২৬৬৫

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা

২৬৬৫-[৭] ’আবদুল ’আযীয ইবনু রুফাই’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আনাস ইবনু মালিক-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যাপারে আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যা জেনেছেন তা আমাকে বলুন। (যেমন) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তালবিয়ার দিন (যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে) যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) কোথায় আদায় করেছেন? জবাবে আনাস বললেন, ’মিনায়’। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, নাফরের দিন (যিলহজ্জ মাসের ১৩ তারিখে মদীনায় রওনা হবার দিন) ’আসরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আবত্বাহ-এ। অতঃপর আনাস বললেন, কিন্তু তোমরা তোমাদের আমীর বা নেতৃবৃন্দ যেভাবে করেন সেভাবে করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابٌ خُطْبَةُ يَوْمِ النَّحْرِ وَرَمْىِ أَيَّامِ التَّشْرِيْقِ وَالتَّوْدِيْعِ

وَعَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ قَالَ: سألتُ أنسَ بنَ مالكٍ. قُلْتُ: أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ عَقَلْتَهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْنَ صَلَّى الظُّهْرَ يومَ الترويةِ؟ قَالَ: بمنى. قلت: فَأَيْنَ صَلَّى الْعَصْرَ يَوْمَ النَّفْرِ؟ قَالَ: بِالْأَبْطَحِ. ثُمَّ قَالَ افْعَلْ كَمَا يَفْعَلُ أُمَرَاؤُكَ

وعن عبد العزيز بن رفيع قال: سالت انس بن مالك. قلت: اخبرني بشيء عقلته عن رسول الله صلى الله عليه وسلم: اين صلى الظهر يوم التروية؟ قال: بمنى. قلت: فاين صلى العصر يوم النفر؟ قال: بالابطح. ثم قال افعل كما يفعل امراوك

ব্যাখ্যা: (عَنْ عَبْدِ الْعَزِيْزِ بْنِ رُفَيْعٍ) ‘আবদুল ‘আযীয বিন রুফাই‘ তিনি ছিলেন একজন সুপ্রসিদ্ধ তাবি‘ঈ। ইমাম বুখারী তার উস্তাদ ‘আলী ইবনুল মাদিনী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন ‘আব্দুল আযীয বিন রুফাই' প্রায় ৬০টি হাদীস বর্ণনাকারী। তিনি ১৩০ হিজরীতে অথবা কেউ কেউ বলেছেন, তার পরে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বুখারী এবং মুসলিমে ‘আবদুল ‘আযীয বিন রুফাই'-এর আনাস (রাঃ) থেকে এই একটি মাত্র হাদীসই উল্লেখিত হয়েছে।

(يَوْمَ التَّرْوِيَةِ) ইয়াওমুত্ তারবিয়াহ্ বলতে জিলহজ্জ মাসের অষ্টম দিনকে বুঝানো হয়েছে- এ দিনটি ইয়াওমুত তারবিয়াহ্ নামে অভিহিত হওয়ার কিছু কারণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, لانهم كائما يرمون فيها ابلهم ويتروون من الماء ....الخ। কেননা এ দিনটিতে হাজী সাহেবরা তাদের উটগুলোকে পানি পান করাতেন দূর দূরান্ত থেকে পানি নিয়ে এসে, কারণ সে স্থানে তৎকালীন সময়ে কোন কূপ বা ঝর্ণা জাতীয় কিছু ছিল না। তবে এখন সেখানে পানি পান করার অনেক সুব্যবস্থা আছে তাইতো এখন সেখানে আর দূর থেকে পানি বহন করতে হয় না।

আল ফাকিহী (রহঃ) তার ‘‘মক্কা’’ নামক কিতাবে মুজাহিদ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মুজাহিদ বলেন, ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার  বলেছেন, হে মুজাহিদ! যখন তুমি মক্কার রাস্তায় বাধভাঙ্গা পানি দেখতে পাবে তখন তুমি সতর্কতা অবলম্বন কর। অন্য বর্ণনায় আছে, (فاعلم ان الأمر قد أظلك) এ ছাড়া এ দিনকে ইয়াওমুত্ তারবিয়াহ্ নামে অভিহিত করার আরো কারণ রয়েছে। যেমনঃ

১. এ দিনে আদম (আঃ) হাওয়া (আঃ)-কে দেখেছেন এবং তার সাথে তার জমায়েত হয়।

২. ইব্রাহীম (আঃ) কোন একরাত্রে দেখলেন তিনি স্বীয় পুত্রকে যাবাহ করছেন। অতঃপর ভয়ে তিনি চিন্তিত হলেন।

৩. এ দিনেই জিব্রীল (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ)-কে مناسك الحج তথা হজ্জের কার্যাবলী দেখিয়ে দিয়েছিলেন।

৪. এ দিনেই ইমাম মানুষদেরকে مناسك الحج তথা হজ্জের কার্যাবলী শিক্ষা দেন। এ কথাগুলো সবই যে বিরল এবং এক প্রকার ভিত্তিহীন কথা তার প্রমাণ হলো, যদি প্রথমটিই কারণ হয় তাহলে তার নাম (يوم التروية) তথা সাক্ষাতের দিন বা দেখার দিন নাম হতো। যদি দ্বিতীয়টিই কারণ হয় তাহলে তার নাম يوم التروية হতো। আর যদি কারণ তৃতীয়টি হয় তাহলে তার নাম يوم الرؤيا তথা স্বপ্নে দেখার দিন হতো। আর যদি কারণ চতুর্থটিই হতো তাহলে তার নাম يوم الزواية তথা বর্ণনা বা শিক্ষা দেয়ার দিন হতো। অথচ কোনটিই হয়নি বরং এর নাম হয়েছে يوم التروية তথা লালন-পালন পানি পান করানো ইত্যাদির দিন। তাই সঙ্গত কারণেই এখানে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)-এর কথা প্রণিধানযোগ্য।

(قَالَ: بِمِنًى) হাদীসের এ অংশটি থেকে বুঝা যায় ইয়াওমুত্ তারবিয়াতে হাজী সাহেব যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) মিনাতে আদায় করবেন। এ বিষয়ে জমহূরের মত এটাই। এ বিষয়ের সমর্থনে পূর্বে উল্লেখিত জাবির -এর লম্বা হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য যে,

 فلما كان يوم التروية توجهوا إلى منى فأهلوا بالحج وركب رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلى بها الظهر والعصر والمغرب والعشاء و الفجر

অর্থাৎ- যখন ইয়াওমুত্ তারবিয়ার দিন আসলো তখন তারা সবাই মিনা অভিমুখী হলেন এবং হজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করতে লাগলেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং সেই মিনাতেই তিনি যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা এবং ফজরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করলেন।

অনুরূপভাবে ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এ রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু খুযায়মাহ্ ও হাকিম কাসিম বিন মুহাম্মাদ থেকে, তিনি ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়র  থেকে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়র (রাঃ) বলেন,

من سنة الحج ان يصلى الامام الظهر وما بعدها والفجر بمنى ثم يعدون إلى عرفة

হজ্জের নিয়মাবলীর অন্তর্গত এটাও যে, ইমাম যুহর ও তৎপরবর্তী সালাত এমনকি ফজরের সালাতও মিনায় আদায় করবেন, তারপর সকাল সকাল ‘আরাফাহ্ অভিমুখী হবেন। তবে সুফিয়ান সাওরী তার জামি' কিতাবে ভিন্ন কথা বর্ণনা করেছেন আর তা হলো ‘আমর ইবনে দীনার (রহঃ) বলেন, আমি যুবায়র (রাঃ)-কে দেখলাম ইয়াওমুত্ তারবিয়াতে তিনি যুহরের সালাত আদায় করছেন মক্কায়।

এ দু’ বর্ণনার সংঘর্ষের চমৎকার সমাধান পেশ করেছেন, হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)-এর এমন করার কারণ মূলত দু’টি হতে পারে। ১. لضرورة কোন কারণবশত তিনি তা করেছেন। ২. অথবা لبيان الجواز তথা জায়িযী অবস্থা বর্ণনার উদ্দেশে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)