পরিচ্ছেদঃ অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ করা অবৈধ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَـجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ
অর্থাৎ, এ পরলোকের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। সাবধানীদের জন্য শুভ পরিণাম। (সূরা ক্বস্বাস ৮৩)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا
অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হতে পারবে না। (সূরা ইসরা ৩৭)
তিনি আরো বলেন,
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِـي الْأَرْضِ مَرَحًا إنَّ اللهَ لاَ يُـحِبُّ كُلَّ مُـخْتَالٍ فَخُوْرٍ
অর্থাৎ, মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না। (সূরা লুকমান ১৮)
’গাল ফুলায়ো না’ অর্থাৎ, অহংকারের সাথে চেহারা বিকৃত করো না। মহান আল্লাহ কারূন সম্বন্ধে বলেন,
إنَّ قَارُوْنَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوسٰى فَبَغٰى عَلَيْهِمْ وَاٰتَيْنَاهُ مِنَ الكُنُوْزِ مَا إنَّ مَفَاتِحَهُ لتَنُوءُ بِالعُصْبَةِ أُولِي القُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ إنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِيْنَ -إِلٰى قَوْلِه تَعَالٰى فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الأَرْضَ
অর্থাৎ, কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি যুলুম করেছিল। আমি তাকে ধনভাণ্ডার দান করেছিলাম যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার মাধ্যমে পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান কর। আর তুমি তোমার ইহলোকের অংশ ভুলে যেয়ো না। তুমি (পরের প্রতি) অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না। সে বলল, ’এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি।’ সে কি জানত না আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছেন যারা তার থেকেও শক্তিতে ছিল প্রবল, সম্পদে ছিল প্রাচুর্যশালী? আর অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করা হবে না।
কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না। অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে মাটিতে ধসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না। (সূরা ক্বস্বাস ৭৬-৮১)
(২১৬৬) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ একটি লোক বলল, ’মানুষ তো ভালবাসে যে, তার পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে)?’ তিনি বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহংকার নয়, বরং) অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।
وَعَن عَبْدِ اللهِ بنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ كَانَ في قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ فَقَالَ رَجُلٌ : إنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا ونَعْلُهُ حَسَنَةً ؟ قَالَ إنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الجَمَالَ الكِبْرُ : بَطَرُ الْـحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ رواه مسلم