১৩০১

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১৩০১-[৭] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আবদুল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রমাযান মাসের রাত্রে ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর সঙ্গে আমি মসজিদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মানুষ অমীমাংসিত বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। কেউ একা একা নিজের সালাত আদায় করছে। আর কারো পেছনে ছোট একদল সালাত আদায় করছে এ অবস্থা দেখে ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি যদি সকলকে একজন ইমামের পেছনে জমা করে দেই তাহলেই চমৎকার হবে। তাই তিনি এ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে ফেললেন এবং সকলকে উবাই ইবনু কা’ব-এর পেছনে জমা করে তাকে তারাবীহ সালাতের জন্যে লোকের ইমাম বানিয়ে দিলেন।

’আবদুর রহমান বলেন, এরপর আমি একদিন ’উমারের সঙ্গে মসজিদে গেলাম। সকল লোককে দেখলাম তারা তাদের ইমামের পেছনে (তারাবীহের) সালাত আদায় করছে। ’উমার (রাঃ) তা দেখে বললেন, ’’উত্তম বিদ্’আত’’। আর তারাবীহের এ সময়ের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তোমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময়ের সালাতের চেয়ে ভাল। এ কথার দ্বারা ’উমার (রাঃ) বুঝাতে চেয়েছেন শেষ রাতকে। অর্থাৎ তারাবীহের রাতের প্রথমাংশের চেয়ে শেষাংশে আদায় করাই উত্তম। ঐ সময়ের লোকেরা তারাবীহের সালাত প্রথম ভাগে আদায় করে ফেলতেন। (বুখারী)[1]

عَن عبد الرَّحْمَن بن عبد الْقَارِي قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ لَيْلَةً فِي رَمَضَان إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عمر: إِنِّي أرى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلَاءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْب ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلَاة قارئهم. قَالَ عمر رَضِي الله عَنهُ: نعم الْبِدْعَةُ هَذِهِ وَالَّتِي تَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي تَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يقومُونَ أَوله. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن عبد الرحمن بن عبد القاري قال: خرجت مع عمر بن الخطاب ليلة في رمضان الى المسجد فاذا الناس اوزاع متفرقون يصلي الرجل لنفسه ويصلي الرجل فيصلي بصلاته الرهط فقال عمر: اني ارى لو جمعت هولاء على قارى واحد لكان امثل ثم عزم فجمعهم على ابي بن كعب ثم خرجت معه ليلة اخرى والناس يصلون بصلاة قارىهم. قال عمر رضي الله عنه: نعم البدعة هذه والتي تنامون عنها افضل من التي تقومون. يريد اخر الليل وكان الناس يقومون اوله. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) তাদের পুরুষগণকে ১৪ হিজরীতে তারাবীহের এক জামা‘আত প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত করলেন এবং উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে মুসল্লীদের সাথে তারাবীহের সালাত আদায়ের ইমাম নিযুক্ত করলেন যেন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কথা (কুরআনুল কারীম সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ক্বওমের ইমাম নিযুক্ত হবে) উপরেই ‘আমল করলেন।

‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেনঃ আমাদের ক্বারী হলেন উবাই (রাঃ)।

(نعمت البدعة) বুখারীর অপর বর্ণনায় (نعم البدعة) অর্থাৎ ت ছাড়া। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) কোন কোন রিওয়ায়াতে (نعمت البدعة) তথা ت বৃদ্ধি করেছেন। هذه এর দ্বারা বড় জামা‘আত উদ্দেশ্য বৃহৎ জামা‘আত, মূল তারাবীহ কিংবা তারাবীহের জামা‘আত উদ্দেশ্য নয়। কেননা এ দু’টিই (জামা‘আত ও তারাবীহ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম থেকেই সাব্যস্ত রয়েছে। ইমাম তাক্বীউদ্দীন ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) মিনহাজু সুন্নাহয় বলেছেন যে, এ কথা প্রমাণিত রয়েছে যে, মানুষগণ রমাযানের রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জামা‘আতবদ্ধভাবে আদায় করতেন এবং এটাও প্রমাণিত রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দু’দিন কিংবা তিনদিন রমাযানের রাতের সালাত আদায় করেছেন।

