২৪৯৫

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯৫-[১৪] ’উসমান ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে আরোগ্য (দৃষ্টিশক্তি) দান করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করবো। কিন্তু তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করতে পারো, আর এটাই তোমার জন্য উত্তম হবে। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য দু’আ করুন। বর্ণনাকারী [’উসমান (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকটিকে উত্তমরূপে উযূ করতে ও এ দু’আ পড়তে বললেন,

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহূ ইলায়কা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির্ রহমতি ইন্নী তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা- রব্বী লিইয়াকযিয়া লী ফী হা-জাতী হা-যিহী আল্ল-হুম্মা ফাশাফ্‌ফি’হু ফিয়্যা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার নবী মুহাম্মাদ, যিনি রহমতের নবী। তাঁর ওয়াসীলায় আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে ফিরছি। হে নবী! আমি আপনার ওয়াসীলায় আমার রবের দিকে ফিরছি, তিনি যেন আমার এ প্রয়োজন পূরণ করেন। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্যে তাঁর সুপারিশ কবূল করো।)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব)[1]

عَن عثمانَ بنِ حُنَيفٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي فَقَالَ: «إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» . قَالَ: فَادْعُهُ قَالَ: فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ الْوُضُوءَ وَيَدْعُو بِهَذَا الدُّعَاءِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي لِيَقْضِيَ لِي فِي حَاجَتِي هَذِهِ اللهُمَّ فشفّعْه فيَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب

عن عثمان بن حنيف قال: ان رجلا ضرير البصر اتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: ادع الله ان يعافيني فقال: «ان شىت دعوت وان شىت صبرت فهو خير لك» . قال: فادعه قال: فامره ان يتوضا فيحسن الوضوء ويدعو بهذا الدعاء: «اللهم اني اسالك واتوجه اليك بنبيك محمد نبي الرحمة اني توجهت بك الى ربي ليقضي لي في حاجتي هذه اللهم فشفعه في» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লিখিত ব্যক্তির চোখের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়। নাসায়ী’র বর্ণনায় ‘‘অন্ধ ব্যক্তি’’, মুসনাদে আহমাদণ্ডএর বর্ণনায় ‘‘এমন ব্যক্তি যার চোখের দৃষ্টি চলে গিয়েছে’’, ত্ববারানী ও ইবনুস্ সুন্নীর বর্ণনা মতে ‘‘রোগগ্রস্ত ব্যক্তি’’ এমন অভিধায় ব্যক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তার চোখের সমস্যা দূর করার নিমিত্তে আল্লাহর নিকট দু‘আ করার জন্য আবেদন জানালে তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি চাইলে দু‘আ করতে পারো কিংবা তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, আর ধৈর্য ধারণ করাটাই তোমার জন্য উত্তম হবে। দু‘আ না করাটা তার জন্য উত্তম হবে- এমন কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য বললেন যে, অন্য হাদীসে কুদ্সীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

إذا ابتليت عبدي بحبيبتيه ثم صبر عوضته منهما الجنة

‘‘আমার কোন বান্দাকে যখন তার দু’ চোখ দ্বারা পরীক্ষা করি, অর্থাৎ- অন্ধ করি, অতঃপর সে এ বিপদে ধৈর্য ধারণ করে তাহলে তাকে আমি ঐ দু’ চোখের বিনিময়ে জান্নাত দান করি।’’

তারপর লোকটি ধৈর্য ধারণ না করে তার জন্য দু‘আ করতে বললেন। আহমাদ, ইবনু মাজাহ্ ও হাকিম-এর বর্ণনা মতে, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তমরূপে উযূ করে দু’ রাক্‘আত নফল সালাত আদায় করে হাদীসে উল্লিখিত দু‘আটি পড়তে বললেন। এ হচ্ছে হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা।

এ হাদীস দ্বারা অনেকে দলীল পেশ করতে চান যে, নাবী, সৎ ব্যক্তি বা মৃত কোন ব্যক্তির সত্তাকে ওয়াসীলাহ্ করে অল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বৈধ। অথচ তাদের এ দাবী সার্বিক বিবেচনায় অসত্য। কারণ নাবী বা সৎ ব্যক্তিগণ জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের ওয়াসীলায় দু‘আ করা বৈধ হলেও তাদের মৃত্যুর পর তাদের ওয়াসীলাহ্ ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেমন- ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর বৃষ্টির জন্য তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ওয়াসীলায় দু‘আ চেয়েছেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসীলায় নয়। যদি মৃত ব্যক্তির ওয়াসীলায় দু‘আ করা বৈধ হত তাহলে ‘উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াসীলায় দু‘আ চাইতেন। তাছাড়া গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ ‘আমলের ওয়াসীলাহ্ করে দু‘আ করে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারা অন্য কোন ব্যক্তির বা কারো ‘আমলের ওয়াসীলাহ্ করে দু‘আ করেননি।

উপরোক্ত দু’টি দলীল ছাড়াও আরো দলীল, যুক্তি ও বিশ্লেষণ লেখক মূল গ্রন্থে আলোচনা করেছেন যার সার কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তার ওয়াসীলাহ্ ব্যবহার করে দু‘আ করা বৈধ নয়। বিস্তারিত জানতে মূল গ্রন্থ দেখুন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)