২২৬৪

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৬৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি আমার বান্দার নিকট সেরূপ, যেরূপ সে আমাকে স্মরণ করে। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে স্মরণ করে তার মনে, আমি তাকে স্মরণ করি আমার মনে। আর সে যদি স্মরণ করে আমাকে মানুষের দলে, আমি তাকে (অনুরূপ) স্মরণ করি তাদের চেয়েও সর্বোত্তম দলে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالتَّقَرُّبُ إِلَيْهِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَأٍ خير مِنْهُم

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى: انا عند ظن عبدي بي وانا معه اذا ذكرني فان ذكرني في نفسه ذكرته في نفسي وان ذكرني في ملا ذكرته في ملا خير منهم

ব্যাখ্যা: (أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, (ظن) হলো সন্দেহ ও ইয়াক্বীনের মধ্যবর্তী বিষয়। তবে (ظن) তথা ধারণা মাঝে মাঝে ইয়াক্বীন তথা দৃঢ়বিশ্বাসের ফায়দা দেয়। অর্থাৎ- (ظن) তথা ধারণা সঠিক হওয়ার আলামত বা নিদর্শন যদি পরিস্ফূটিত হয়ে যায় তখন তার অর্থ হয় ইয়াক্বীন যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন,

الَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ أَنَّهُمْ مُلَاقُوْ رَبِّهِمْ

অর্থাৎ- ‘‘মু’মিনরা ধারণা তথা বিশ্বাস রাখে যে, তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাত করবে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৪৬)

অপরদিকে যদি (ظن) তথা ধারণার সঠিক হওয়ার আলামতগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে তা شك তথা সন্দেহের অর্থ বহন করে থাকে। যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন, وَظَنُّوْا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُوْنَ

অর্থাৎ- ‘‘কাফিররা ধারণা তথা সন্দেহ করে যে, তারা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করবে না, অর্থাৎ- তারা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করবে কিনা এ ব্যাপারে সন্দীহান।’’ (সূরা আল কাসাস ২৮ : ৩৯)

‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেছেনঃ (ظَنِّ عَبْدِي) এর অর্থ হলো দু‘আ করার সময় এ ধারণা পোষণ করা যে, আল্লাহ আমার দু‘আ কবূল করবেন। যেহেতু তিনি ওয়া‘দা দিয়েছেন যে, বান্দার দু‘আ তিনি কবূল করবেন আর তিনি তো ওয়াদা খেলাফ করেন না। অতএব তিনি আমার দু‘আও কবূল করবেন। এরূপ বিশ্বাস রাখা।

(وَأَنَا مَعَه) আল্লাহ বললেন যে, ‘আমি বান্দার সাথে আছি’ এর সঠিক অর্থ হলো সাহায্য সহযোগিতা করার দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহ বান্দার সাথে আছেন। তিনি তার সত্তাগতভাবে আমাদের সাথে আছেন বা প্রচলিত অর্থ যেমনঃ

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ

অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ স্বত্বাগতভাবে সব স্থানে বিদ্যমান এরূপ নয়’’- (সূরা আল হাদীদ ৫৭ : ৪)। বরং স্বত্বাগতভাবে তিনি ‘আরশে ‘আযীমে সমাসীন।

(وَإِنْ ذَكَرَنِي فِىْ مَلَأٍ) ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের এ অংশটুকুর মাধ্যমে বুঝা যায় জনসম্মুখে প্রকাশ্যে আল্লাহর যিকিরের বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

(فِىْ مَلَأٍ خير مِنْهُم) হাদীসটির এ অংশটুকু দ্বারা মূলত আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি তার অর্থাৎ- যে সমস্ত বান্দা আল্লাহকে লোকসম্মুখে স্মরণ করবে মহান আল্লাহ তাদের আলোচনা মালায়িকাহর (ফেরেশতাদের) সম্মুখে করবেন।

* ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র অংশের মাধ্যমে ঢালাওভাবে এ কথা বলা ঠিক নয় যে, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) মানব জাতির চেয়ে উত্তম।

* ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ সংঘটিত হয়েছে যে, মানুষ উত্তম নাকি মালাক (ফেরেশতা) উত্তম?

অপর একদল ‘আলিম বলেছেন, বিশেষ কিছু মানুষ যেমনঃ নাবীগণ (আঃ) বিশেষ কিছু মালাক যেমনঃ জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীল (আঃ) থেকে উত্তম। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এ নিয়ম নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات)