৫৮৯৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৯৩-[২৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর জাদু করা হয়। ফলে তাঁর অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তার ধারণা হত তিনি কোন একটি কাজ করেছেন অথচ তা তিনি করেননি। এ অবস্থায় একদিন তিনি (সা.) আমার কাছে ছিলেন এবং আল্লাহর নিকট বার বার দু’আ করলেন। অতঃপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কি অবগত হয়েছ, আমি যা জানতে চেয়েছিলাম আল্লাহ তা’আলা আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আমার কাছে দু’জন লোক (মানব আকৃতিতে দু’জন ফেরেশতা) আসে। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন আমার পায়ের কাছে বসে পড়ল। এরপর তাদের একজন আপন সাথিকে বলল, এ লোকের অসুখটা কি? বলল, তার ওপর জাদু করা হয়েছে। প্রথমজন জিজ্ঞেস করল, কে তাকে জাদু করেছে? সে উত্তর দিল, ইয়াহুদী লাবীদ ইবনু আসাম। প্রথম লোক প্রশ্ন করল, তা কিসের সাহায্যে (করা হয়েছে?) দ্বিতীয় লোকটি বলল, চিরুনি এবং চিরুনিতে ঝরে পড়া চুলের মধ্যে এবং পুরুষ খেজুর গাছের নতুন খোলের মধ্যে। [’আয়িশাহ (রা.) বলেন,] অতঃপর নবী (সা.) তাঁর কিছু সাহাবীসহ সে কূপের কাছে গেলেন। এরপর বললেন, এটাই সেই কূপ যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। তার পানি মেহেদি নিংড়ানো। আর কূপের আশপাশের খেজুর গাছগুলোর মাথা যেন শয়তানের মাথার মতো। অতঃপর তা কূপ হতে বের করে ফেলেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سُحِرَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِنَّهُ لَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ فَعَلَ الشَّيْءَ وَمَا فَعَلَهُ حَتَّى إِذا كَانَ ذَات يَوْم وَهُوَ عِنْدِي دَعَا اللَّهَ وَدَعَاهُ ثُمَّ قَالَ أَشَعَرْتِ يَا عَائِشَةُ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَفْتَانِي فِيمَا استفتيته جَاءَنِي رجلَانِ فَجَلَسَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي وَالْآخَرُ عِنْدَ رِجْلِي ثُمَّ قَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ مَا وَجَعُ الرَّجُلِ قَالَ مَطْبُوبٌ قَالَ وَمَنْ طَبَّهُ قَالَ لَبِيدُ بْنُ الْأَعْصَمِ الْيَهُودِيُّ قَالَ فِي مَاذَا قَالَ فِي مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ وَجُفِّ طَلْعَةِ ذَكَرٍ قَالَ فَأَيْنَ هُوَ قَالَ فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ فَذَهَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُنَاسٍ مِنْ أَصْحَابِهِ إِلَى الْبِئْرِ فَقَالَ هَذِهِ الْبِئْرُ الَّتِي أُريتها وَكَأن ماءَها نُقاعةُ الْحِنَّاء ولكأن نخلها رُءُوس الشَّيَاطِين فاستخرجه مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3268) و مسلم (43 / 2189)، (5703) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عاىشة قالت سحر رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى انه ليخيل اليه انه فعل الشيء وما فعله حتى اذا كان ذات يوم وهو عندي دعا الله ودعاه ثم قال اشعرت يا عاىشة ان الله قد افتاني فيما استفتيته جاءني رجلان فجلس احدهما عند راسي والاخر عند رجلي ثم قال احدهما لصاحبه ما وجع الرجل قال مطبوب قال ومن طبه قال لبيد بن الاعصم اليهودي قال في ماذا قال في مشط ومشاطة وجف طلعة ذكر قال فاين هو قال في بىر ذروان فذهب النبي صلى الله عليه وسلم في اناس من اصحابه الى البىر فقال هذه البىر التي اريتها وكان ماءها نقاعة الحناء ولكان نخلها رءوس الشياطين فاستخرجه متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3268) و مسلم (43 / 2189)، (5703) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জাদু করার কারণে তাঁর কাছে কোন কাজ করা না করা নিয়ে সন্দেহ হত। কোন সময় তিনি কোন কাজ না করেই মনে করতেন যে, তিনি তা করেছেন। এটি ছিল শুধুমাত্র তাঁর জাদুকালীন সময়ে। আর তা হয়েছিল রাসূল (সা.) -এর দুনিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে। দীন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে হয়নি। