১৩০২

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০২-[৮] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্’আত তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম (কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্‌রের (ফজরের) নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম। (মালিক)[1]

وَعَن السَّائِب بن يزِيد قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً فَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَا مِنْ طُولِ الْقِيَامِ فَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ. رَوَاهُ مَالك

وعن الساىب بن يزيد قال: امر عمر ابي بن كعب وتميما الداري ان يقوما للناس في رمضان باحدى عشرة ركعة فكان القارى يقرا بالمىين حتى كنا نعتمد على العصا من طول القيام فما كنا ننصرف الا في فروع الفجر. رواه مالك

ব্যাখ্যা: (إِحْدى عَشْرَةَ رَكْعَةً) এটি একটি বক্তব্য যে, ‘উমার (রাঃ) ক্বিয়ামে রমাযানের উপর মানুষ একত্রিত করেছিলেন এবং তাদেরকে বিতরসহ এগার রাক্‘আত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার যামানায় সাহাবী এ তাবি‘ঈনগণ পূর্বে আলোচিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস অনুপাতে এগার রাক্‘আত তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান কিংবা অন্য মাসে এগার রাক্‘আতের বেশী রাতের সালাত আদায় করতেন না এবং জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে রমাযান মাসে আট রাক্‘আত (সালাতুল লায়ল) আদায় করতেন।

আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) ‘শারহুল বুখারী’ গ্রন্থের ১১ খন্ডের ১২৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, রমাযানের ক্বিয়াম (কিয়াম) বা তারাবীহ মুস্তাহাব, রাক্‘আত সংখ্যা সম্পর্কে ‘উলামাদের মাঝে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।

(১) কেউ বলেছেন তারাবীহের রাক্‘আত সংখ্যা ৪১ রাক্‘আত, আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘আবদুল বার আল ইস্তিযকার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ৪০ রাক্‘আত তারাবীহ ও ৭ রাক্‘আত বিতর পড়তেন,

(২) কারো কারো মতে ক্বিয়ামে রমাযান ৩৮ রাক্‘আত,

(৩) কারো কারো মতে ৩৬ রাক্‘আত,

(৪) কারো মতে ৩৪ রাক্‘আত,

(৫) কারো মতে ২৮ রাক্‘আত,

(৬) কারো মতে ২৪ রাক্‘আত,

(৭) কারো মতে ২০ রাক্‘আত, ইমাম আত্ তিরমিযী অধিকাংশ বিদ্বানদের থেকে বর্ণনা করেছেন এবং এটাই হানাফীদের কথা,

(৮) কারো মতে ক্বিয়ামে রমাযান বা তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিতরসহ এগারো রাক্‘আত এবং এ মতই ইমাম মালিক (রহঃ) তার নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, ইবনু আরাবী ও এ মতকেই পছন্দ করেছেন। আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) তার ‘আল মাসাবীহ ফী সালাতিত্ তারাবীহ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের সাথী ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) ১১ রাক্‘আতের জামা‘আত চালু করেছিলেন। এটাই আমার নিকট পছন্দনীয় অভিমত এবং এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, বিতর সহ কি ১১ রাক্‘আত? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ! এবং তিনি বলেন যে, এই যে রাক্‘আতের আধিক্য (১১, ৩৮, .....) কথায় হতে বর্ণনা করা হয়েছে তা আমি জানি না।

তিরমিযীর ব্যাখ্যায় আল্লামী ‘ইরাক্বী (রহঃ) বলেন, সর্ব প্রসিদ্ধ প্রাধান্য ও পছন্দনীয় এবং দলীলগত দিক দিয়ে অধিক মজবুত মত হলো সর্বশেষ মত যা ইমাম মালিক (রহঃ) নিজের জন্য পছন্দ করছেন তা হলো ১১ রাক্‘আত এবং এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং সেটার প্রতি (১১ রাক্‘আত তারাবীহ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট মতগুলোর একটিও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং খুলাফায়ে রাশিদীনদের পক্ষ থেকে এ মর্মে বিশুদ্ধ আসারেও কোন নির্দেশ প্রমাণিত হয়নি। এরপর তিনি (ইরাকী) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও জাবির (রাঃ)-এর ১১ রাক্‘আত সংক্রান্ত হাদীসদ্বয় উল্লেখ করেছেন।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ

কতিপয় লোকদের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় যে, তারাবীহের সালাত ২০ রাক্‘আতের ক্ষেত্রে ইজমা তথা ‘উলামাগণের ঐকমত্য রয়েছে এবং বিভিন্ন শহরে এটারই বাস্তবায়ন রয়েছে।

জবাবে আমাদের শাইখ আল্লামা ইরাকী (রহঃ) বলেন, কিয়ামে রমাযান বা তারাবীহ ২০ রাক্‘আত এবং তা বিভিন্ন শহরে বাস্তবায়িত হওয়ার দাবি করাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এটা কিভাবে সম্ভব? অথচ আমরা আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ)-এর কথায় জেনেছি। এ ব্যাপারে অনেক বক্তব্য বা মতামত রয়েছে, নিশ্চয় ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন যে, এ ‘আমল অর্থাৎ ৩৮ রাক্‘আত ক্বিয়ামে রমাযান ও এক রাক্‘আত বিতরের উপর ‘আমল শতাধিক বছর পূর্ব হতে আজ অবধি মদীনায় প্রচলিত ছিল এবং তিনি নিজ শহরের জন্য বিতর সহ ১১ রাক্‘আত মনোনীত করেছেন এবং আস্ওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ আন নাখ‘ঈর মত শ্রেষ্ঠ ফক্বিহ, ৪০ রাক্‘আত তারাবীহ ও ৭ রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন,আরো অবশিষ্ট মত যা ‘আয়নী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন (৩৮, ৩৬, ৩৪, ২৮, ২৪ ..... রাক্‘আত) তাহলে ২০ রাক্‘আত ক্বিয়ামে রমাযান বা তারাবীহের অস্তিত্ব থাকল কোথায় বিভিন্ন শহরে এর (২০ রাক্‘আত তারাবীহ) বাস্তবায়নই বা থাকল কোথায়?


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)