পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৯-[৩৪] জাবির ইবনু সামুরাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম প্রথম আমাদেরকে ’আশূরার দিন সওম রাখার হুকুম দিয়েছেন। এর প্রতি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন; এ দিন আসার সময় আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। কিন্তু রমাযানের সওম ফরয হবার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর আমাদেরকে এ দিনের সওম রাখতে না হুকুম দিয়েছেন, না নিষেধ করেছেন। আর এ দিন এলে আমাদের না কোন খোঁজ-খবর নিয়েছেন। (মুসলিম)[1]
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ لَمْ يَأْمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا عَنْهُ وَلم يتعاهدنا عِنْده. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে দলীল রয়েছে যে, ‘আশূরার সিয়াম ওয়াজিব ছিল। অতঃপর তা মানসূখ হয়ে নাফলে রূপান্তরিত হয়। আর এমন মতই পোষণ করেছেন ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) এবং আহমাদ থেকে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। হাফেয আসকালানী ও ইবনুল কইয়্যূম তা সমর্থন করেছেন।
‘আল্লামা আল বাজী (রহঃ) বলেন, প্রথমে যে সিয়াম ফরয ছিল তা হলো ‘আশূরার সিয়াম। পরবর্তীতে রমাযান (রমজান) ফরয হলে তা মানসূখ হয়ে যায়। তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর অধিক বিশুদ্ধ মত হলো, ‘আশূরা কখনই ওয়াজিব ছিল না তা সর্বদাই সুন্নাত ছিল। ‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেন, ‘উলামাগণ এ মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, বর্তমানে ‘আশূরার সিয়াম সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। তবে প্রাক-ইসলামে তার হুকুম নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে তা ওয়াজিব ছিল। শাফি‘ঈর অনুসারীদের মাঝে দু’টি মত রয়েছে। [১] প্রসিদ্ধ মতে তা সর্বদাই সুন্নাত, উম্মাতের ওপর তা কখনই ওয়াজিব ছিল না। [২] আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতের অনুরূপ অর্থাৎ- তা ওয়াজিব ছিল।
‘আল্লামা ‘ইয়ায, ইবনু ‘আবদিল বার ও নাবাবী (রহঃ) এবং অন্যান্যদের ঐকমত্য রয়েছে যে, বর্তমান সময়ে ‘আশূরার সিয়াম ফরয নয় এবং তা মুস্তাহাব হওয়ার উপরই ঐকমত্য রয়েছে। আহমাদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশূরার সিয়াম পালন করতেন, এবং তা পালনের নির্দেশ দিতেন। যখন রমাযান (রমজান) ফরয হলো তখন ‘আশূরার সিয়ামের ওয়াজিব রহিত হয়ে গেল। সুতরাং যে চায় সে ‘আশূরার সিয়াম রাখবে, না চাইলে বর্জন করবে। (হাদীস সহীহ)
যারা বলেন যে, প্রাক-ইসলামী যুগে ‘আশূরা ফরয ছিল, তারা একাধিক হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। তা আল হায়সামী (রহঃ) মাজমা‘উয্ যাওয়ায়িদ-এ, ‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) শারহে বুখারীতে এবং ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) শারহু মা‘আনী আল আসার-এ উল্লেখ করেছেন। আর এটাই আমাদের নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য কথা।