৩৫৮

পরিচ্ছেদঃ উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্ত্ততে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য

(৩৫৮) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (একদা আমার সৎবাপ) আবূ ত্বালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ’আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ’হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক ছিল।

আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে আবূ ত্বালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, কোন খাবারের জন্য নাকি? আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, ওঠ। সুতরাং তাঁরা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবূ ত্বালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ ত্বালহা বললেন, ’হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ’আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন।’

অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কী কী বলে (ফুঁক) দিলেন।

তারপর বললেন, দশজনকে আসতে বল। তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, আরো দশজনকে আসতে বল। তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, আরো দশজনকে আসতে বল। এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া করলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে এবং বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা করে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে।

অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন করে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন।

আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পটি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাঁর পেটে পটি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ’ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ ত্বালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ’আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেটে পটি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’

অতঃপর আবূ ত্বালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? মা বললেন, ’হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ।

وَعَن أَنَسٍ قَالَ : قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ : قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ضَعِيفاً أعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ فَهَلْ عَندَكِ مِنْ شَيْءٍ ؟ فَقَالَتْ : نَعَمْ فَأخْرَجَتْ أقْرَاصاً مِنْ شَعِيرٍ ثُمَّ أخَذَتْ خِمَاراً لَهَا فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي بِبَعْضِهِ ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَذَهَبتُ بِهِ فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ جَالِساً في المَسْجِدِ وَمَعَهُ النَّاسُ فَقُمْتُ عَلَيْهمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ أرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ ؟ فَقُلتُ : نَعَمْ فَقَالَ ألِطَعَامٍ ؟ فَقُلتُ : نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قُومُوا فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ : يَا أُمَّ سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بالنَّاسِ وَلَيْسَ عَندَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ ؟ فَقَالَتْ : الله وَرَسُولُهُ أعْلَمُ فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَأقْبَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ هَلُمِّي مَا عَندَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ فَأتَتْ بِذَلِكَ الخُبْزِ فَأمَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَفُتَّ وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ ثُمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقُولَ ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ فأَذِنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ فأذِنَ لَهُم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلاً أَو ثَمَانُونَ متفقٌ عَلَيْهِ
وفي رواية : فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَةٌ وَيخرجُ عَشرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ فَأكَلَ حَتَّى شَبِعَ ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا
وفي رواية : فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلاً ثُمَّ أكَلَ النَّبِيُّ ﷺ بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ وَتَرَكُوا سُؤْراً -وفي رواية : ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ
وفي رواية عَن أنس قَالَ : جِئتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يوماً فَوَجَدْتُهُ جَالِساً مَعَ أصْحَابِه وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَقُلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ : لِمَ عَصَبَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بَطْنَهُ ؟ فَقَالُوْا : مِنَ الجُوعِ فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَقُلتُ : يَا أبتَاهُ قَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ فَقَالُوْا : من الجُوعِ فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي فَقَالَ : هَلْ مِنْ شَيءٍ ؟ قَالَت : نَعَمْ عَندِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ فَإنْ جَاءنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَحْدَهُ أشْبَعَناهُ وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنهُمْ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ

وعن انس قال : قال ابو طلحة لام سليم : قد سمعت صوت رسول الله ﷺ ضعيفا اعرف فيه الجوع فهل عندك من شيء ؟ فقالت : نعم فاخرجت اقراصا من شعير ثم اخذت خمارا لها فلفت الخبز ببعضه ثم دسته تحت ثوبي وردتني ببعضه ثم ارسلتني الى رسول الله ﷺ فذهبت به فوجدت رسول الله ﷺ جالسا في المسجد ومعه الناس فقمت عليهم فقال لي رسول الله ﷺ ارسلك ابو طلحة ؟ فقلت : نعم فقال الطعام ؟ فقلت : نعم فقال رسول الله ﷺ قوموا فانطلقوا وانطلقت بين ايديهم حتى جىت ابا طلحة فاخبرته فقال ابو طلحة : يا ام سليم قد جاء رسول الله ﷺ بالناس وليس عندنا ما نطعمهم ؟ فقالت : الله ورسوله اعلم فانطلق ابو طلحة حتى لقي رسول الله ﷺ فاقبل رسول الله ﷺ معه حتى دخلا فقال رسول الله ﷺ هلمي ما عندك يا ام سليم فاتت بذلك الخبز فامر به رسول الله ﷺ ففت وعصرت عليه ام سليم عكة فادمته ثم قال فيه رسول الله ﷺ ما شاء الله ان يقول ثم قال اىذن لعشرة فاذن لهم فاكلوا حتى شبعوا ثم خرجوا ثم قال اىذن لعشرة فاذن لهم حتى اكل القوم كلهم وشبعوا والقوم سبعون رجلا او ثمانون متفق عليه وفي رواية : فما زال يدخل عشرة ويخرج عشرة حتى لم يبق منهم احد الا دخل فاكل حتى شبع ثم هياها فاذا هي مثلها حين اكلوا منها وفي رواية : فاكلوا عشرة عشرة حتى فعل ذلك بثمانين رجلا ثم اكل النبي ﷺ بعد ذلك واهل البيت وتركوا سورا -وفي رواية : ثم افضلوا ما بلغوا جيرانهم وفي رواية عن انس قال : جىت رسول الله ﷺ يوما فوجدته جالسا مع اصحابه وقد عصب بطنه بعصابة فقلت لبعض اصحابه : لم عصب رسول الله ﷺ بطنه ؟ فقالوا : من الجوع فذهبت الى ابي طلحة وهو زوج ام سليم بنت ملحان فقلت : يا ابتاه قد رايت رسول الله ﷺ عصب بطنه بعصابة فسالت بعض اصحابه فقالوا : من الجوع فدخل ابو طلحة على امي فقال : هل من شيء ؟ قالت : نعم عندي كسر من خبز وتمرات فان جاءنا رسول الله ﷺ وحده اشبعناه وان جاء اخر معه قل عنهم وذكر تمام الحديث

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
৪/ আন্তরিক কর্মাবলী