৩৮০৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৮০৪-[১৮] মাসরূক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-কে এ আয়াতের মর্মার্থ জিজ্ঞেস করলাম, ’’যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযকপ্রাপ্ত’’- (সূরা আ-লি ’ইমরান ৩ : ১৬৯)। জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন যে, শহীদগণের রূহ সবুজ পাখির পেটে অবস্থান করে এবং তোমাদের সাথে ’আর্শে ফানুস ঝুলিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর তারা জান্নাতে মনের ইচ্ছানুসারে উড়ে বেড়াবে, অতঃপর আবার ঐ ফানুসে ফিরে আসবে।

এমতাবস্থায় তাদের প্রতিপালক তাদের সম্মুখে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবেন, তোমাদের কোনো কিছুর আকাঙ্ক্ষা আছে কি? তারা বলবে, আর কিসের আকাঙ্ক্ষা করব? (আমরা পরিপূর্ণ নি’আমাতে আছি) কেননা আমরা জান্নাতের যথেচ্ছাভাবে ভ্রমণ করছি। এভাবে তিনি তাদেরকে তিনবার জিজ্ঞেস করেন, তারাও একই উত্তর পুনরাবৃত্তি করলেন। যখন তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের উদ্দেশে একই কথা বার বার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তখন তারা বলবে, হে আমার রব্! আমাদের রূহকে পুনরায় আমাদের পার্থিব দেহে ফিরিয়ে দাও, যাতে পুনরায় আমরা তোমার পথে লড়াই করে শাহাদাত লাভ করতে পারি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যখন তাদের অন্তরের ইচ্ছা বুঝতে পারেন, এদের আর কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, তখন ঐ অবস্থায় তাদের চিরস্থায়ীভাবে রেখে দেন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ: سَأَلْنَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مسعودٍ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ: (وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ ربِّهم يُرزقون)
الْآيَةَ قَالَ: إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ: أَرْوَاحُهُمْ فِي أَجْوَافِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِي إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمُ اطِّلَاعَةً فَقَالَ: هَلْ تَشْتَهُونَ شَيْئًا؟ قَالُوا: أَيَّ شَيْءٍ نَشْتَهِي وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنَ الْجنَّة حيثُ شِئْنَا ففعلَ ذلكَ بهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوا مِنْ أَنْ يَسْأَلُوا قَالُوا: يَا رَبُّ نُرِيدُ أَنْ تُرَدَّ أَرْوَاحُنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِي سبيلِكَ مرَّةً أُخرى فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوا . رَوَاهُ مُسلم

وعن مسروق قال: سالنا عبد الله بن مسعود عن هذه الاية: (ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله امواتا بل احياء عند ربهم يرزقون) الاية قال: انا قد سالنا عن ذلك فقال: ارواحهم في اجواف طير خضر لها قناديل معلقة بالعرش تسرح من الجنة حيث شاءت ثم تاوي الى تلك القناديل فاطلع اليهم ربهم اطلاعة فقال: هل تشتهون شيىا؟ قالوا: اي شيء نشتهي ونحن نسرح من الجنة حيث شىنا ففعل ذلك بهم ثلاث مرات فلما راوا انهم لن يتركوا من ان يسالوا قالوا: يا رب نريد ان ترد ارواحنا في اجسادنا حتى نقتل في سبيلك مرة اخرى فلما راى ان ليس لهم حاجة تركوا . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে শাহীদের মৃত্যু পরবর্তী এবং কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে মর্যাদাবান হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। মৃত্যুর পরপরই তাদের আত্মা সবুজ পাখীর ভিতরে সঞ্চারিত করা হবে এবং সে জান্নাতে অবাধে ঘুরে বেড়াবে। এ মর্যাদা কেবল আল্লাহর রাস্তায় শাহীদের জন্যই।

হাদীসের বাণী, «أرواحهم في أجواف طير خضر لها قناديل معلقة بالعرش تسرح من الجنة حيث شاءت ثم تأوي إلى تلك القناديل» এ উক্তিটিতে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, জান্নাত পূর্ব থেকেই আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট, যার অস্তিত্ব এখন বিদ্যমান। এটিই আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আতের ‘আকীদা। এটা সেই জান্নাত, যেখান থেকে আদম (আঃ)-কে বের করা হয়েছিল। এটাই সেই জান্নাত, যেথায় পরকালে মু’মিনদের পুরস্কৃত করা হবে এবং নি‘আমাতসমূহ প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে আহলুস্ সুন্নাহর ইজমা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু মু’তাজিলা ও একদল বিদ্‘আতী সম্প্রদায়ের মতে, জান্নাত বর্তমানে অস্তিত্বহীন, কিয়ামতের পুনরুত্থানের পর তাকে অস্তিত্বে আনা হবে। তারা আরো বলে যে, আদম (আঃ)-কে যে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল, তা অন্য এক জান্নাত। অথচ কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য দলীলসমূহের আলোকে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতটিই অধিকতর শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণিত হয়।

কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ ‘‘এ হাদীস প্রমাণ করে যে, রূহসমূহ কখনও শেষ হয়ে যায় না; বরং আপন অবস্থায় বাকী থাকে, অতঃপর সৎকর্মশীল হলে পুরস্কৃত করা হবে আর পাপী হলে শাস্তি দেয়া হবে। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৮৮৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মাসরূক (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)