১৬৩০

পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়

১৬৩০-[১৫] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় কবরের কাছে গেলাম। (তখনো কবর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ কবরস্থ করা হয়নি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, কবরের ’আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মু’মিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য।

তাঁদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ কথা শুনে মু’মিন বান্দার রূহ তার দেহ হতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হতে পানির ফোঁটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ ’পবিত্র রূহ কার’ জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার ’আমলনামা ’ইল্লীয়্যিনে’ লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে (কবরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে কবরের) সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাক (ফেরেশতা) (মুনকির নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব ’আল্লাহ’। আবার তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দীন ’ইসলাম’। আবার তারা দু’ মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি ’আল্লাহর কিতাব’ পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী (আল্লাহ) আহবান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে)।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়া’দা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক ’আমল। মু’মিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে ’আযাবের মালায়িকাহ্ নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা! আল্লাহর ’আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হতে টেনে বের করা হয় (আর এতে পশম আটকে থাকে)।

মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিশিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুর্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দলীল হিসেবে) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (অনুবাদ) ’’ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুঁইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।’’

এবার আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তার ’আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্ত্তত কাফিরদের রূহ (নিচে) নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’(অনুবাদ) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়)। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে (উড়িয়ে নিয়ে) দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়)।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) দু’জন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ’’তোমার রব কে? (সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে) বলবে, ’’হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করবেন, ’’তোমার দীন কি?’’ সে (কাফির ব্যক্তি) বলবে, ’’হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, ’’এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?’’ সে বলে, ’’হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। (তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে) জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তার কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, (দু’পাশ মিলে যাবার পর) তার পাঁজরের এদিকের (হাড়গুলো) ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে।

তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। এ কুৎসিত লোকটি (কবরে শায়িত লোকটিকে) বলতে থাকবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়া’দা (দুনিয়ায়) তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন (ভাল) খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, ’’আমি তোমার বদ ’আমল’’। এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার! ’’তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করো না।’’

আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার (মু’মিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহমত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তা’আলার কাছে এ মু’মিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় (যাতে এ মালাক মু’মিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারে।) আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন। আসমানের দরজার বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ (আল্লাহর নিকট) আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়। (আহমাদ)[1]

وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَة رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حوله كَأَن على رؤوسنا الطَّيْرَ وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِي الْأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ من السَّمَاء مَلَائِكَة بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ الله ورضوان قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنَ فِي السِّقَاءِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ - يَعْنِي بِهَا - عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذِه الرّوح الطّيب فَيَقُولُونَ: فلَان بن فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى ينْتَهوا بهَا إِلَى سَمَاء الدُّنْيَا فيستفتحون لَهُ فَيفتح لَهُ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا حَتَّى ينتهى بهَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ - فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أخرجهم تَارَة أُخْرَى قَالَ: فتعاد روحه فيأتيه ملكان فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولُونَ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ الله فَيَقُولُونَ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُول: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاء أَن قد صدق فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ» قَالَ: وَيَأْتِيهِ رجل حسن الْوَجْه حسن الثِّيَاب طيب الرّيح فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ لَهُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْه يَجِيء بِالْخَيْرِ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ فَيَقُولُ: رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي وَمَالِي . قَالَ: وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمُ الْمُسُوحُ فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنَ اللَّهِ قَالَ: فَتُفَرَّقُ فِي جسده فينتزعها كَمَا ينتزع السفود من الصُّوف المبلول فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ وَيخرج مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرّوح الْخَبيث؟ فَيَقُولُونَ: فلَان بن فُلَانٍ - بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا - حَتَّى يَنْتَهِي بهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ فَلَا يُفْتَحُ لَهُ ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سم الْخياط)
فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّين فِي الأَرْض السُّفْلى فتطرح روحه طرحا
ثُمَّ قَرَأَ: (وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرّيح فِي مَكَان سحيق)
فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ: فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَن كذب عَبدِي فأفرشوا لَهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ فَيَأْتِيهِ حَرُّهَا وَسَمُومُهَا وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ فَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالَّذِي يسوؤك هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ فَيَقُولُ: رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ
وَفِي رِوَايَة نَحوه وَزَاد فِيهِ:
إِذَا خَرَجَ رُوحُهُ صَلَّى عَلَيْهِ كُلُّ مَلَكٍ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَكُلُّ مَلَكٍ فِي السَّمَاءِ وَفُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ لَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَابٍ إِلَّا وَهُمْ يَدْعُونَ اللَّهَ أَنْ يُعْرَجَ بِرُوحِهِ مِنْ قِبَلِهِمْ. وَتُنْزَعُ نَفْسُهُ يَعْنِي الْكَافِرَ مَعَ الْعُرُوقِ فَيَلْعَنُهُ كُلُّ مَلَكٍ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَكُلُّ مَلَكٍ فِي السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ لَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَابٍ إِلَّا وَهُمْ يَدْعُونَ اللَّهَ أَنْ لَا يُعْرِجَ رُوحَهُ مِنْ قبلهم . رَوَاهُ أَحْمد

