পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সাহাবীগণ বললেন) হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? তিনি (সা.) বললেন, দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের মধ্যে পরস্পরের বাধা সৃষ্টি হয়? তারা বললেন, না। তিনি (সা.) আরো বললেন, পূর্ণিমার রাত্রে মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন প্রকারের অসুবিধা হয়? তারা বললেন, না।
অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! এ দু’টির কোন একটিকে দেখতে তোমাদের যে পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেদিন তোমাদের প্রভুকে দেখতে সে পরিমাণ অসুবিধা হবে না। এরপর তিনি (সা.) বলেছেন, তখন আল্লাহ তা’আলা কোন এক বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি? আমি কি তোমাকে নেতৃত্ব দান করিনি? আমি কি তোমাকে স্ত্রী দান করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে বশবর্তী করে দেইনি? আমি কি তোমাকে এ সুযোগ দেইনি যে, তুমি নিজ গোত্রের নেতৃত্ব দিবে এবং তাদের নিকট থেকে এক-চতুর্থাংশ সম্পদ ভোগ করবে?
জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, (হে আমার পরোয়ারদিগার!) অতঃপর রাসূল (সা.) বলেন, বান্দাকে তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে? তোমার কি এ ধারণা ছিল? বান্দা বলবে, না। এবার আল্লাহ বলবেন, (দুনিয়াতে) তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে রয়েছিলে, আজ আমিও অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করবেন, সেও অনুরূপ বলবে। তারপর তৃতীয় এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকেও অনুরূপ কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, হে প্রভু! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ঈমান রেখেছি, সালাত আদায় করেছি, সিয়াম রেখেছি এবং দান-সদাক্বাহ্ করেছি। মোটকথা সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বললে, এখন এখানেই দাঁড়াও, এক্ষুণি তোমার সাক্ষী উপস্থিত করছি। এ কথা শুনে বান্দা মনে মনে চিন্তা করবে, কে আছে এমন যে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং তার উরুকে বলা হবে, তুমি বল, তখন তার উরু, হাড় মাংস প্রভৃতি এক একটি করে বলে ফেলবে, তারা যা যা করেছিল। তার মুখে মোহর লাগিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে এজন্য সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে যেন সে বান্দা কোন ওযর-আপত্তি পেশ করতে না পারে। মূলত যে বান্দার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সে হলো মুনাফিক এবং এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অত্যন্ত রাগান্বিত হবেন। (মুসলিম)
আর আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (يَدْ خُلُ مِنْ أُمَّتِي الْجَنَّةَ) আমার উম্মত থেকে জান্নাতে প্রবেশ করবে; “তাওয়াক্কুলের অধ্যায়ে” ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
الفصل الاول (باب الحساب و القصاص و المیزان )
وَعَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبنَا يَوْم الْقِيَامَة؟ قَالَ: «فَهَل تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِي الظَّهِيرَةِ لَيْسَتْ فِي سَحَابَةٍ؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رؤيةالقمر لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا» . قَالَ: فَيَلْقَى الْعَبْدَ فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ: أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ؟ فَيَقُولُ بَلَى قَالَ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ لَا فَيَقُولُ: فَإِنِّي قَدْ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِيَ فَذَكَرَ مِثْلَهُ ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ فَيَقُولُ لَهُ مثل ذَلِك فَيَقُول يارب آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ ويثني بِخَير مااستطاع فَيَقُول: هَهُنَا إِذا. ثمَّ يُقَال الْآن تبْعَث شَاهِدًا عَلَيْكَ وَيَتَفَكَّرُ فِي نَفْسِهِ: مَنْ ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَيَّ؟ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ: انْطِقِي فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ يسخطُ اللَّهُ عَلَيْهِ رَوَاهُ مُسلم وذُكر حَدِيث أبي: «يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي الْجَنَّةَ» فِي «بَابِ التَّوَكُّلِ» بِرِوَايَة ابْن عَبَّاس
رواہ مسلم (16 / 2968)، (7438) 0 حدیث ’’ یدخل من امتی الجنۃ ‘‘ تقدم (5295) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (هَلْ تُضَارُّونَ) এর অর্থ হলো এতে কি তোমাদের কোন ভিড় হয় যাতে কেউ তোমাদের কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্দেশ্য হলো শ্রোতাকে স্বীকৃতি দানের উপর উদ্বুদ্ধ করা। (ظَهِيرَةِ) বলা হয় মধ্য দিবসকে যখন সূর্য উপরে থাকে ও কিরণ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর প্রকাশ্য অর্থ হলো, তোমাদের প্রতিপালককে দর্শন করতে তোমাদের পরস্পরের কোন কষ্ট হবে না। যেমন চন্দ্র বা সূর্যের কোনটিকে দেখতে তোমাদের পরস্পরের কষ্ট হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর (مَعَالِم السُّنَن) গ্রন্থে বলেন, (الضَّرَرِ) বলা হয় কোন বস্তু নিয়ে মতানৈক্যের সময় দু’জনের বিতর্ক করা। একজন এটা নিয়ে বিতর্ক করে, অন্যজন আরেকটা নিয়ে মতভেদ করে। তখন বলা হয় – (قَدْ وَقَعَ الضِّرَار بَيْنهمَا) তাদের উভয়ের মাঝে মতানৈক্য বা মতভেদ হয়েছে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (كَمَا تُضَارُّونَ) অর্থাৎ তোমরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে না। অতএব আল্লাহর দিদার লাভের ক্ষেত্রে কখনো তোমরা সন্দেহ করবে না। ('আওনুল মা'বুদ ৮ম খণ্ড, হা, ৪৭১৭)
(لَيْلَةَ الْبَدْرِ) পূর্ণিমার রাত্রিকে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তখন চাঁদ সর্বাধিক পরিমাণে আলোময় হয়। (তুহফাতুল আওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৫৪৯)
এ উপমা হলো আল্লাহ তা'আলাকে দেখার সাথে আল্লাহ তা'আলার সত্তার সাথে নয়। কারণ সূর্য ও চন্দ্র হলো আল্লাহর সৃষ্টি। আর সৃষ্টিজীব কক্ষনো আল্লাহর মতো হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, কোন জিনিস তাঁর মতো নয়। উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা'আলার দীদার কোন কঠিন বিষয় নয়। এ হাদীস থেকে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলার পূর্ণ দীদার স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর এটাই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের মত। বিদ্বানদের মত ও অধিকাংশ উম্মাতের নিকট আখিরাতে দীদারে ইলাহী প্রমাণিত বিষয়। আর খারিজী, মু'তাযিলা ও মুর্জিয়াদের কেউ কেউ এটাকে অস্বীকার করে। (ফাতহুল বারী সংক্ষিপ্ত; মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৯৩ পৃ.)