পরিচ্ছেদঃ ৩৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নফল সালাত
১৩২৩-[২] জাবির (রাঃ) ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (আল্লাহর নিকট) ’ইস্তিখারাহ্’ করার নিয়ম ও দু’আ এ রকম শিখাতেন, যেভাবে আমাদেরকে তিনি কুরআনের সূরাহ্ শিখাতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কোন লোক কোন কাজ করার সংকল্প করলে সে যেন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতীত দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় করে। তারপর এ দু’আ পড়ে-
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বি’ইলমিকা ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আস্আলুকা মিন ফাযলিকাল ’আযীমি ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা- আক্বদিরু ওয়া তা’লামু ওয়ালা- আ’লামু ওয়া আন্তা ’আল্লা-মুল গুয়ূব, আল্ল-হুম্মা ইন্ কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা খয়রুল লী ফী দীনী ওয়ামা ’আ-শী ওয়া ’আ-ক্বিবাতি আমরী আও ক্বা-লা ফী ’আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বা-রিক লী ফীহি ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী ওয়ামা ’আ-শী ওয়া ’আ-ক্বিবাতি আমরী আও ক্বা-লা ফী ’আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাসরিফহু ’আন্নী ওয়াসরিফনী ’আনহু ওয়াক্ব দুরলিয়াল খয়রা হায়সু কা-না সুম্মা আরযিনী বিহী’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জানার ভিত্তিতে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার নিকট নেক ’আমল করার শক্তি প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট তোমার মহা ফজল চাই। এজন্য তুমিই সকল কাজের শক্তি দাও। আমি তোমার ইচ্ছা ব্যতীত কোন কাজ করতে পারব না। তুমি সব কিছুই জানো। আমি কিছুই জানি না। সব গোপন কথা তোমার জানা। হে আল্লাহ! তুমি যদি ইচ্ছা করো এ কাজটি (উদ্দেশ্য) আমার জন্যে আমার দীনে, দুনিয়ায়, আমার জীবনে, আমার পরকালে অথবা বলেছেন, এ দুনিয়ায় ঐ দুনিয়ার ভাল হবে, তাহলে তা আমার জন্যে ব্যবস্থা করে দাও। আমার জন্য তা সহজ করে দাও। তারপর আমার জন্য বারাকাত দান করো। আর তুমি যদি এ কাজকে আমার জন্য আমার দীন, আমার জীবন, আমার পরকাল অথবা বলেছেন, আমার ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর মনে করো, তাহলে আমাকে তার থেকে, আর তাকে আমার থেকে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্যে যা কল্যাণকর তা করে দাও। অতঃপর এর সঙ্গে আমাকে রাজী করো।)।
হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, ’এ কাজটি’ বলার সময় দরকারের ব্যাপারটি স্মরণ করতে হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ التَّطَوُّعِ
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُورِ كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ يَقُولُ: إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيضَةِ ثُمَّ لْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّك تَقْدِرُ وَلَا أقدر وَتعلم وَلَا أعلم وَأَنت علام الغيوب اللَّهُمَّ إِنَّ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أوقال فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقَدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ . قَالَ: «ويسمي حَاجته» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ইস্তিখারাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কার্য সম্পাদন ও বর্জনের দিক দিয়ে দু’টি বিষয়ের কল্যাণকরটি অনুসন্ধান করা, যে দু’টির একটির দিকে বান্দা মুখাপেক্ষী। (فِي الْأُمُورِ) এর দ্বারা সামনে আগন্তুক কতকগুলো বিষয় যথা, বাড়ী স্থানান্তর, বিবাহ, ভিত্তি স্থাপন ইত্যাদি। তবে এর দ্বারা খাওয়া বা পান করার বিষয়গুলো উদ্দেশ্য নয়।
ইবনু আবী জামারাহ্ (রহঃ) বলেনঃ সেটা ‘আম, কিন্তু এর দ্বারা খাস উদ্দেশ্য। সুতরাং ওয়াজিব, মুস্তাহাব কাজ করার ব্যাপারে কোন ইস্তিখারাহ্ নেই, অনুরূপ হারাম মাকরূহ বর্জনের ক্ষেত্রে কোন ইস্তিখারাহ্ নেই। কাজেই ইস্তিখারার বিষয়টি বৈধ বস্ত্তর মধ্যই সীমাবদ্ধ।
তবে মুস্তাহাব বিষয়ের ক্ষেত্রে যখন দু’টি বিষয় সাংঘর্ষিক হবে তখন যে কোন একটি প্রথমে শুরু করবে এবং তার উপরই দৃঢ় তা পোষণ করবে। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, যে সকল ওয়াজিব ও মুস্তাহাব বিষয়ের সময়ের প্রশস্ততা রয়েছে, (হাজ্জ, ‘উমরাহ্) সে সব ওয়াজিব ও মুস্তাহাবে কল্যাণ অনুসন্ধান তথা ইস্তিখারার অন্তর্ভুক্ত হবে।
(مِنْ غَيْرِ الْفَرِيْضَةِ) এখান থেকে দলীল হলো ফরয সালাতের পর ইস্তিখারার দু‘আ পড়ার মাধ্যমে ইস্তিখারাহ্ সালাতের সুন্নাত আদায় হবে না। কেননা আলোচ্য বক্তব্যে (بِغَيْرِ الْفَرِيْضَةِ) দ্বারা তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
তবে আল্লামা ইরাক্বী (রহঃ) বলেছেন যে, যদি কেউ সুন্নাত কিংবা নফল সালাত ইস্তিখারার নিয়্যাত ছাড়াই শুরু করে এবং সালাতের শেষে ইস্তিখারার দু‘আ পড়ার মাধ্যমে তার নিয়্যাত পরিবর্তন করে তবে ইস্তিখারাহ্ আদায় হবে।
নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, ইস্তিখারার পর অন্তরে যা বিকশিত হবে বা প্রাধান্য পাবে তাই করবে- (আল আযকার- ৯৩ পৃঃ)। আল্লামা শাওকানী (রহঃ) নাবাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ইস্তিখারার পূর্বে যার উপর আন্তরিক প্রাধান্য ছিল ইস্তিখারার পর তার উপর নির্ভর করা সমুচীন নয়, বরং ইস্তিখারাকারীকে ইস্তিখারার সময় অবশ্যই প্রাধান্য বিষয় পরিত্যাগ করতে হবে, তা না হলে ইস্তিখারাহ্ আল্লাহর জন্য হবে না, তা হবে প্রবৃত্তির ইস্তিখারাহ্। (যা সম্পূর্ণ শির্কের অন্তর্ভুক্ত)
মির্‘আত প্রণেতা বলেনঃ আমার নিকট গ্রহণীয় ও প্রাধান্য মত হলো ইস্তিখারাহ্ সালাত আদায়কারী ইস্তিখারার পর যে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে এবং যে ব্যাপারে দৃঢ় হবে তাই করবে। কারণ আমার নিকট বিষয়টি আন্তরিক বিকাশ বা স্বপ্নের উপর নির্ভরশীল নয়। কেননা হাদীসে আন্তরিক প্রাধান্য, সালাতের পর ঘুম ও স্বপ্নের মাধ্যমে কল্যাণকর বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া মর্মে কোন শর্ত নেই। (আল্লাহই ভাল জানেন)