কুরআনের আয়াতের অনুবাদ/তাফসীর 'টি ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
১৭ : ৫২ یَوۡمَ یَدۡعُوۡكُمۡ فَتَسۡتَجِیۡبُوۡنَ بِحَمۡدِهٖ وَ تَظُنُّوۡنَ اِنۡ لَّبِثۡتُمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا ﴿۵۲﴾

‘যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন, তখন তাঁর প্রশংসার সাথে তোমরা সাড়া দেবে। আর তোমরা ধারণা করবে, অল্প সময়ই তোমরা অবস্থান করেছিলে’। আল-বায়ান

যে দিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন আর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে তাঁর ডাকে সাড়া দিবে আর তোমরা ধারণা করবে যে, তোমরা খুব অল্প সময়ই অবস্থান করেছিলে। তাইসিরুল

যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন এবং তোমরা প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দিবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে। মুজিবুর রহমান

On the Day He will call you and you will respond with praise of Him and think that you had not remained [in the world] except for a little." Sahih International

৫২. যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন, এবং তোমরা তার প্রশংসার সাথে তার ডাকে সাড়া দেবে(১) এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে।(২)

১. আয়াতের অর্থ এই যে, হাশরের ময়দানে যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে, তখন তোমরা সবাই ঐ আওয়ায অনুসরণ করে একত্রিত হয়ে যাবে। ময়দানে আসার সময় তোমরা সবাই আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে উপস্থিত হবে। আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে জানা যায় যে, তখন মুমিন ও কাফের সবারই এই অবস্থা হবে। কিন্তু ইবন আব্বাস বলেন, এখানে হামদ দ্বারা তাঁর নির্দেশ ও ইচ্ছার অনুগত হয়ে যাওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। কাতাদা বলেন, এর অর্থ তোমরা তাঁর পরিচয় জানতে পারবে এবং আনুগত্য করে তাঁর ডাকে সাড়া দিবে।

কোন কোন তফসীরবিদ বলে, এর অর্থ হচ্ছে, আর তাঁর জন্যই যাবতীয় হামদ ও স্তুতি সর্বাবস্থায়। [ইবন কাসীর] কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হাশরের ময়দানে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে হবে এবং প্রত্যেক অবস্থানস্থলে মানুষের অবস্থা বিভিন্নরূপ হবে। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ হাশরে পুনরুত্থানের শুরু হামদ দ্বারা হবে। সবাই হামদ করতে করতে উত্থিত হবে এবং সব ব্যাপারে সমাপ্তিও হামদের মাধ্যমে হবে। যেমন- বলা হয়েছে, “আর তাদের (হাশরবাসীদের) ফয়সালা হক অনুযায়ী করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যে।” [সূরা আয-যুমারঃ ৭৫]

২. অর্থাৎ দুনিয়ায় মৃত্যুকাল থেকে নিয়ে কিয়ামতের দিনে উত্থান পর্যন্তকার সময়কালটা মাত্র কয়েক ঘন্টার বেশী বলে মনে হবে না। তোমরা তখন মনে করবে, আমরা সামান্য একটু সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তার মধ্যে হঠাৎ এ কিয়ামতের শোরগোল আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে। কুরআন তাদের এ সমস্ত কথাবার্তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। কোথাও বলেছে, “যেদিন তারা তা দেখতে পাবে সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে!” [সূরা আন নাযি’আতঃ ৪৬]

আবার বলা হয়েছে, “যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং যেদিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব। সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবে, “তোমরা মাত্র দশদিন অবস্থান করেছিলে।” [সূরা ত্বা-হাঃ ১০২–১০৪] আরো বলা হয়েছে, “যেদিন কিয়ামত হবে সেদিন অপরাধীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহুর্তকালের বেশী অবস্থান করেনি। এভাবেই তারা সত্যভ্ৰষ্ট হত।” [সূরা আর-রূমঃ ৫৫] আবার কোথাও বলা হয়েছে, “আল্লাহ্ বলবেন, তোমরা একদিন বা দিনের কিছু অংশ; আপনি না হয়, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।” তিনি বলবেন, “তোমরা অল্প কালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে! [সূরা আল-মুমিনূনঃ ১১২–১১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন[1] এবং তোমরা প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দিবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে?’ [2]

[1] ‘আহবান করবেন’ এর অর্থ, কবর থেকে জীবিত করে তাঁর সমীপে উপস্থিত করবেন। তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে তাঁর আজ্ঞা পালন করবে অথবা তাঁকে তোমরা চিনে নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে যাবে।

[2] সেখানে দুনিয়ার এই জীবন-কাল অতি অল্প মনে হবে। كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا ‘‘যেদিন তারা কিয়ামত দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছিল।’’ (সূরা নাযিআতঃ ৪৬) এই বিষয়কে অন্যান্য আয়াতেও বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা ত্বহার ১০২-১০৪ নং, সূরা রূমের ৫৫নং এবং সূরা মু’মিনূনের ১১২-১১৪নং আয়াতে। কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রথমবার ফুঁ মারা হবে, তখন সমস্ত মৃত কবরসমূহে জীবিত হয়ে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয় ফুঁ মারা হলে, হিসাব-নিকাশের জন্য হাশরের মাঠে একত্রিত হয়ে যাবে। উভয় ফুঁকের মধ্যে চল্লিশ বছরের ব্যবধান হবে। আর এই দিনগুলোতে তাদেরকে আযাব দেওয়া হবে না। তখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে। দ্বিতীয় ফুঁকে উঠে বলবে, ‘‘হায় আমাদের দুর্ভোগ, কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল? (সূরা ইয়াসীনঃ ৫২) (ফাতহুল কাদীর) তবে প্রথম কথাটিই বেশী সঠিক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান