পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০২৮-[৪৪] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন সৈনিকদের কাতারে দাঁড়িয়ে আমার ডানে-বামে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দু’জন কমবয়সী আনসার যুবকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমি মনে মনে এ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলামঃ আহা! কতই না উত্তম হত, যদি আমি এ দু’জনের চেয়ে বীর যোদ্ধার মাঝখানে দাঁড়াতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে খোঁচা মেরে বলল, চাচাজান! আপনি কি আবূ জাহালকে চিনেন? আমি বললামঃ হ্যাঁ, চিনি, তবে বৎস! তাকে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমি শুনেছি সে না-কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দেয়। আল্লাহর কসম! আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমাদের মধ্যে (তথা আমার ও আবূ জাহাল-এর মধ্যে) একজনের নির্ধারিত মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত আমরা উভয়ে পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হব না।
’আবদুর রহমান বলেনঃ তার এ কথা শুনে আমি অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হলাম। ঠিক এমনি সময়ে অপর তরুণটিও আমাকে অনুরূপ খোঁচা মেরে একই কথার পুনরাবৃত্তি করল। আমাদের কথা-বার্তা শেষ না হতেই হঠাৎ দেখতে পেলাম আবূ জাহাল লোকেদের মাঝে ঘুরাফেরা করছে। তখন আমি তরুণদেরকে বললামঃ তোমরা উভয়ে যার ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চাচ্ছ, ঐ হলো সে ব্যক্তি। আমার কথা শুনামাত্রই তারা উভয়ে তলোয়ার হাতে দ্রুতবেগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছুটে এসে ঘটনাটি তাঁকে জানাল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছ? তারা উভয়েই বললঃ আমিই তাকে হত্যা করেছি।
এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা! তাকে হত্যা করার পর তোমরা কি স্বীয় তলোয়ার মুছে ফেলেছ? তারা বলল, না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের তলোয়ার দেখে বললেনঃ তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। এই বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোষণা দিলেন, তার (আবূ জাহাল-এর) পরিত্যক্ত মালের অধিকারী হবে মু’আয ইবনু ’আমর ইবনুল জামূহ। এ তরুণদ্বয় ছিলেন মু’আয ইবনু ’আমর ইবনুল জামূহ ও মু’আয ইবনু ’আফরা (রাঃ)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: إِنِّي وَاقِفٌ فِي الصَّفِّ يَوْمَ بَدْرٍ فَنَظَرْتُ عَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي فَإِذَا بِغُلَامَيْنِ مِنَ الْأَنْصَارِ حَدِيثَة أسنانها فتمنيت أَنْ أَكُونَ بَيْنَ أَضْلَعَ مِنْهُمَا فَغَمَزَنِي أَحَدُهُمَا فَقَالَ: يَا عَمِّ هَلْ تَعْرِفُ أَبَا جَهْلٍ؟ قُلْتُ: نَعَمْ فَمَا حَاجَتُكَ إِلَيْهِ يَا ابْنَ أَخِي؟ قَالَ: أُخْبِرْتُ أَنَّهُ يَسُبُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَئِنْ رَأَيْتُهُ لَا يُفَارِقُ سَوَادِي سَوَادَهُ حَتَّى يَمُوتَ الْأَعْجَلُ مِنَّا فَتَعَجَّبْتُ لِذَلِكَ قَالَ: وَغَمَزَنِي الْآخَرُ فَقَالَ لِي مِثْلَهَا فَلَمْ أَنْشَبْ أَنْ نَظَرْتُ إِلَى أَبِي جَهْلٍ يَجُولُ فِي النَّاسِ فَقُلْتُ: أَلَا تَرَيَانِ؟ هَذَا صَاحِبُكُمَا الَّذِي تَسْأَلَانِي عَنْهُ قَالَ: فابتدراه بسيفهما فَضَرَبَاهُ حَتَّى قَتَلَاهُ ثُمَّ انْصَرَفَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأخبراهُ فَقَالَ: «أَيُّكُمَا قَتَلَهُ؟» فَقَالَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: أَنَا قَتله فَقَالَ: «هلْ مسحتُما سيفَيكما؟» فَقَالَا: لَا فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّيْفَيْنِ فَقَالَ: «كِلَاكُمَا قَتَلَهُ» . وَقَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَلَبِهِ لِمُعَاذِ بن عَمْرِو بن الْجَمُوحِ وَالرَّجُلَانِ: مُعَاذُ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْجَمُوحِ ومعاذ بن عفراء
ব্যাখ্যা: আবূ জাহাল-কে হত্যায় তিনজন অংশগ্রহণ করেন। তারা হলেন, মা‘আয ও মু‘আওয়ায এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ জাহাল-এর পরিত্যক্ত সম্পদ মা‘আযকে প্রদান করেন। কেননা তিনিই সর্বাগ্রে আবূ জাহলকে তরবারি মেরে ঘায়েল করেন। পরে মু‘আওয়াযও তার সাথে অংশ নেন, অর্থাৎ তরবারি মারেন। এবং উভয়ে মিলে তাকে ধরাশয়ী করে ফেলেন। কিন্তু তখনও জান বের হয়নি এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ জাহাল-এর খবর কে আনতে পারে? তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ দৌড়ে গিয়ে দেখেন সে অচেতন হয়ে পড়ে আছে, তখনই তিনি লাফ দিয়ে গিয়ে তার বুকের উপর বসে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। তারা দু’জনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাকে হত্যার দাবী করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কেই বলেন, তোমরা দু’জনই হত্যা করেছ। অগ্রগামিতা এবং ভূমিকা একজনের চেয়ে অন্য জনের বেশি হওয়া এবং সাওয়াব কম বেশি সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ তাদের উৎসাহিত করা এবং মনঃতৃপ্তি বা অন্তরে প্রশান্তিদানের জন্য বলেছেন, তোমরা দু’জনই হত্যা করেছ। এরা দু’জন মাতৃশরীক বৈপিত্রেয় ভাই ছিলেন, তাদের মা ছিলেন আফরা, এ জন্য কোনো কোনো সময়, বলা হয় আফরার দুই পুত্র।
এ হাদীস থেকে শিক্ষা হলো বয়সে ছোট এবং শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে নেই, কারণ তার দ্বারাও বড় বড় কাজ সংঘটিত হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)