وعن البراء بن عازب قال: خرجنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في جنازة رجل من الانصار فانتهينا الى القبر ولما يلحد فجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم وجلسنا حوله كان على رووسنا الطير وفي يده عود ينكت به في الارض فرفع راسه فقال: «استعيذوا بالله من عذاب القبر» مرتين او ثلاثا ثم قال: ان العبد المومن اذا كان في انقطاع من الدنيا واقبال من الاخرة نزل اليه من السماء ملاىكة بيض الوجوه كان وجوههم الشمس معهم كفن من اكفان الجنة وحنوط من حنوط الجنة حتى يجلسوا منه مد البصر ثم يجيء ملك الموت حتى يجلس عند راسه فيقول: ايتها النفس الطيبة اخرجي الى مغفرة من الله ورضوان قال: «فتخرج تسيل كما تسيل القطرة من في السقاء فياخذها فاذا اخذها لم يدعوها في يده طرفة عين حتى ياخذوها فيجعلوها في ذلك الكفن وفي ذلك الحنوط ويخرج منها كاطيب نفحة مسك وجدت على وجه الارض» قال: فيصعدون بها فلا يمرون - يعني بها - على ملا من الملاىكة الا قالوا: ما هذه الروح الطيب فيقولون: فلان بن فلان باحسن اسماىه التي كانوا يسمونه بها في الدنيا حتى ينتهوا بها الى سماء الدنيا فيستفتحون له فيفتح له فيشيعه من كل سماء مقربوها الى السماء التي تليها حتى ينتهى بها الى السماء السابعة - فيقول الله عز وجل: اكتبوا كتاب عبدي في عليين واعيدوه الى الارض فاني منها خلقتهم وفيها اعيدهم ومنها اخرجهم تارة اخرى قال: فتعاد روحه فياتيه ملكان فيجلسانه فيقولون له: من ربك؟ فيقول: ربي الله فيقولون له: ما دينك؟ فيقول: ديني الاسلام فيقولان له: ما هذا الرجل الذي بعث فيكم؟ فيقول: هو رسول الله صلى الله عليه وسلم فيقولان له: وما علمك؟ فيقول: قرات كتاب الله فامنت به وصدقت فينادي مناد من السماء ان قد صدق فافرشوه من الجنة والبسوه من الجنة وافتحوا له بابا الى الجنة قال: «فياتيه من روحها وطيبها ويفسح له في قبره مد بصره» قال: وياتيه رجل حسن الوجه حسن الثياب طيب الريح فيقول: ابشر بالذي يسرك هذا يومك الذي كنت توعد فيقول له: من انت؟ فوجهك الوجه يجيء بالخير فيقول: انا عملك الصالح فيقول: رب اقم الساعة رب اقم الساعة حتى ارجع الى اهلي ومالي . قال: وان العبد الكافر اذا كان في انقطاع من الدنيا واقبال من الاخرة نزل اليه من السماء ملاىكة سود الوجوه معهم المسوح فيجلسون منه مد البصر ثم يجيء ملك الموت حتى يجلس عند راسه فيقول: ايتها النفس الخبيثة اخرجي الى سخط من الله قال: فتفرق في جسده فينتزعها كما ينتزع السفود من الصوف المبلول فياخذها فاذا اخذها لم يدعوها في يده طرفة عين حتى يجعلوها في تلك المسوح ويخرج منها كانتن ريح جيفة وجدت على وجه الارض فيصعدون بها فلا يمرون بها على ملا من الملاىكة الا قالوا: ما هذا الروح الخبيث؟ فيقولون: فلان بن فلان - باقبح اسماىه التي كان يسمى بها في الدنيا - حتى ينتهي بها الى السماء الدنيا فيستفتح له فلا يفتح له ثم قرا رسول الله صلى الله عليه وسلم (لا تفتح لهم ابواب السماء ولا يدخلون الجنة حتى يلج الجمل في سم الخياط) فيقول الله عز وجل: اكتبوا كتابه في سجين في الارض السفلى فتطرح روحه طرحا ثم قرا: (ومن يشرك بالله فكانما خر من السماء فتخطفه الطير او تهوي به الريح في مكان سحيق) فتعاد روحه في جسده وياتيه ملكان فيجلسانه فيقولان له: من ربك: فيقول: هاه هاه لا ادري فيقولان له: ما دينك؟ فيقول: هاه هاه لا ادري فيقولان له: ما هذا الرجل الذي بعث فيكم؟ فيقول: هاه هاه لا ادري فينادي مناد من السماء ان كذب عبدي فافرشوا له من النار وافتحوا له بابا الى النار فياتيه حرها وسمومها ويضيق عليه قبره حتى تختلف فيه اضلاعه وياتيه رجل قبيح الوجه قبيح الثياب منتن الريح فيقول ابشر بالذي يسووك هذا يومك الذي كنت توعد فيقول: من انت؟ فوجهك الوجه يجيء بالشر فيقول: انا عملك الخبيث فيقول: رب لا تقم الساعة وفي رواية نحوه وزاد فيه: اذا خرج روحه صلى عليه كل ملك بين السماء والارض وكل ملك في السماء وفتحت له ابواب السماء ليس من اهل باب الا وهم يدعون الله ان يعرج بروحه من قبلهم. وتنزع نفسه يعني الكافر مع العروق فيلعنه كل ملك بين السماء والارض وكل ملك في السماء وتغلق ابواب السماء ليس من اهل باب الا وهم يدعون الله ان لا يعرج روحه من قبلهم . رواه احمد

ব্যাখ্যা: (وَجَلَسْنَا حوله كَأَن على رؤوسنا الطَّيْرَ) আমরা তাঁর আশে পাশে বসেছিলাম মনে হয়। আমাদের মাথার উপর পাখি রয়েছে। এ বাক্যটি রূপক অর্থে বলা হয়েছে তথা নীরবতার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পেয়েছে। সে আমাদের কেউ নড়াচড়া করছে না এবং কোন কথাও বলছে না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বসার সম্মানার্থে। মর্মার্থ হল তাঁর উপস্থিতিতে আমরা বিনয়ীভাবে আদবের সাথে বসেছিলাম মনে হয়, এমতাবস্থায় পাখি আমাদের মাথার উপর বসে আছে আর পাখি নীরব নিথর বস্ত্তর উপর ছাড়া বসে না। আর সাহাবীরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়কে মূল্যায়ন করতেন কখনো তারা তাঁর সামনে কথা বলতেন হাসতেন তবে নাড়াচাড়া করতেন না।

(فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ) রূহ বের হয়ে আসে যেমন মশক হতে পানি বের হয়। উদ্দেশ্য খুব সহজে শরীর হতে রূহ বের হয়ে আসে।

মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, শরীরের অস্থি এবং রূহ সহজে বের হয়ে আসার বিষয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই বরং প্রথমটি দ্বিতীয়টির কারণে যেমন ব্যক্তির অনুশীলনতা এবং শরীরের দুর্বলতা ‘ইবাদাত চর্চার সময় রূহকে বেশি শক্তিশালী করে তোলে। আর ইবনে হাজার বলেন, কোন দ্বন্দ্ব নেই কঠিনতা হওয়া রূহ বের হওয়ার সময় অন্য সময় নয়, কেননা এমন অবস্থাটি রূহ বের হবার পূর্বের সময়।

(لم يدعوها في يده طرفة عين) ‘মুহূর্তের জন্য নিজের হাতে রাখেন না।’ ত্বীবী বলেন, বাক্যটি ইঙ্গিত করে যে, মালাকুল মাওত রূহ কবয করার সঙ্গে সঙ্গে তার সহযোগী মালাকের (ফেরেশতার) হাতে অর্পণ করে দেন যাদের কাছে জান্নাতের কাফন রয়েছে।

(اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ) ‘আমার বান্দার ঠিকানা ইল্লীয়্যিনে লিখা।’ বান্দা শব্দ উল্লেখ করেছেন তার সম্মানের জন্য আর কাফিরের ক্ষেত্র শুধু বলেছেন তার ঠিকানা বা কিতাব। ইল্লীয়্যিন বলতে মু’মিনদের খাতা বা রেজিস্টার বই আর মূলত তা সপ্তম আসমানে একটি স্থানের নাম যেখানে ভাল লোকদের কিতাব রয়েছে তথা ‘আমলের সহীফা। আবূ ত্বীবী বলেন, ইল্লীয়্যিন বলতে জান্নাতের ঘরসমূহ।

