তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করার জন্যে এই পন্থা অবলম্বন করা হবে না যে, সম্মানিত পিতৃপুরুষদের আমল কিছু হ্রাস করে সন্তানদের আমল পূর্ণ করা হবে। বা পিতৃপুরুষদের পদাবনতির মাধ্যমে সমান করা হবে। বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ কৃপায় তাদেরকে সমান করে দেবেন। [ইবন কাসীর]
(৩) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের জন্যে দায়ী হবে। অপরের গোনাহের বোঝা তার মাথায় চাপানো হবে না। পূর্ববর্তী আয়াতে নেককর্মের বেলায় সৎকর্মশীল পিতৃপুরুষদের খাতিরে সন্তান-সন্ততির আমল বাড়িয়ে দেয়ার কথা আছে। কিন্তু গোনাহের বেলায় এরূপ করা হবে না। একজনের গোনাহের প্রতিক্রিয়া অপরের উপর প্রতিফলিত হবে না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) যারা বিশ্বাস করে আর তাদের সন্তুান-সন্ততি বিশ্বাসে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করব না।[1] প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ। [2]
[1] অর্থাৎ, যাদের পিতারা নিজেদের আন্তরিকতা, আল্লাহভীরুতা, সৎকর্ম ও সচ্চরিত্রের ভিত্তিতে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা লাভে ধন্য হবে, মহান আল্লাহ তাদের ঈমানদার সন্তান-সন্ততিদের মর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে তাদের পিতাদের সাথে মিলিত করবেন। এ রকম করবেন না যে, তাদের পিতাদের মর্যাদা কম করে তাদেরকে তাদের সন্তানদের নিম্নমানের মর্যাদায় তাদেরকে নিয়ে আসবেন। অর্থাৎ, মু’মিনদের প্রতি তিনি দ্বিগুণ অনুগ্রহ করবেন। প্রথমতঃ বাপ ও বেটাদেরকে পরস্পর মিলিত করবেন। যাতে তাদের চক্ষু শীতল হয়। তবে শর্ত হল যে, উভয়েই যেন ঈমানদার হয়। দ্বিতীয়তঃ এই যে, নিম্ন মর্যাদার অধিকারীদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। তাছাড়া উভয়কে মিলিত করার পদ্ধতি এটাও হতে পারত যে, প্রথম শ্রেণীর লোকদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণী দেবেন। কিন্তু যেহেতু এটা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে অনেক হীন ও নীচ ব্যাপার তাই তিনি এ রকম করবেন না। বরং তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিকারীদেরকে প্রথম শ্রেণী দান করবেন। এটা হল আল্লাহর সেই অনুগ্রহ, যা তিনি পিতাদের নেক আমলের বর্কতে সন্তানদের প্রতি করবেন। আর হাদীসে এসেছে যে, সন্তানদের দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে পিতাদের মর্যাদা বর্ধিত হয়। জান্নাতে এক ব্যক্তির মর্যাদা উচ্চ করা হলে, সে আল্লাহকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে, মহান আল্লাহ বলবেন যে, তোমার সন্তানের তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে। (মুসনাদে আহমাদ ২/৫০৯) এর সমর্থন ঐ হাদীস দ্বারাও হয়, যাতে এসেছে যে, ‘‘মানুষ মারা গেলে তার আমলের ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তিনটি জিনিসের সওয়াব মৃত্যুর পরও জারী থাকে। সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে, আর এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দু’আ করে।’’ (মুসলিম অসিয়ত অধ্যায়)
[2] رَهِيْنٌ এর অর্থ, مَرْهُوْنٍ (বন্ধক রাখা বস্তু)। প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের দায়ে দায়বদ্ধ। আর এ কথাটি ব্যাপক; যাতে মু’মিন ও কাফের উভয়ই শামিল। অর্থ হল, যে ব্যক্তিই (ভাল-মন্দ) যেমন আমল করবে, সেই অনুযায়ী সে (ভাল-অথবা মন্দ) ফল পাবে। অথবা এ থেকে কাফেদেরকে বুঝানো হয়েছে। তারা নিজেদের কর্মের জন্য বন্দী থাকবে। যেমন অন্যত্র বলেন, {إِلَّكُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ، اأَصْحَابَ الْيَمِين} অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের জন্য দায়ী। তবে ডানহাত-ওয়ালারা নয়। (সূরা মুদ্দাসসির ৩৮-৩৯ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান