পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৭-[৩২] ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় গমন করার পর দেখলেন ইয়াহূদীরা ’আশূরার দিন সওম রাখে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দিনটার বৈশিষ্ট্য কি যে, তোমরা সওম রাখো? তারা বলল, এটা একটি গুরুত্ববহ দিন। এ দিনে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ) ও তাঁর জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন। আর ফির্’আওন ও তার জাতিকে (সমুদ্রে) ডুবিয়েছেন। মূসা (আঃ) শুকরিয়া হিসেবে এ দিন সওম রেখেছেন। অতএব তাঁর অনুসরণে আমরাও রাখি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দীনের দিক দিয়ে আমরা মূসার বেশী নিকটে আর তার তরফ থেকে শুকরিয়া আদায়ের ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশী হকদার। বস্তুত ’আশূরার দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সওম রেখেছেন অন্যদেরকেও রাখার হুকুম দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةِ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟» فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ: أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ» فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بصيامه
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা আসকালানী (রহঃ) বলেন, কুরায়শরা ‘আশূরার সিয়াম পালন করত, সম্ভবত তারা তাদের পূর্ববর্তী শারী‘আতের অনুসরণে তা করত। আর এ কারণেই তারা এ দিনে কা‘বায় নতুন কাপড় পরিধান করানোর মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করত। ‘আল্লামা ইবনুল কইয়্যূম বলেন, কুরায়শরা এ দিনকে সম্মান করত এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ দিনে কা‘বায় কাপড় পরাত এবং সম্মানের পূর্ণতা দিত সিয়ামের মাধ্যমে। ‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পূর্বে এ দিনে সিয়াম পালন করতেন। হতে পারে এটি তাদের (কুরায়শের) প্রতি (আরোপিত) হুকুম অনুযায়ী করতেন, যেমন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ পালনের ক্ষেত্রে করতেন। অথবা আল্লাহই তাঁকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কারণ এটি উত্তম কাজ। যখন তিনি মদীনায় হিজরত করলেন, তখন ইয়াহূদীদেরকে পেলেন যে, তারা সিয়াম রাখছে। তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিয়াম রাখলেন ও অন্যান্যদের সিয়াম রাখার নির্দেশ দিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় যে সকল বিষয়ে আল্লাহর নিষেধ না থাকত সেক্ষেত্রে আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও নাসারা) অনুযায়ী করতে ভালোবাসতেন। ফাতহুল বারীতেও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।
(أَمَرَ بِصِيَامِه) বাহ্যিকভাবে أَمَرَ (আমার)-টি ওয়াজিবের জন্য। সুতরাং এতে তাদের দলীল রয়েছে যারা বলে থাকেন যে, মানসূখ হওয়ার পূর্বে তা (‘আশূরা) ওয়াজিব ছিল। আর যারা এমনটি বলেন না তাদের দৃষ্টিতে এখানে أَمَرَ মুস্তাহাবের দৃঢ়তার জন্য। যখন تاكيد বা দৃঢ়তা রহিত হয়ে গেছে, ফলে এখন মানদূব (মুস্তাহাব) অবশিষ্ট রয়েছে।