৪০৩৩

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা

৪০৩৩-[৪৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক নবী জিহাদে যাওয়ার প্রাক্কালে গোত্রের লোকেদের উদ্দেশে এ নির্দেশ দিলেন, যে সদ্য বিয়ে করেছে কিন্তু এখনও বাসর শয্যা যাপন করেনি, বরং সে বাসর যাপনের প্রত্যাশী, সে যেন আমার সাথে জিহাদে না যায়। আর ঐ ব্যক্তিও যেন আমার সাথে না যায়, যে ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে, কিন্তু এখনও ছাদ উঠায়নি। আর এমন ব্যক্তিও যাবে না, যে বকরী বা উষ্ট্রী ক্রয় করেছে তার বাচ্চা প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে বের হয়ে যখন (প্রতিপক্ষ) জনপদের নিকটবর্তী হলেন, তখন ’আসর সালাতের সময় হলো অথবা সালাতের সময় প্রায় শেষ হয়ে এলো।

এমতাবস্থায় তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ’তুমি নির্দেশপ্রাপ্ত’ আর ’আমি নির্দেশিত’- এই বলে তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাকে (সূর্যকে) আমাদের জন্য থামিয়ে দাও। অতঃপর আল্লাহর হুকুমে বিজয় লাভ হওয়া পর্যন্ত সূর্যের গতি স্থগিত হয়ে গেল। অতঃপর গনীমাতের মালসমূহ এক জায়গায় স্তূপ করলেন। আর তা জ্বালাবার জন্য আগুন এসেও তাকে গ্রাস করল না। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ খিয়ানাত করেছ। সুতরাং তোমাদের মধ্যকার প্রত্যেক গোত্রের একজন করে আমার সাথে শপথ করতে হবে। ফলে শপথ করতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তির হাত নবীর হাতের সাথে জড়িয়ে গেল। অতঃপর নবী বললেনঃ অবশ্যই তোমার গোত্রের কেউ খিয়ানাত করেছে। পরিশেষে তারা গাভীর মাথার মতো স্বর্ণের একটি মাথা এনে স্তূপের মধ্যে রাখল। আর তখনই আগুন এসে সমস্ত মালগুলো গ্রাস করে ফেলল।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের পূর্বে কোনো উম্মাতের জন্য গনীমাতের মাল ভোগ করা হালাল ছিল না। আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য গনীমাত হালাল করে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখেই আমাদের জন্য তা ভোগ করা হালাল করে দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: غَزَا نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ فَقَالَ لِقَوْمِهِ: لَا يَتْبَعُنِي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَبْنِيَ بِهَا وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا وَلَا أَحَدٌ بَنَى بُيُوتًا وَلَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا وَلَا رَجُلٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ وِلَادَهَا فَغَزَا فَدَنَا مِنَ الْقَرْيَةِ صَلَاةَ الْعَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ فَقَالَ لِلشَّمْسِ: إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَجَمَعَ الْغَنَائِمَ فَجَاءَتْ يَعْنِي النَّارَ لِتَأْكُلَهَا فَلَمْ تَطْعَمْهَا فَقَالَ: إِنَّ فِيكُمْ غُلُولًا فَلْيُبَايِعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ فَلَزِقَتْ يدُ رجلٍ بيدِه فَقَالَ: فيكُم الغُلولُ فجاؤوا بِرَأْسٍ مِثْلِ رَأْسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ فَوَضَعَهَا فَجَاءَتِ النَّارُ فَأَكَلَتْهَا . زَادَ فِي رِوَايَةٍ: «فَلَمْ تَحِلَّ الْغَنَائِمُ لِأَحَدٍ قَبْلَنَا ثُمَّ أَحَلَّ اللَّهُ لَنَا الْغَنَائِمَ رَأَى ضَعْفَنَا وَعَجْزَنَا فَأَحَلَّهَا لَنَا»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: غزا نبي من الانبياء فقال لقومه: لا يتبعني رجل ملك بضع امراة وهو يريد ان يبني بها ولما يبن بها ولا احد بنى بيوتا ولم يرفع سقوفها ولا رجل اشترى غنما او خلفات وهو ينتظر ولادها فغزا فدنا من القرية صلاة العصر او قريبا من ذلك فقال للشمس: انك مامورة وانا مامور اللهم احبسها علينا فحبست حتى فتح الله عليه فجمع الغناىم فجاءت يعني النار لتاكلها فلم تطعمها فقال: ان فيكم غلولا فليبايعني من كل قبيلة رجل فلزقت يد رجل بيده فقال: فيكم الغلول فجاووا براس مثل راس بقرة من الذهب فوضعها فجاءت النار فاكلتها . زاد في رواية: «فلم تحل الغناىم لاحد قبلنا ثم احل الله لنا الغناىم راى ضعفنا وعجزنا فاحلها لنا»

ব্যাখ্যা: যে নাবী এই জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন মূসা (আঃ)-এর খাদিম বা সাথী ইউসা ইবনু নূন।

বাসরহীন নব বিবাহিত, বসতহীন নব ভবন নির্মাতা প্রভৃতি ব্যক্তিদের যুদ্ধে না নেয়ার কারণ তারা স্বতস্ফূর্তভাবে এবং দৃঢ়চিত্তে যুদ্ধ করতে পারবে না, ফলে যে কল্যাণ ছিল তা তিরোহিত হবে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ গুরুত্বপূর্ণ কার্যের দায়িত্বভার দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে মুক্ত দৃঢ় ব্যক্তির হাতেই দেয়া উচিত। যাদের চিত্ত ঘর-বাড়ী ও স্ত্রী-পুত্রের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত তাদের যুদ্ধ চেতনা দুর্বল, তাই তিনি তাদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রদান করেননি।

সূর্যের গতি থেমে যাওয়া একটি অলৌকিক ঘটনা। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যও দু’বার সূর্য থেমে গিয়েছিল।

পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব জাতির জন্য গনীমাতের সম্পদ ব্যবহার বৈধ ছিল না। আকাশ থেকে আগুন এসে ওটা জ্বালিয়ে দিতো। এতে বুঝা যেতো তাদের এটি কবুল হয়েছে। আর যদি ওটা থেকে আত্মসাৎ করা হতো তবে আগুন আসতো না। তখন অনুসন্ধান করে যে নিয়েছে সে নিজে ওটা জমা দিলে অথবা তার নিকট থেকে ফিরিয়ে এনে গনীমাতের অন্যান্য মালের সাথে জমা করলে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৪৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)