শাতুবী (রহঃ) আল ই‘তিসাম গ্রন্থে বলেন, রমাযান মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে তারাবীহের সালাত আদায় করা ও মুসল্লীদের তাঁর পিছনে জমায়েত হওয়ার দ্বারা তারাবীহের জামা‘আতের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে । সহীহ হাদীসে রয়েছে,

أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - صلى ذات ليلة في المسجد، فصلى بصلاته ناس.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। এ সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, রমাযানে জামা‘আতের সাথে রাতের সালাত আদায় করা সুন্নাত। কেননা রমাযান মাসে রাতের সালাতে মসজিদে জামা‘আত করার ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিয়ামই সর্বোত্তম দলীল। আর ফরয হওয়ার আশংকায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামা‘আতে অংশগ্রহণ না করাটা মুত্বলাক্বভাবে তারাবীহ নিষেধের দলীল নয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানা ছিল ওয়াহী নাযিল হওয়ার যামানা, শার‘ঈ বিধান নাযিলের যামানা। কাজেই লোকজন যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সংঘবদ্ধভাবে কোন ‘আমল করবে তখন তা ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে আবশ্যক হয়ে যেতে পারে। সুতরাং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের মধ্য দিয়ে শার‘ঈ বিধান নাযিলের সম্ভাবনা দূর হয়ে গেল, তখন বিষয়টি মূলের দিকেই ফিরে যাবে এবং তার বৈধতাই অটুট থাকবে।

যদি কেউ বলেন যে, ‘উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতকে বিদ্‘আত বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাকে উত্তম বলেছেন (نعمت البدعة هذه) বলার মাধ্যমে। কাজেই শারী‘আতে মধ্যে বিদ্‘আতে হাসানাহ্ মুত্বলাক্বভাবেই সাব্যস্ত হচ্ছে।

তার উত্তরে বলব যে, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বিদ্‘আত (بدعة) শব্দটি উচ্চারণ করেছেন বাহ্যিক অবস্থার দিক লক্ষ্য করে, কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (তারাবীহের সালাত) খন্ড জামা‘আতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর যামানায় তা (বড় জামা‘আত) চালু হয়নি এ দৃষ্টিকাণ থেকে তিনি بدعة বিদ‘আত বলেছেন, অবশ্যই তা অর্থগত বিদ‘আত নয়। কাজেই এর ভিত্তিতে বিদ‘আতে হাসানাহ নামকরণের কোন যুক্তিকতা নেই।

ইবনু রজব তার শারহু আল খামসিন গ্রন্থের ১৯১ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, ‘উলামাগণ বিদ্‘আতের কতকগুলোকে যে হাসানাহ্ বলে সম্বোধন করেছেন তা মূলত বিদ্‘আত আল লাগবিয়াহ্ (بدعة اللغوية), তা শারী‘আত নয়, (‘‘বিদ্‘আতে হাসানাহ্’’ শার‘ঈ কোন পরিভাষা নয়) ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) যে (بدعة) শব্দটি উচ্চারণ করেছেন তা শব্দগত উচ্চারণ, অবশ্যই তা শার‘ঈ কোন বিদ‘আত (بدعة) নয়। কারণ শার‘ঈ বিদ‘আত হলো গোমরাহী, যা শার‘ঈ কোন প্রমাণ ছাড়াই করা হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলা যা ভালবাসেন না তা ভালবাসা বা মুস্তাহাব মনে করা, আল্লাহ তা‘আলা যা ওয়াজিব করেননি তা ওয়াজিব হিসেবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেননি তা হারাম করা।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, ‘উমার (রাঃ)-এর প্রকাশ্য ঘোষণা যে, রাতের সালাত শেষ রাতে আদায় করাটা রাতের প্রথমাংশে আদায়ের চাইতে উত্তম। তবে এটার দ্বারা এ দলীল সাব্যস্ত হচ্ছে না যে, একক সালাত তথা রাত্রের সালাত একাকী আদায় করা জামা‘আতের চেয়ে উত্তম আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, এটা এ মর্মে সতর্কবাণী যে, নিশ্চয় তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ রাত্রে আদায় করা উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)