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (সা.) -কে জাদু করার বিষয়টি কেউ কেউ অস্বীকার করে এই যুক্তি দিয়ে যে, এটি তার নুবুওয়্যাতের পরিপন্থী এবং তার মর্যাদার হানী। কিন্তু এ যুক্তিটি একেবারেই বাতিল। কারণ রাসূল (সা.) -কে জাদু করার ঘটনাটি অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এতে সন্দেহ করার কিছু নেই। আর জাদু করার বিষয়টি দুনিয়া সংক্রান্ত। এর সাথে নুবুওয়্যাতের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ নুবুওয়্যাত সংক্রান্ত বিষয়গুলো আল্লাহ বিশেষভাবে হিফাযাত করেছেন।
উক্ত ঘটনা থেকে এটিও প্রমাণিত হয় যে, তিনি ছিলেন আমাদের মতোই মাটির মানুষ। এজন্যই তার মাঝে জাদু কাজ করেছে।
কেউ কেউ বলেন, জাদুকালীন সময়ে তাঁর অনেক কিছুই ধারণা হত। কিন্তু তিনি সেগুলোকে সঠিক হিসেবে বিশ্বাস করতেন না। বরং তিনি কেবল সঠিক বিষয়কেই সঠিক বলে বিশ্বাস করতেন।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এটিও হতে পারে যে, তিনি দুনিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু দীনের বিষয় হলে তিনি সতর্ক করে সঠিক বিষয়টিই বর্ণনা করতেন।
কেউ কেউ আরো বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) শারীরিক প্রফুল্লতার কারণে মনে করতেন যে, তিনি এখন সহবাস করতে সক্ষম। কিন্তু যখন স্ত্রীর নিকটবর্তী হতেন তখন তার মাঝে জাদুর প্রভাব কাজ করত। আর তিনি তাতে সক্ষম হতেন না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (সা.) যেসব বিষয়ে ধারণা করতেন সেগুলো হত তাঁর চোখের দেখায়। কিন্তু আকল বা জ্ঞানের মাঝে এর কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। অতএব এটা রাসূল (সা.) -এর দায়িত্বের মাঝে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
(دَعَا اللَّهَ وَدَعَاهُ) অর্থাৎ তিনি আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন এবং দু'আ করেই চললেন। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কোন কষ্টকর বিষয় এসে পড়লে সেখান থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করা এবং ভালো অবস্থানের জন্য প্রার্থনা করা মুস্তাহাব।
(قَالَ فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ) অর্থাৎ তিনি বললেন, তা আছে যারওয়ান কূপে। তবে সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় কূপের নামটি যি-আরোয়ান নামে উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি নামই প্রসিদ্ধ। তবে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) যি-আরোয়ান নামটিকেই বেশি সঠিক বলেছেন। আর এটি হলো মদীনায় অবস্থিত আবূ যুরায়ক নামক এক ব্যক্তির বাগানের কূপ।
(ولكأن نخلها رُءُوس الشَّيَاطِين) অর্থাৎ যেন তার খেজুরের গাছটি শয়তানের মাথার মতো। এখানে এই উপমার মাধ্যমে উক্ত গাছের বিদঘুটে আকৃতির কথা বুঝানো হয়েছে। তাছাড়াও আরবদের মাঝে এটি প্রচলিত ছিল যে, অপ্রীতিকর কোন বিদঘুটে দৃশ্যকে তারা শয়তানের মাথা বলে আখ্যায়িত করত।
আবার কেউ কেউ বলেন, বুঝানো হয়েছে বিষাক্ত ডোরাকাটা সম্পর্কে। সর্বোপরি কথা হলো, গাছটির দৃশ্য ছিল বড়ই অপ্রীতিকর। তাই সেটিকে শয়তানের মাথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক ইয়াহূদী নবী (সা.)-কে বেজোড় সংখ্যক তথা এগারোটি গিট দিয়ে জাদু করে এবং তা কূপে ফেলে দেয়। এতে নবী (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)