পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাগ ও অহংকার
৫১০৮-[৫] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে এক বিন্দু অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! সকলেই তো এটা পছন্দ করে যে, তার পোশাক ভালো হোক, জুতো জোড়া ভালো হোক, এসব কি অহংকারের মধ্যে শামিল? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা নিজেও সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দও করেন। আর অহংকার হলো হককে বাতিল করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَضَبِ وَالْكِبَرِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنَ كِبْرٍ» . فَقَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنًا. قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ. الْكِبَرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاس» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِه مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنَ كِبْرٍ) অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় কোন একজন হাদীস বিশারদ উল্লেখ করেছেন যে, এ ধরনের ব্যক্তি চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতেও এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
يخرج من النار من كان فى قلبه مثقال ذرة من إيمان
অর্থাৎ ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’’
অনুরূপভাবে একাধিক তাবি‘ঈ নিমেণাক্ত আয়াতটিকে তাফসীর করে বলেছেন,
رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَه
‘‘আল্লাহ আপনি যাকে জাহান্নামে চিরস্থায়ী বাসিন্দা বানিয়েছেন আপনি তাকে অতি লাঞ্ছিত করেছেন...’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৯২)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৯)
(فَقَالَ رَجُلٌ) ইমাম নাবাবী শারহু মুসলিমে উল্লেখ করেছেন লোকটির নাম হলো মালিক ইবনু মুযারা আর্ রহওয়াই।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে কয়েকজন হতে পারে, তারা হলেন- ১. মু‘আয ইবনু জাবাল ২. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস এবং ৩. রবী‘আহ্ ইবনু ‘আমির।
إِنَّهٗ يُعْجِبُنِي أَنْ يَكُونَ ثَوْبِي حَسَنًا ونعلي حسنا অর্থাৎ মানুষের নজরকাড়া বা দৃষ্টি আকর্ষণ করার মানসিকতাও আমার নেই অহংকার বা দম্ভভরে চলাফেরা করা এবং মানুষের প্রশংসা বা বাহবা শুনার কোনরূপ ইচ্ছাও আমার নেই।
(إِنَّ اللهَ تَعَالٰى جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ) অর্থাৎ- আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা পরিপূর্ণ গুণাবলীর অধিকারী এবং উত্তম কার্য সম্পাদনকারী। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ আলো এবং সৌন্দর্য উদ্দেশ্য। আবার বলা হয়েছে, তোমাদের সাথে উত্তম আচরণকারী এবং তোমাদের ওপর সুদৃষ্টিদানকারী।
ইমাম মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বাগত সৌন্দর্য, গুণগত এবং কর্মগত সৌন্দর্য বুঝায়। আর يُحِبُّ الْجَمَالَ দ্বারা তোমাদের অবস্থাগত সৌন্দর্য (পরিষ্কার-পরিছন্নমূলক) এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে নিজেকে পবিত্র রাখাকে বুঝায়।
(الْكِبَرُ بَطَرُ الْحَقِّ) অর্থাৎ অহংকার হলো সত্যের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে কলংকিত করা। আর (وَغَمْطُ النَّاس) এর অর্থ হলো সৃষ্টিজীবকে হেয় প্রতিপন্ন করে ঘৃণার চোখে দেখা। (بَطَرُ) শব্দের মূল অর্থ হলো অত্যধিক পরিমাণে হাসি তামাশায় দিন যাপন করা। এখানে উদ্দেশ্য হলো অর্থের প্রাচুর্যে নোংরা হয়ে যাওয়া। আবার বলা হয়েছে, নি‘আমাতে ডুবে থেকে আল্লাহর সীমালঙ্ঘন করা। উল্লেখিত অর্থ দু’টি পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মোটকথা (بَطَرُ الْحَقِّ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ, রিসালাহ্, ‘ইবাদাত ইত্যাদি বিষয়সমূহের মধ্যে যা হক হিসেবে গণ্য করেছেন সেগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উক্ত হাদীসাংশের ব্যাখ্যা হলো সত্যকে মিথ্যা মনে করে বা অবহেলা করে তা থেকে পিছুটান থাকা। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)