ইবনে হাজার বলেন, ইল্লীয়্যিন মু’মিনগণের রূহসূমহ রয়েছে আর সিজ্জীনে কাফিরদের রূহসমূহ রয়েছে।

(فَتُعَادُ رُوحُه فِي جَسَدِه)  ‘তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়’ হাদীসের ভাষ্যমতে রূহের ফিরিয়ে দেয়া হয় তার শরীরের সকল অংশে। সুতরাং এ বক্তব্য ধর্তব্য বলে বিবেচিত হবে না যে রূহ ফিরিয়ে দেয়া বলতে কিছু অংশে বা অর্ধেক অংশে এ দাবীর পক্ষে সহীহ দলীল প্রয়োজন।

(مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟)  ‘তোমাদের মধ্যে যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে?’ এভাবে উপস্থাপন করা হয় মূলত পরীক্ষার জন্য। বিষয়টি যেন এমন অনুধাবন না আসে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছবি সরাসরি মৃত ব্যক্তির সম্মানে উপস্থিত করা হয় আর এ ব্যাপারে কোন সহীহ বা দুর্বল হাদীসও বর্ণিত হয়নি। সুতরাং কবর পূজারীদের বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করা যাবে না। তাদের আরও বিশ্বাস মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার সময় স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরের বাইরে উপস্থিত হন।

(حتى ارجع الى اهلى) চোখ জুড়ানো হূরদের নিকট এবং ঢাকদের নিকট وقالى অট্টালিকা ও বাগানসমূহের নিকট এটা ব্যতিরেকে আরও অন্যান্য মাল যা বলতে মাল বুঝায়। পরিবার বলতে কারও নিকট মু’মিনদের নিকটস্থ লোক, মাল বলতে হূর ও অট্টালিকা।

মীরাক বলেনঃ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করার আবেদন বলতে যাতে সে পৌঁছতে পারে সেখানে যা তার জন্য আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন প্রতিদান ও মর্যাদা যেমন কাফিরের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করো না যাতে করে পলায়ন করতে পারে সে শাস্তি হতে যা তার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

(فينتزعها) জান কবযকারী মালাক (ফেরেশতা) তার রূহ বের করে কঠিনভাবে ও কষ্ট দিয়ে (السفود) লোহার চুলার মতো যার উপর গোশ্‌ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) ভূনা করা হয়।

لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَآءِ আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় না। যখন তারা আহবান করেন যেমন মুজাহিদ ও নাখ্‘ঈ বলেছেন কারও মতেঃ তাদের ‘আমল কবূল হয় না বরং তা ফেরত দেয়া হয়, অতঃপর তা তাদের চেহারার উপর ছুড়ে মারা হয়।

সিজ্জীনঃ কাফির ও শায়ত্বনদের। ‘আমলের সমষ্টির কিতাব কারও মতে তা এমন স্থান যা সাত জমিনের নীচে অবস্থিত আর তা ইবলীস ও অনুসারীদের থাকার স্থান।

(حَتّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُه) একদিকে পাঁজর অপরদিকে ঢুকে যাবে তথা ডান দিকের পাঁজর বামদিকের পাঁজরে এবং বামদিকের পাঁজর ডানদিকের পাঁজরে ঢুকে যাবে কবর কঠিন সংকচিত হওয়ার কারণে। আর মু’মিনের জন কবর সংকীর্ণ হল তা জমিনের আলিঙ্গন যেমন অধির আগ্রহী মা তার সন্তানের সাথে মুয়ানাকা বা আলিঙ্গন করে।

আর হাদীস সুস্পষ্ট দলীল যে প্রশ্নের সময় ক্ববরে মৃত ব্যক্তির নিকট রূহকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এটা সকল আহলে সুন্নাতের মাযহাব। ইবনে তায়মিয়্যাহ্ বলেন, মুতাওয়াতির হাদীস প্রমাণ করে প্রশ্নের সময় শরীরে রূহকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কোন দল বলেছে রূহ ছাড়া শুধুমাত্র শরীরকে প্রশ্ন করা হয়। জমহূর এ বিষয় অস্বীকার করেছেন এর বিপরীতে অন্য দল বলেছে শুধুমাত্র রূহকে প্রশ্ন করা শরীর ব্যতিরেকে এমন বলেছে। ইবনে মুররা ও ইবনু হাযম উভয়ে ভুলের মধ্যে রয়েছে আর সহীহ হাদীসসমূহ এর প্রতিবাদ করেছে। ইবনে ক্বইয়্যিম কিতাবুর রূহতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)