৩৯৮৩

পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিরাপত্তা (আশ্রয়) প্রদান

৩৯৮৩-[৭] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুৎবায় বললেনঃ তোমরা জাহিলিয়্যাত যুগের সন্ধি বা কসমসমূহ রক্ষা করে চল। কেননা, ইসলাম চুক্তিকে আরো শক্তিশালী করে। আর ইসলাম কবূলের পর নতুন করে কোনো প্রকার চুক্তি করো না। (তিরমিযী)[1]

হাদীসটি হুসায়ন ইবনু যাক্ওয়ান-এর সানাদে ’আমর হতে বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেন, হাদীসটি হাসান।

আর ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি ’’সমগ্র মুসলিমের খুন (প্রাণ) এক সমান’’ কিসাস পর্বে বর্ণিত হয়েছে।

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي خطْبَة: «أَوْفوا بِحلف الْجَاهِلِيَّة فَإِنَّهُ لَا يزِيد يَعْنِي الْإِسْلَامَ إِلَّا شِدَّةً وَلَا تُحْدِثُوا حَلِفًا فِي الإِسلامِ» . رَوَاهُ الترمذيُّ من طريقِ ابنِ ذَكْوَانَ عَنْ عَمْرٍو وَقَالَ: حَسَنٌ
وَذَكَرَ حَدِيثَ عليٍّ: «المسلمونَ تَتَكَافَأ» فِي «كتاب الْقصاص»

وعن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال في خطبة: «اوفوا بحلف الجاهلية فانه لا يزيد يعني الاسلام الا شدة ولا تحدثوا حلفا في الاسلام» . رواه الترمذي من طريق ابن ذكوان عن عمرو وقال: حسن وذكر حديث علي: «المسلمون تتكافا» في «كتاب القصاص»

ব্যাখ্যা: (أَوْفُوْا بِحَلْفِ الْجَاهِلِيَّةِ) জাহিলী যুগে পারস্পারিক সহযোগিতার উপর শপথ চুক্তি বিদ্যমান ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলার ‘‘তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১); এ বাণীর দ্বারা জানা যায়। তবে তা আল্লাহ তা‘আলার অর্থাৎ- ‘‘আর তোমরা পুণ্য ও আল্লাহ ভীরুতার ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালঙ্ঘনতার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ২); এ বাণীর সাথে শর্তযুক্ত। «إِلَّا شِدَّةً» কেননা ইসলাম চুক্তি অপেক্ষাও শক্তিশালী। সুতরাং যে ব্যক্তি শক্তিশালী রক্ষাকারীকে আঁকড়িয়ে ধরবে সে দুর্বল রক্ষাকারী থেকে আলাদা থাকবে, অমুখাপেক্ষী থাকবে।

নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে, حَلْفِ-এর আসল হলো- পরস্পর সহযোগিতা ও একমতের উপর চুক্তি করা। অতঃপর জাহিলী যুগে গোত্রসমূহের মাঝে ফিতনা ও হত্যার উপর যে শপথ ছিল ঐ সম্পর্কে ইসলামে আল্লাহর রসূলের «لَا حَلِفَ فِي الْإِسْلَامِ» অর্থাৎ- ‘‘ইসলামে কোনো শপথ নেই’’ এ বাণীর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।

পক্ষান্তরে জাহিলী যুগে যে শপথ নির্যাতিতকে সাহায্য করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা এবং অনুরূপ ভালো কাজের উপর ছিল। ঐ শপথ সম্পর্কেই আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম «أَيُّمَا حَلِفٍ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ لَمْ يَزِدْهُ الْإِسْلَامُ إِلَّا شِدَّةً» অর্থাৎ- ‘‘জাহিলী যুগে যে শপথ ছিল ইসলাম কেবল তার গুরুত্বকেই বৃদ্ধি করেছে’’ এ বাণী উপস্থাপন করেছেন।

(وَلَا تُحْدِثُوْا حَلِفًا فِى الْإِسْلَامِ) ‘‘নতুন করে কোনো সহযোগিতা চুক্তি করো না’’ অর্থাৎ- কেননা পারস্পারিক সহযোগিতা আবশ্যক হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম যথেষ্ট।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ حَلِفًا শব্দটি অনির্দিষ্ট যা দু’টি দিকের সম্ভাবনা রাখছে, দু’টির একটি শব্দটি দ্বারা জাত বুঝানো উদ্দেশ্য। তখন (لَا تُحْدِثُوْا حَلِفًا) এর অর্থ হবে, তোমরা যে কোনো ধরনের শপথ করবে না। অপর দিকটি হলো- শ্রেণী বুঝানো উদ্দেশ্য।

আমি (মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা) বলবঃ দ্বিতীয় দিকটি স্পষ্ট। আর একে সমর্থন করছে মুযহির-এর উক্তি, অর্থাৎ- তোমরা যদি জাহিলী যুগে কতক কতককে সাহায্য করার এবং কতক কতক থেকে উত্তরাধিকারী হওয়ার শপথ করে থাক, অতঃপর যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে থাক, তাহলে তোমরা তা পূর্ণ করবে। কেননা ইসলাম তোমাদেরকে তা পূর্ণ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে, তবে তোমাদের কতক থেকে উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামে নতুন করে চুক্তি করো না।

ইবনুল হুমাম বলেনঃ যখন কোনো ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে এবং কোনো মহিলা স্বাধীন মহিলাকে অথবা কাফিরকে, অথবা একটি দলকে অথবা দূর্গ বা শহরের অধিবাসীকে নিরাপত্তা দিবে তাদের নিরাপত্তাদান বিশুদ্ধ বলে বিবোচিত হবে। কোনো মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ হবে না। এ ব্যাপারে মূল হলো এ হাদীসটি। একে আবূ দাঊদ সংকলন করেছেন, যা ‘আমর বিন শু‘আয়ব তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ» তথা মুসলিমদের রক্ত পরস্পর সমান হবে।

অর্থাৎ- উচুশ্রেণীর ব্যক্তির দিয়াত নীচু শ্রেণীর ব্যক্তির দিয়াতের অপেক্ষা বেশি হবে না, তাদের সর্বাধিক নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তি নিরাপত্তাদানের ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তা তাদের ওপর শ্রেণীর ব্যক্তির ওপরও বর্তাবে।

আর ইবনু মাজার শব্দ আর তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি তাদের ওপর নিরাপত্তা দান করবে। এমতাবস্থায় তারা অন্যদের ওপর একটি হাত স্বরূপ, অর্থাৎ- তাদের সত্বা অন্যদের সহকারে ক্ষমতার দিক থেকে একটি যন্ত্র স্বরূপ, তাদের পারস্পারিক সহযোগিতার দিক থেকে একটি অঙ্গ স্বরূপ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)