১৩২২

পরিচ্ছেদঃ ৩৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - নফল সালাত

সকল প্রকার নফল সালাত, যেগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, যথাক্রমে সালাতুল তাহ্ইয়্যাতুল উযূ, সালাতুন ইস্তিখারাহ্, তওবা্, সালাতুল হাজাত এবং সালাতুত্ তাসবীহ।

التَّطَوُّعِ শব্দটি الطوع، والطاعة শব্দ হতে গৃহীত অর্থ মান্য করা, বাস্তবায়ন করা, মেনে নেয়া ইত্যাদি এবং التَّطَوُّعِ শব্দটি ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত সকল নফলের উপর মুত্বলাক (তালাক)্ব (সকল নফলের ক্ষেত্রে এ শব্দটি প্রযোজ্য) আর যে বা যারা ফরয কিংবা ওয়াজিবের উপর অতিরিক্ত ’আমলুস্ সালিহ বা সৎকর্ম সম্পাদন করে তাকে (مُتَطَوِّعِ) বলা হয়।


১৩২২-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাতের সময়ে ইরশাদ করলেনঃ হে বিলাল! ইসলাম কবূল করার পর তুমি এমনকি ’আমল করেছ যার থেকে অনেক সাওয়াব হাসিলের আশা করতে পার। কেননা, আমি আমার সম্মুখে জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। (এ কথা শুনে) বিলাল বললেন, আমি তো অনেক আশা করার মতো কোন ’আমল করিনি। তবে রাত্রে বা দিনে যখনই আমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছি, আমার সাধ্যমতো সে উযূ দিয়ে আমি (তাহ্ইয়্যাতুল উযূর) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ التَّطَوُّعِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ: «يَا بِلَالُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عمل عملته فِي الْإِسْلَام فَإِنِّي سَمِعت دق نعليك بَين يَدي الْجَنَّةِ» . قَالَ: مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي أَنِّي لم أتطهر طهُورا مِنْ سَاعَةٍ مِنْ لَيْلٍ وَلَا نَهَارٍ إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لبلال عند صلاة الفجر: «يا بلال حدثني بارجى عمل عملته في الاسلام فاني سمعت دق نعليك بين يدي الجنة» . قال: ما عملت عملا ارجى عندي اني لم اتطهر طهورا من ساعة من ليل ولا نهار الا صليت بذلك الطهور ما كتب لي ان اصلي

ব্যাখ্যা: হাদীসে বিলাল বলতে বিলাল ইবনু রাবাহ, যিনি মুয়াযযিন ছিলেন। ফাজ্‌র (ফজর) সালাতের সময় তথা যে সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজ দেখা স্বপ্নের বর্ণনা দিতেন এবং সাহাবায়ে কিরামগণের দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতেন। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কথা তথা ‘ফাজ্‌র (ফজর) সালাতের সময়’ ইঙ্গিত করে যে, নিশ্চয় আলোচ্য ঘটনাটি স্বপ্নে ঘটেছে, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভ্যস্ত ছিলেন যে, তাঁর দেখা স্বপ্ন বর্ণনা করতেন ও সাহাবায়ে কিরামগণের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতেন ফাজ্‌র (ফজর) সালাতের পর।

(فَإِنِّي سَمِعْتُ دَقَّ نَعَلَيْكَ بَيْنَ يَدَيِ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ রাত্রিতে এখানে ও ঐ ইঙ্গিত রয়েছে যে, ঘটনাটি স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছে এবং এর উপর এটাও প্রমাণ করে যে, জান্নাতে নাবীগণ ছাড়া মৃত্যুর পূর্বে কেউ প্রবেশ করেনি, যদিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজের রাত্রিতে জাগ্রত অবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু বিলাল (রাঃ) তো নিশ্চয়ই প্রবেশ করেননি এবং এ মর্মে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস বুখারীতে মানাকিব বা মর্যাদার পর্বে ‘উমার (রাঃ)-এর অধ্যায়ের প্রথম হাদীস- ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি আওয়াজ শুনতে পেলাম, বলা হলো ইনি বিলাল (রাঃ) এবং একটি প্রাসাদ দেখলাম যার আঙ্গিনায় ঝর্ণাধারা। অতঃপর বলা হলো এটা ‘উমার (রাঃ)-এর জন্য।’ এছাড়াও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে মারফূ‘ভাবে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে আমি নিজকে জান্নাতে দেখলাম, তাতে দেখি এক মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করছে, অতঃপর বলা হলো যে, এটি ‘উমার (রাঃ)-এর জন্য।

সুতরাং জানা গেল যে, আলোচ্য ঘটনা স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছে, আর নাবীগণের স্বপ্ন সর্বদাই ওয়াহী আর এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন, (دَقَّ نَعَلَيْكَ) এ ব্যাপারে হুমায়দী (রহঃ) বলেনঃ دَقَّ হলো হালকা নড়াচড়া। খলীল (রহঃ) বলেন, পাখি পায়ের উপর দাঁড়ানো অবস্থায় বাহুদ্বয় নড়াচড়া করতে যে আওয়াজ হয় তাকে (دَقٌّ) বলা হয়। আলোচ্য হাদীস প্রমাণ করে যে, এ সালাত (তাহ্ইয়্যাতুল উযূ) মাকরূহ সময়েও আদায় করা জায়িয। আত্ তিরমিযীতে বুরায়দাহ্ এবং ইবনু খুযায়মাহ্ (রাঃ)-এর অনুরূপ ঘটনা সংক্রান্ত হাদীস রয়েছে যে,

বিলাল (রাঃ) বলেন, যখন উযূ ভঙ্গ হত তখনই আমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতাম। আহমাদে রয়েছে, উযূ করে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতাম। প্রমাণিত হয় যে, তিনি যে কোন সময়ে উযূ ভঙ্গ হলেই উযূ করে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)