২৩ সূরাঃ আল-মুমিনুন | Al-Mu'minun | سورة المؤمنون - আয়াত নং - ৫১ - মাক্কী
‘হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভাল বস্ত্ত থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সর্ম্পকে আমি সম্যক জ্ঞাত। আল-বায়ান
হে রসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার কর, আর সৎ কাজ কর, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি পূর্ণরূপে অবগত। তাইসিরুল
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎ কাজ কর; তোমরা যা কর সেই সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত। মুজিবুর রহমান
[Allah said], "O messengers, eat from the good foods and work righteousness. Indeed, I, of what you do, am Knowing. Sahih International
৫১. হে রাসূলগণ!(১) আপনারা পবিত্র বস্তু থেকে খাদ্য গ্ৰহণ করুন এবং সৎকাজ করুন(২); নিশ্চয় আপনারা যা করেন সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত।
(১) এ থেকে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, প্রতি যুগে বিভিন্ন দেশে ও জাতির মধ্যে আগমনকারী নবীদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং স্থান-কালের বিভিন্নতা সত্বেও তাদের সবাইকে একই হুকুম দেয়া হয়েছিল। তাদের সবাইকে হালাল খাওয়ার এবং সৎকাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। [ইবন কাসীর]
(২) طيبات শব্দের আভিধানিক অর্থ, পবিত্র ও উত্তম বস্তু। [ফাতহুল কাদীর]। এখানে এর দ্বারা এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যা নিজেও পাক-পবিত্র এবং হালাল পথে অর্জিতও হয়। তাই طيبات দ্বারা শুধু বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে পবিত্র ও হালাল বস্তুসমূহই বুঝতে হবে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] পবিত্র জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে নাসারাদের বৈরাগ্যবাদ ও অন্যদের ভোগবাদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থার দিকে ইংগিত করা হয়েছে। [দেখুনঃ আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
এখানে আরো প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো এই যে, নবী-রাসূলগণকে তাদের সময়ে দুই বিষয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক, হালাল ও পবিত্ৰ বস্তু আহার কর। দুই, সৎকর্ম কর। আর এটা সৰ্বজনবিদিত সত্য যে, আল্লাহ্ তা'আলা নবী-রাসূলগণকে নিষ্পাপ রেখেছিলেন, তাদেরকেই যখন একথা বলা হয়েছে, তখন উম্মতের জন্যে এই আদেশ আরও বেশী পালনীয়। বস্তুতঃ আসল উদ্দেশ্য উম্মতকে এই আদেশের অনুগামী করা। আলেমগণ বলেনঃ এই দুটি আদেশকে একসাথে বর্ণনা করার মধ্যে ইঙ্গিত এই যে, সৎকর্ম সম্পাদনে হালাল খাদ্যের প্রভাব অপরিসীম। খাদ্য হালাল হলে সৎকর্মের তাওফীক হতে থাকে। [দেখুনঃ ইবন কাসীর] পক্ষান্তরে খাদ্য হারাম হলে সৎকর্মের ইচ্ছা করা সত্বেও তাতে নানা আপত্তি প্রতিবন্ধক হয়ে যায়।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “হে লোকেরা! আল্লাহ নিজে পবিত্র, তাই তিনি পবিত্র জিনিসই পছন্দ করেন।” তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “এক ব্যক্তি আসে সুদীর্ঘ পথ সফর করে। দেহ ধূলি ধূসরিত। মাথার চুল এলোমেলো। আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনা করেঃ হে প্ৰভু! হে প্ৰভু! কিন্তু অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, কাপড় চোপড় হারাম এবং হারাম খাদ্যে তার দেহ প্রতিপালিত হয়েছে। এখন কিভাবে এমন ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে?” [মুসলিমঃ ১০১৫] এ থেকে বোঝা গেল যে, ইবাদতে ও দো'আ কবুল হওয়ার ব্যাপারে হালাল খাদ্যের অনেক প্রভাব আছে। খাদ্য হালাল না হলে ইবাদত ও দোআ কুবল হওয়ার যোগ্য হয় না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫১) হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর;[1] তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।
[1] طَيِّبَات বলতে পবিত্র, উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী। আবার কেউ কেউ এর অনুবাদ করেছেন, হালাল খাদ্যসমূহ। উভয় অনুবাদই সঠিক। কারণ, প্রত্যেক পবিত্র জিনিসকেই আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন। আর প্রতিটি হালাল জিনিসই পবিত্র ও সুসবাদু। আল্লাহ তাআলা অপবিত্র বস্তুকে এই জন্য হারাম করেছেন, যেহেতু প্রভাব ও পরিণামের দিক দিয়ে তা অপবিত্র; যদিও অপবিত্র ভক্ষণকারীদেরকে নিজেদের পরিবেশ ও অভ্যাসের কারণে তা সুস্বাদু বলে মনে হয়। আর সৎকর্ম হল সেই সব কর্ম যা শরীয়ত তথা কুরআন ও (সহীহ) হাদীস সম্মত হয়। প্রত্যেক সেই কাজই সৎ বা ভালো নয়, যা পরিবেশের লোকজন সৎ বা ভাল মনে করে। কারণ, বিদআতী লোকদের কাছে বিদআতও বড় ভালো কাজ মনে হয়। বরং তাদের নিকট বিদআতের যে গুরুত্ব মর্যাদা আছে, শরীয়তের ফরয, সুন্নত ও মুস্তাহাবের সে গুরুত্ব ও মর্যাদা নেই। পবিত্র বস্তু পানাহার করার সাথে সাথে সৎকর্মের তাকীদ থেকে জানা যায় যে, একটির অপরটির সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং একটি অপরটির সহযোগী। যেহেতু হালাল খেয়ে নেক আমল সহজ হয়। আর নেক আমল মানুষকে হালাল খেতে উৎসাহিত করে এবং তাই খেয়ে সন্তুষ্ট থাকার কথা শিক্ষা দেয়। এই জন্যই মহান আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রসূলকে উক্ত দুটি কর্মের আদেশ করেছেন।
সুতরাং প্রত্যেক নবী-রসূল পরিশ্রম করে হালাল রুযী উপার্জন ও ভক্ষণ করতে যত্নবান হতেন। যেমন, দাউদ (আঃ)-এর ব্যাপারে এসেছে যে, তিনি নিজ হাতে পরিশ্রমের উপার্জন ভক্ষণ করতেন। (সহীহ বুখারী ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়) আর মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক নবী ছাগল চরিয়েছেন। আমিও সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি। (সহীহ বুখারী ইজারা অধ্যায়) বর্তমানে কালোবাজারী, চোরাই চালান, পণ্য পাচার, ঘুসখোরী, সূদখোরী ছাড়াও অন্যান্য অবৈধ উপায়ে হারাম ভক্ষণকারীরা পরিশ্রম করে হালাল ভক্ষণকারীদেরকে নীচ ও নিমনশ্রেণীভুক্ত গণ্য করে রেখেছে; যদিও বাস্তব অবস্থা তার পূর্ণ বিপরীত। মুসলিম সমাজে একজন হারামখোরের কোন সম্মান ও স্থান নেই; যদিও সে কারূনের সমতুল্য ধনশালী ব্যক্তি হোক না কেন। সম্মান ও ইজ্জতের অধিকারী একমাত্র তারাই, যারা পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন খায়; যদিও তা লবণ-ভাত হোক না কেন। কারণ নবী (সাঃ) এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন ও বলেছেন যে, মহান আল্লাহ হারাম উপার্জনকারীর না তো সাদকাহ কবুল করেন, আর না দু’আ। (সহীহ মুসলিম যাকাত অধ্যায়)