৫৭৫২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫২-[১৪] ’আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল আস (রাঃ) -এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে বললাম, তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যে গুণ বর্ণিত আছে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন: হ্যা, আল্লাহর শপথ! কুরআনে বর্ণিত তাঁর কিছু গুণাবলিসহ তাওরাতে তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে- “হে নবী! আমি তোমাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী হিসেবে এবং উম্মতের রক্ষাকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম দিয়েছি মুতাওয়াক্কিল বা ভরসাকারী, তুমি রূঢ় বা কঠোর হৃদয় এবং বাজারে তর্ককারী ও হৈ-হুল্লোড়কারী নও। তিনি কোন মন্দ দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করবেন না, বরং তিনি এদেরকে মার্জনা করে দেবেন এবং মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে ততদিন পর্যন্ত দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেবেন না, বক্রপথে চালিত জাতিকে যতদিন সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত করবেন না তাঁর দ্বারা। অর্থাৎ যতক্ষণ লোকজন লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ এর উপর বিশ্বাসী না হয় এবং তার দ্বারা অন্ধ চোখ, বধির কান এবং বদ্ধ অন্তর উন্মুক্ত না হয়ে যায়। (বুখারী)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: لَقِيتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قُلْتُ: أَخْبِرْنِي عَنْ صِفَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي التَّوْرَاةِ قَالَ: أَجَلْ وَاللَّهِ إِنَّهُ لموصوف بِبَعْض صفتِه فِي القرآنِ: (يَا أيُّها النبيُّ إِنَّا أرسلناكَ شَاهدا ومُبشِّراً وَنَذِيرا) وحِرْزا للاُمِّيّينَ أَنْت بعدِي وَرَسُولِي سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ وَلَنْ يَقْبِضَهُ اللَّهُ حَتَّى يُقِيمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ بِأَنْ يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيَفْتَحُ بِهَا أَعْيُنًا عُمْيًا وَآذَانًا صُمًّا وَقُلُوبًا غُلْفًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (2125) ۔
(صَحِيح)

وعن عطاء بن يسار قال لقيت عبد الله بن عمرو بن العاص قلت اخبرني عن صفة رسول الله صلى الله عليه وسلم في التوراة قال اجل والله انه لموصوف ببعض صفته في القران يا ايها النبي انا ارسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا وحرزا للاميين انت بعدي ورسولي سميتك المتوكل ليس بفظ ولا غليظ ولا سخاب في الاسواق ولا يدفع بالسيىة السيىة ولكن يعفو ويغفر ولن يقبضه الله حتى يقيم به الملة العوجاء بان يقولوا لا اله الا الله ويفتح بها اعينا عميا واذانا صما وقلوبا غلفا رواه البخاريرواہ البخاری 2125 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (وَاللَّهِ إِنَّهُ لموصوف بِبَعْض صفتِه فِي القرآنِ) অর্থাৎ কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এগুলোর কিছু কিছু তাওরাতেও রয়েছে। যেমন তাওরাতে রয়েছে (يَا أيُّها النبيُّ إِنَّا أرسلناكَ شَاهدا ومُبشِّراً وَنَذِيرا) “হে নবী। আমি আপনাকে সাক্ষী ও সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।”
এভাবে কুরআনে রয়েছে- (یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا) “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি”- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪৫)।
অর্থাৎ উম্মতের ওপর সাক্ষী, আনুগত্যশীলদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এবং অবাধ্যদের জন্য জাহান্নামের সতর্ককারী।
এভাবে তাওরাতে তার আরো যে গুণ বলা হয়েছে:
(وحِرْزا للاُمِّيّينَ) “উম্মীদের রক্ষাকবচ ও আশ্রয়স্থল।” তাঁর উম্মতের অধিকাংশ নিরক্ষরতার দরুন এ গুণটির উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তিনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় তাদের রক্ষাকবচের মতো গুণটির উল্লেখ কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে- (وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُعَذِّبَهُمۡ وَ اَنۡتَ فِیۡهِمۡ) “অথচ আল্লাহ কখনোই তাদের ওপর ‘আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন।” (সূরা আল আনফাল ৮ : ৩৩)
(أَنْت بعدِي وَرَسُولِي) “তুমি আমার বান্দা ও রাসূল” রাসূলের এই দুই বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসেছে। যেমন- (هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی) “তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে।” এ আয়াতটি সূরাহ্ তাওবাহ্ ৩৩, সূরাহ্ ফাতহ: ২৮, সূরাহ্ সফ: ৯-এ রয়েছে।
(سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ) “আমি তোমার নাম মুতাওয়াক্কিল রেখেছি।” মুতাওয়াক্কিল অর্থ: ভরসাকারী। রাসূলকে আল্লাহ তা'আলার ওপর ভরসার নির্দেশ বিভিন্ন আয়াতে দেয়া হয়েছে। যেমন- (وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ) “তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা করো।” এটি রয়েছে- সূরাহ্ নিসা: ৮১, সূরা আনফাল: ৬১, সূরাহ্ আহযাব: ৩ ও ৪৮ নম্বর আয়াতে। এভাবে বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন শব্দে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ) “তিনি রাগী ও কঠিন নন।” এই মর্মে কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে
(فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنۡتَ لَهُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ) “আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।” (সূরা আ-লি ইমরান ৩ : ১৫৯)।
(وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ) “তিনি বাজারে শোরগোলকারী নন।” অর্থাৎ বাজার শোরগোলের জায়গা হওয়ার পরও তিনি বা তার সাহাবীরা শোরগোলে লিপ্ত হন না। বরং বাজারের শোরগোল তাদেরকে আল্লাহ তা'আলার স্মরণ থেকে সরাতে পারে না। এই মর্ম কুরআনে যেভাবে এসেছে
(رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ) “তারা এমন কতিপয় লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করতে পারে না।” (সূরা আন্ নূর ২৪: ৩৭)
(وَلَا يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ) “মন্দ দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করেন না,” কুরআনে এই দিক-নির্দেশ যেভাবে এসেছে- (جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ) “আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। তবে যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে”- (সূরা আরশ শূরা ৪২ : ৪০)।
অন্যত্র রয়েছে- (اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ) “মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম।” (সূরা আল মু'মিনূন ২৩: ৯৬)
(وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ) “তিনি ক্ষমা করেন, ক্ষমার দু'আ করেন।” অর্থাৎ যে দোষ করে তাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন এবং তার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে (فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اصۡفَحۡ) “অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন”- (সূরাহ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩)। অন্যত্র রয়েছে- (فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ) “আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ১৫৯)।
(حَتَّى يُقِيمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ) “যতক্ষণ না বক্র জাতিকে সংশোধন করেছেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর মাধ্যমে তাদের বক্রতা সংশোধন করার পরই তাকে ওফাত দিবেন। কাফিরদেরকে তিরস্কার করে তাদের বক্রতা কুরআনে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে –
(الَّذِیۡنَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ یَبۡغُوۡنَهَا عِوَجًا ۚ وَ هُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ کٰفِرُوۡنَ) “যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত, তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ৪৫)
এই মর্মে কুরআনের কয়েক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। অপরদিকে ইসলামের প্রশংসা করে কুরআনে বলা হয়েছে-
(ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ) “এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে- (وَ اِنَّکَ لَتَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ) “নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা আরশ শূরা- ৪২: ৫২)
(بِأَنْ يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) বাক্যটির সম্পর্ক (حَتَّى يُقِيمَ بِهِ) এর সাথে। অর্থাৎ তাদের সংশোধনী ও সঠিক পথ প্রদর্শন এই কালিমাহ্ বলার মাধ্যমে। এতে ইঙ্গিত হলো রাসূল (সা.) -এর মূল কাজ তাওহীদ বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্ধ চক্ষু, বধির কান, বন্ধ হৃদয় খুলে দিবেন বলে তাওরাতে রয়েছে। এগুলো কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। কুরআনে বলা হয়েছে-
(صُمٌّۢ بُکۡمٌ عُمۡیٌ فَهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ) “তারা বধির, মুক এবং অন্ধ; অতএব তারা কিছুই বুঝে না” (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৭১)। এসব নিরক্ষরকে হিদায়াত প্রদর্শন করা রাসূল (সা.) -এর কাজ বলে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন –
(هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ) “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত।” (সূরা আল জুমু'আহ্ ৬২ : ২)
এভাবে কুরআনে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তাওরাতের মধ্যে পাওয়া যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আতা ইবনু ইয়াসার (রহ.)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)