১৭৯৮

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়

১৭৯৮-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জানোয়ার (যেমন- ঘোড়া, গরু, মহিষ ইত্যাদি) কাউকে আহত করলে তা মাফ। কূপ খনন করতে কেউ মারা গেলে তাতে মালিকের ওপর ক্ষতিপূরণ মাফ। তেমনি খনি খনন করতে কেউ মারা গেলেও মালিকের দোষ মাফ। আর রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ অংশ দেয়া ওয়াজিব। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «العجماء جرحها جَبَّار والبشر جَبَّار والمعدن جَبَّار وَفِي الرِّكَاز الْخمس»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «العجماء جرحها جبار والبشر جبار والمعدن جبار وفي الركاز الخمس»

ব্যাখ্যা: পশু যদি কাউকে আহত করে তাহলে তার মালিক-এর উপর ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগবে না। কূয়া খননের সময় কেউ মারা গেলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না। আর স্বর্ণ-রৌপ্যের খনিতে কাজ করায় মারা গেলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। জাহিলী যুগের গচ্ছিত সম্পদে ৫ ভাগ যাকাত ওয়াজিব হয়।

হানাফী মাযহাব অনুসারে খনি হতে উঠানো সকল জিনিসকে রিকায বলা হয়, যার মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। ইমাম হুমাম (রহঃ) বলেনঃ রিকায খনি ও ধন-ভান্ডার উভয়কেই বুঝায়। আর ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং জমহূর ‘উলামাতের মত যে, রিকায জাহিলী যুগের মাটির নিচে দাফন করা মালকে বুঝানো হয়েছে। খনিকে বুঝানো হয়নি। খনির মধ্যে খুমুস বের করতে হয় না। বরং তাতে যাকাত বের করতে হয়।

কোন জানোয়ার/চতুষ্পদ জন্তুর দিনের বেলা একাকী থাকাবস্থায় কারো কোন ক্ষতি করলে তার কোন যামানাত বা ক্ষতিপূরণ নেই- এ ব্যাপারে সকল ‘উলামা একমত। তবে প্রাণীর সাথে কোন লোক থাকাবস্থায় যদি সে প্রাণী কারো কোন ক্ষতি করে তাহলে এ ক্ষেত্রে ‘উলামাদের মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, আহলে যাহিরগণের মতে কোন অবস্থাতে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ লাগবে না। তবে চালকের বিষয়টিকে হানাফীদের কেউ কেউ এর থেকে আলাদা করেছেন। আর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ লাগবে।

আর যদি রাত্রিতে প্রাণী কারো কোন ক্ষতিসাধন করে তাহলে জমহুর ‘উলামাগণের মতে এক্ষেত্রে মালিকের ক্ষতিপূরণ লাগবে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাত্রিতে চতুষ্পদজন্তু সংরক্ষণের দায়িত্ব মালিকের।

* কূয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি হল বিরাণ ভূমিতে মালিকানামুক্ত কোন কূপে যদি কোন মানুষ বা অন্য কিছু পড়ে মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই। অনুরূপ যদি কেউ তার অধিনস্ত ভূমিতে কূপ খনন করে এবং তাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বা কূপ খননের শ্রমিকের ওপর মাটি ধসে সে মারা যায় তাহলে এ ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ নেই। তবে যদি কোন মুসলিমদের পথে বা পূর্ব অনুমতি ছাড়াই অন্যের ভূমিতে কেউ কূপ খনন করে আর তাতে যে কোন ভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।

* (مَعْدِن) (মা‘দিন) বলা হয় মাটির নিচে স্বর্ণ, রৌপ্য, লোহা, কয়লা, তৈল, হীরা প্রভৃতি যেসব খনিজ পদার্থ লুকায়িত থাকে, তার খনিকে সেই খনি খনন করতে গিয়ে কেউ যদি তাতে পতিত হয়ে মারা যায় বা খনি ধসে মারা যায় তাহলে তার কোন ক্ষতিপূরণ নেই। তবে তাতে যাকাত অবশ্যই আবশ্যক হবে। খনির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিধানগুলো কুয়ার বিধানগুলোর ন্যায়।

* (رِكَازُ) (রিকায) বলা হয় জমিনের অভ্যন্তরে গচ্ছিত সম্পদকে। যদি সে গচ্ছিত রাখা সম্পদ কোন মুসলিমের হয়ে থাকে যা কোন চিহ্নের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে তা لُقَطَةُ বা কুড়িয়ে পাওয়ার বিধানের অন্তর্গত হবে। অর্থাৎ তা একবছর যাবৎ প্রচার করতে হবে। আর যদি সে গচ্ছিত রাখা সম্পদ কোন অমুসলিমের হয় যা তাদের কোন চিহ্নের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে তাতে خُمُسُ (খুমুস) বা এক পঞ্চমাংশ আবশ্যক। মা‘দিন এবং রিকায একই শ্রেণীভুক্ত না আলাদা এ বিষয়ে ‘উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের মতে উভয়ইটি একই শ্রেণীভুক্ত এবং তাতে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক। অন্যরা বলেছেন, দু’টি আলাদা এবং উভয়টির বিধানও আলাদা। অর্থাৎ রিকাযের ক্ষেত্রে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক আর মা‘দিনের ক্ষেত্রে যাকাত দিতে হবে। দ্বিতীয় অভিমতই সঠিক যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেখানে তিনি দু’টির মাঝে পার্থক্য সূচনা করেছেন। রিকায বিষয়ক কতগুলো মাস্আলাহ্ হলঃ

* রিকায বা গচ্ছিত রাখা সম্পদের কম বেশির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কম বেশি যাই হোক তাতে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে নিসাবের শর্ত নেই।

* এতে এক বছর পূর্ণ হওয়ার কোন শর্ত নেই। বরং তা সাথে সাথে আদায় করতে হবে।

* স্বর্ণ, রৌপ্যসহ সকল পুঁতে রাখা সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ আবশ্যক। তবে এ এক-পঞ্চমাংশের ব্যয়খাত নিয়ে ‘উলামাদের মতভেদ আছে। ইমাম মালিক, আবূ হানীফা, আহমাদ (রহঃ) এবং জমহুরের মতে এর ব্যয়খাতটি ফাইয়ের এক-পঞ্চমাংশের ব্যয়খাতের ন্যায়। আর এটি সঠিক অভিমত। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে এর ব্যয়খাতটি যাকাতের ব্যয়খাতের অন্তর্গত।

* ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেছেন, মুসলিম, যিম্মী, স্বাধীন ব্যক্তি, দাস, মুকাতাব দাস, ছোট, বড়, বুদ্ধিমান ও পাগল যেই পুতে রাখা সম্পদ পাবে তাকেই এক-পঞ্চমাংশ দিতে হবে। তবে যদি দাস পায় তাহলে অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশের মালিক হবে তার মনিব। আর যদি মুকাতাব গোলাম পায় তাহলে অবশিষ্টাংশের মালিক সেই হবে। কেননা এটি তার উপার্জনের অন্তর্গত। এটিই অধিকাংশ ‘উলামাদের অভিমত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة)