পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর দয়ার আশা রাখার গুরুত্ব
(৪৭০) আবূ নাজীহ আমর ইবনে আবাসাহ (রাঃ) বলেন, জাহেলিয়াতের (প্রাগৈসলামিক) যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং এরা কোন ধর্মেই নেই, আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি গুপ্তভাবে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি (দুর্ব্যবহার করে) দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ নিলাম। পরিশেষে আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম।
অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, আপনি কি? তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন। আমি বললাম, কি নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে। আমি বললাম, এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন মানুষ এবং একজন কৃতদাস। তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বিলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ছিলেন। আমি বললাম, ’আমিও আপনার অনুগত। তিনি বললেন, তুমি এখন এ কাজ কোন অবস্থাতেই করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকেদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো।
সুতরাং আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরিশেষে) মদীনা চলে এলেন, আর আমি স্বপরিবারেই ছিলাম। অতঃপর আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর ব্যাপারে) লোকেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক মদীনায় এল। আমি বললাম, ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনা এসেছেন? তারা বলল, লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।
অতঃপর আমি মদীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা—তা আমাকে বলুন? আমাকে নামায সম্পর্কে বলুন? তিনি বললেন, তুমি ফজরের নামায পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় (অর্থাৎ, এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে।
পুনরায় তুমি নামায পড়। কেননা, নামাযে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা, তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন নামায পড়। কেননা, এ নামাযে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের নামায পড়। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। কেননা, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় (অর্থাৎ, এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদাহ করে।
পুনরায় আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়।
অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে নামায পড়ে, আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে—যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তা’আলার জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।
তারপর আমর ইবনে আবাসাহ (রাঃ) এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামার (রাঃ) নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমর ইবনে আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! একবার ওযূ করলেই কি এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে?
আমর বললেন, হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ তা’আলা অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার আমার কী প্রয়োজন আছে? যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি।
وَعَنْ أَبيْ نَجِيحٍ عَمرِو بنِ عَبَسَةَ السُّلَمِيِّ قَالَ : كُنْتُ وأنَا في الجاهِلِيَّةِ أظُنُّ أنَّ النَّاسَ عَلَى ضَلاَلَةٍ وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَعْبُدُونَ الأَوْثَانَ فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أخْبَاراً فَقَعَدْتُ عَلَى رَاحِلَتِي فَقَدِمْتُ عَلَيهِ فإِذَا رَسُولُ اللهِ ﷺ مُسْتَخْفِياً جُرَءَاءُ عَلَيهِ قَومُهُ فَتَلَطَّفَتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيهِ بِمَكَّةَ فَقُلْتُ لَهُ : مَا أنْتَ ؟ قَالَ أَنَا نَبيٌّ قُلْتُ : وَمَا نَبِيٌّ ؟ قَالَ أرْسَلَنِي الله قُلْتُ : وَبِأَيِّ شَيْء أرْسَلَكَ ؟ قَالَ أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأرْحَامِ وَكَسْرِ الأَوْثَانِ وَأنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَيْء قُلْتُ : فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا ؟ قَالَ حُرٌّ وَعَبْدٌ وَمَعَهُ يَوْمَئذٍ أَبُو بَكرٍ وَبِلاَلٌ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قُلْتُ : إنّي مُتَّبِعُكَ قَالَ إنَّكَ لَنْ تَسْتَطيعَ ذلِكَ يَومَكَ هَذَا ألا تَرَى حَالي وحالَ النَّاسِ ؟ وَلَكِنِ ارْجعْ إِلَى أهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ بِي قَدْ ظَهرْتُ فَأتِنِي قَالَ : فَذَهَبْتُ إِلَى أهْلِي وقَدِمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ المَدِينَةَ حَتَّى قَدِمَ نَفَرٌ مِنْ أهْلِي المَدِينَةَ فَقُلتُ : مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ المَدِينَةَ ؟ فَقَالُوْا : النَّاس إلَيهِ سِرَاعٌ وَقَدْ أَرَادَ قَومُهُ قَتْلَهُ فلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذلِكَ فقَدِمْتُ المَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيهِ فَقُلتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَتَعْرِفُني ؟ قَالَ نَعَمْ أنْتَ الَّذِي لَقَيْتَنِي بمكّةَ قَالَ : فَقُلتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أخْبِرنِي عَمَّا عَلَّمَكَ الله وأَجْهَلُهُ أخْبِرْنِي عَن الصَّلاَةِ ؟ قَالَ صَلِّ صَلاَةَ الصُّبْحِ ثُمَّ اقْصُرْ عَن الصَّلاَةِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ قِيدَ رُمْحٍ فَإنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيطَان وَحينَئذٍ يَسجُدُ لَهَا الكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ فَإنَّ الصَلاَةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بالرُّمْحِ ثُمَّ اقْصُرْ عَن الصَّلاةِ فَإنَّهُ حينئذ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ فإذَا أقْبَلَ الفَيْءُ فَصَلِّ فَإنَّ الصَّلاةَ مَشْهُودَةٌ مَحضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّي العَصرَ ثُمَّ اقْصرْ عَن الصَّلاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ فإنَّهَا تَغْرُبُ بينَ قَرْنَيْ شَيطَانٍ وَحِينَئذٍ يَسْجُدُ لَهَا الكُفّارُ قَالَ : فَقُلتُ : يَا نَبيَّ اللهِ فَالوُضُوءُ حَدِّثنِي عَنهُ ؟ فَقَالَ مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيسْتَنْشِقُ فَيَسْتَنْثِرُ إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ المَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيهِ إِلَى المِرفقَيْن إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أنَامِلِهِ مَعَ الماءِ ثُمَّ يَمْسَحُ رَأسَهُ إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأسِهِ مِن أطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الماَءِ ثُمَّ يَغسِلُ قَدَمَيهِ إِلَى الكَعْبَيْنِ إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رِجلَيْهِ مِنْ أنَاملِهِ مَعَ الماَءِ فَإنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ الله تَعَالَى وَأَثنَى عَلَيهِ ومَجَّدَهُ بالَّذِي هُوَ لَهُ أهْلٌ وَفَرَّغَ قَلبَهُ للهِ تَعَالَى إلاَّ انْصَرفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيئَتِه يَومَ وَلَدَتهُ أُمُّهُ فَحَدَّثَ عَمرُو بنُ عَبَسَةَ بِهَذَا الحَدِيثِ أَبَا أُمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ لَهُ أَبُو أُمَامَة : يَا عَمْرَو بنَ عَبَسَةَ انْظُر مَا تقولُ! فِي مَقَامٍ وَاحِدٍ يُعْطَى هَذَا الرَّجُلُ ؟ فَقَالَ عَمْرٌو : يَا أَبَا أُمَامَةَ لَقَد كَبُرَتْ سِنّي وَرَقَّ عَظمِي وَاقْتَرَبَ أجَلِي وَمَا بِي حَاجَةٌ أنْ أكْذِبَ عَلَى اللهِ تَعَالَى وَلاَ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ لَوْ لَمْ أسمعه مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ إلاَّ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَينِ أَوْ ثَلاثاً – حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَّات – مَا حَدَّثْتُ أبَداً بِهِ وَلكنِّي سَمِعتُهُ أكثَرَ مِن ذَلِكَ رواه مسلم