পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০৩০-[৪৬] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে (হুনায়ন যুদ্ধের গনীমাত) বণ্টন করছিলেন, আর সেখানে আমি বসা ছিলাম। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে এমন একজনকে (জুআইল-কে) দিলেন না। অথচ আমার অনুমান, সে লোকটিই ছিল তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ও যোগ্য ব্যক্তি। আমি দাঁড়িয়ে বললামঃ (হে আল্লাহর রসূল!) আপনি অমুককে এই মাল থেকে বঞ্চিত করার কারণ কি? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মু’মিন হিসেবেই জানি। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং মুসলিম (বলো)। এভাবে সা’দ কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও তিনবার তাকে অনুরূপ উত্তর দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (শুনো!) আমি অবশ্যই ব্যক্তি বিশেষকে দান করি, যদিও অন্য লোক আমার নিকট অধিক প্রিয় হয়ে থাকে। এ আশঙ্কায় এরূপ করি, যেন আল্লাহ তা’আলা তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ না করে ফেলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
বুখারী ও মুসলিম-এর অপর বর্ণনাতে আছে- ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেছেনঃ আমরা মনে করি ’ইসলাম’ হলো মুখে কালিমাহ্ উচ্চারণের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া, আর ’ঈমান’ হলো নেক ’আমল (বাস্তবায়ন) করা।
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: أَعْطَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَهْطًا وَأَنَا جَالِسٌ فَتَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مِنْهُم رَجُلًا وَهُوَ أَعْجَبُهُمْ إِلَيَّ فَقُمْتُ فَقُلْتُ: مَا لَكَ عَنْ فُلَانٍ؟ وَاللَّهِ إِنِّي لَأُرَاهُ مُؤْمِنًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أوْ مُسلما» ذكرَ سَعْدٌ ثَلَاثًا وَأَجَابَهُ بِمِثْلِ ذَلِكَ ثُمَّ قَالَ: «إِنِّي لَأُعْطِي الرَّجُلَ وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْهُ خَشْيَةَ أَنْ يُكَبَّ فِي النَّارِ عَلَى وَجْهِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: قَالَ الزُّهْرِيُّ: فترى: أَن الْإِسْلَام الْكَلِمَة وَالْإِيمَان الْعَمَل الصَّالح
ব্যাখ্যা: সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস যে সাহাবী সম্পর্কে মু‘মিন হওয়ার সাক্ষ্য দান করেন, তার নাম হলো জুআয়ল ইবনু আমির আয্ যুমায়রী।
ঈমানের সম্পর্ক হবে অন্তরের সাথে আর ইসলামের সম্পর্ক হলো বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর সাথে অর্থাৎ আ‘মাল বিল আরকানের সাথে। কলব বা অন্তরের বিশ্বাস হলো অদৃশ্য বস্তু; এর ‘ইলম একমাত্র আল্লাহর নিকটই রয়েছে। সুতরাং মানুষ সেই বিষয়ে জানতে পারে না এবং তার উপর হুকুমও লাগাতে পারে না। তার বাহ্যিক অবস্থা বা কর্মকা--র ভিত্তিতে মুসলিম বলাই শ্রেয়। পবিত্র কুরআনুল কারীমেও এর ভিত্তি রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান এনেছি বা বিশ্বাস স্থাপন করেছি, (আপনি তাদের) বলুন, তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি; বরং বলো, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি অর্থাৎ বশ্যতা স্বীকার করেছি।’’ (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১৪)
দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো : মু’মিনের সাক্ষ্য দান সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দান করলেন না, তার কারণ হলো যেহেতু তাদের ঈমান মযবুত, সুতরাং তাদের কিছু না দিলেও তারা ঈমান থেকে বিচ্যুত হবে না অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর কোনো অভিযোগ তুলবে না। পক্ষান্তরে যাদের দান করেছেন তাদের অন্তরে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা ও মহববত গাঢ় ও দৃঢ় করার জন্য করেছেন। আর তারা যাতে ঈমান ও ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কুফরীতে ফিরে না যায় বরং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)