পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাগ ও অহংকার
৫১০৯-[৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার মানুষ আছে, কিয়ামতের দিন যাদের সাথে আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবেন না। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আর তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন। তারা হচ্ছে- বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী গরীব। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَضَبِ وَالْكِبَرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ) অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে সন্তুষ্ট মনে কথা বলবেন না বা মোটেই কথা বলবেন না।
(وَلَا يُزَكِّيهِمْ) অর্থাৎ তাদেরকে তাদের কৃত পাপ থেকে পবিত্রও করবেন না এবং অন্যান্য মু’মিনদের সামনে তাদের গুণগানও গাইবেন না।
(شَيْخٌ زَانٍ) এ পর্যায়ের ব্যক্তির ওপর অভিসম্পাতের কারণ হলো ব্যভিচার করা এমনিতেই অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। উপরন্তু কোন যুবক দ্বারা সংগঠিত হলে স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যুবক হওয়ার কারণে ওযর বা কৈফিয়ত থাকে কিন্তু যদি এটা কোন বৃদ্ধের দ্বারা সংগঠিত হয় তখন এটা মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ওযর থাকে না। কারণ ইতিপূর্বে যৌবনে তার চাহিদা পূরণ হয়েছে। এ অবস্থায় তার দ্বারা এমন কাজ হওয়ার বিকৃত রুচি এবং নেহায়াত কুৎসিত চরিত্রের অধিকারী হিসেবেই প্রমাণ করে। যেহেতু এটা সমাজ সংসারে এবং সভ্য বিবেকে মনুষ্যত্বের পরিপন্থী কাজ, তাই এটা আল্লাহর কাছেও অতি ঘৃণিত অপরাধ।
(وَمَلِكٌ كَذَّابٌ) অর্থাৎ অত্যধিক পরিমাণে মিথ্যার আশ্রয়গ্রহণকারী বাদশা (শাসক)। (وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ) অর্থাৎ- দরিদ্র হয়েও অহংকার পোষণকারী ব্যক্তি। এ ধরনের লোক অভিশপ্ত হওয়ার কারণ হলো অহংকার করার যোগ্যতা তার মধ্যে নেই। যে সমস্ত উপকরণ হাতে থাকলে অহংকার চলে আসে, যেমন- অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, শিক্ষা-দীক্ষা, মান-সম্মান ইত্যাদি এগুলোর কোন কিছুই তার কাছে নেই যা তাকে অহংকারী হতে সহায়তা করে, তারপরও সে অহংকার করে। এটা স্বয়ং আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই এটাও জঘন্য অপরাধ। বলা হয়েছে (عَائِلٌ) অর্থ হলো ذو العيال তথা সংসারী লোক। তার অহংকার হলো এ রকম যে, হাতে অর্থ নেই, আবার কেউ সাদাকা করলে তা নিবেও না, অন্তরে এক রকম হিংসাও কাজ করে, ফলে পরিবার অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যিনা হলো স্বাভাবিক অবস্থায় জঘন্য অপরাধ কিন্তু এটা যদি কোন বৃদ্ধ লোকের কাজ হয় তবে এটা অত্যন্ত জঘন্য হয়। অনুরূপ মিথ্যা কুৎসিত তবে এটা বাদশার কাছ থেকে হলে অত্যন্ত কুৎসিত হয়। অনুরূপভাবে অহংকার ঘৃণিত কাজ আর যদি এটা ফাকীরের কাছ থেকে হয় তবে তার জঘন্যের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
মোটকথা, আমরা এভাবে বলতে পারি যে, الشَيْخٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিবাহিত লোক, চাই সে যুবক হোক বা বৃদ্ধ হোক। শারী‘আতের দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত জঘন্য, তাই তার জন্য রজমের শাস্তি আবশ্যক।
আর المَلِكٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধনী-সম্পদশালী লোক। কেননা ফাকীর দুনিয়াবী প্রয়োজনের উপকার লাভের আশায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ফায়দা লাভ করে, পক্ষান্তরে ধনী লোকের দ্বারা এমনটির প্রয়োজন হয় না। এজন্য ধনী লোকের দ্বারা এমনটি হলে সেটা অত্যন্ত জঘন্য হিসেবে গণ্য হয়।
আর (عَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ ফাকীর লোক, যে অন্যান্য ফাকীরদের ওপর অহংকার করে, সে শক্তি সামর্থ্য থাকার পরও পরিশ্রম করেও অর্থ উপার্জন করতে চায় না। আত্মঅহংকারে ঘরে বসে থাকে। কোন সন্দেহ নেই যে, এ অবস্থায় সে নিজে এবং পরিবারের সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ১০৭/১৭২; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৯৫)