১২২৩

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্বিয়ামুল লায়ল-এর প্রতি উৎসাহ দান

১২২৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান বারাকাতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ’যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব।’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, তারপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন এবং বলেন, কে আছে যে এমন সত্তাকে কর্য দেবে যিনি ফকীর নন, না অত্যাচারী এবং সকাল পর্যন্ত এ কথা বলতে থাকেন।

بَابُ التَّحْرِيْضِ عَلى قِيَامِ اللَّيْلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ؟ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ؟
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: ثُمَّ يَبْسُطُ يَدَيْهِ وَيَقُولُ: «مَنْ يُقْرِضُ غَيْرَ عَدُومٍ وَلَا ظَلُومٍ؟ حَتَّى ينفجر الْفجْر»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة الى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الاخر يقول: من يدعوني فاستجيب له؟ من يسالني فاعطيه؟ من يستغفرني فاغفر له؟ وفي رواية لمسلم: ثم يبسط يديه ويقول: «من يقرض غير عدوم ولا ظلوم؟ حتى ينفجر الفجر»

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার আসমানে অবতরণের ধরণ ও প্রকৃতি হলো তার পবিত্র স্বকীয় সত্ত্বার জন্য যেভাবে শোভন সেভাবেই। এর অর্থ এতটুকু গ্রহণ করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। রাতের শেষ তৃতীয়াশং হলো দু‘আ কবূলের সময় এবং ব্যাপক রহমাতের ও মাগফিরাতের অনুপম মুহূর্ত। আল্লাহর রহমাত কল্যাণ ও মাগফিরাত অনুসন্ধানীর জন্য উচিত হলো তা গ্রহণ করা এবং তা যেন কোনভাবেই ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা। আরো কর্তব্য হলো শারী‘আতের এই সীমাতে পরিতুষ্ট থাকা এর অতিরিক্ত না করা। সমস্যা দেখা দিয়েছে ‘অবতরণ’ নিয়ে, কেননা অবতরণ হলো স্বশরীরে উপর থেকে নিচে স্থানান্তরিত হওয়া, অথচ আল্লাহ এ থেকে পবিত্র। মুহাদ্দিসগণ এ জাতীয় হাদীসকে ‘মুতাশা বিহাতে’র অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকেন। ‘উলামাগণ এক্ষেত্রে দু’দলে বিভক্ত হয়েছেন, প্রথম দল তারা এটাকে ইজমালীভাবে নিয়ে এর প্রকৃতি ও ধরণকে যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে রেখে এর অর্থকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করেছেন। এটা মু’মিনদের একটি দলের মত যারা আল্লাহকে ধরণ ও প্রকৃতি থেকে পবিত্র মনে করেন, জমহূর ‘উলামাহ্ এবং আয়িম্মায়ে আরবাআর এটাই মত।

দ্বিতীয় আরেক দল এর তাবিল ও ব্যাখ্যাকারী দল। তারা এ জাতীয় কথার নানা ব্যাখ্যা করে থাকেন, যেমনঃ তারা বলেন, আল্লাহর অবতরণ হলো তার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার নির্দেশ নিয়ে অবতরণ করা; অথবা এটি আল্লাহ তার রহমাত, অনুগ্রহ দ্বারা দু‘আকারীর দু‘আ এবং আশ্রয় প্রার্থনাকারীর আহবান শোনার জন্য এবং তা কবূলের জন্য এগিয়ে আসার একটি ইঙ্গিতমূলক রূপক কথা। ক্বাযী বায়যাবী বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর অঢেল ও পরিপূর্ণ রহমাত। কেউ কেউ তাবিল করতে করতে সীমালঙ্ঘন করে ফেলেছেন, এমনকি এটাকে তারা তাহরীফ বা বিকৃত করে ফেলেছে। এরা হলো মুশাবিবহী সম্প্রদায়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ বিকৃত চিন্তার বহু ঊর্ধ্বে।

আবার আরেক শ্রেণীর লোক তারা এতদসংক্রান্ত হাদীসগুলোকেই অস্বীকার করে থাকে, এরা হলো খারিজী এবং মুতাযিলা সম্প্রদায়। এরা কুরআনের মধ্যে তাবিল পর্যন্ত করে থাকে, অবশ্য অজ্ঞতা এবং হঠকারিতার কারণেই তারা এ কাজ করে থাকে।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট হক হলো জমহূর সালাফগণ যা গ্রহণ করেছেন। কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে সহীহায় ইজমালীভাবে যা বিধৃত হয়েছে আমরা তার প্রতি ঈমাণ গ্রহণ করি, আর আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয়া এবং তার ধরণ প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে পবিত্র মনে করি। আমরা অহেতুক তাবিল থেকে বিরত থেকে তার প্রতি ঈমান রাখাই জরুরী মনে করি। আল্লাহ তা‘আলার নাযিল হওয়া সংক্রান্ত হাদীস এবং সাদৃশ্য বিষয়ক বর্ণনাগুলো নিয়ে আমাদের পূর্বসুরী ইমামগণ যেমন ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্, হাফিয ইবনুল ক্বইয়্যূম হাফিয যাহাবী বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রত্যেক রাতেই অবতরণ বলতে রাতের নির্দিষ্ট কিছু সময় আর সেটা হলো রাতের শেষ প্রহর। অবশ্য সেই নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ছয়টি মতামত রয়েছে।

প্রথম মতটি যা এ হাদীসেই বলা হয়েছে অর্থাৎ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এটি এতদসংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অধিক সহীহ বর্ণনা। হাফিয ইরাক্বীও এমন কথাই বলেছেন।

দ্বিতীয় মতঃ দ্বিতীয় মত হলো রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে। ইমাম মুসলিম এবং তিরমিযী এ মতামতই পেশ করেছেন।

তৃতীয় মতঃ যখন রাতের শেষ অর্ধ অবশিষ্ট থাকে।

চতুর্থ মতঃ চতুর্থ দলের মতে রাতের বড় একটা অংশ চলে গেলে অথবা শেষ তৃতীয়াংশে।

পঞ্চম মতঃ যখন রাতের অর্ধেক অথবা তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়।

ষষ্ঠ মতঃ এ সময়টি মুতলাক্ব, এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন সময় নেই।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকম বর্ণনার প্রেক্ষিতে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সময় সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, যখন যেটা প্রয়োজন সেটা বলেছেন।

মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেন, কোন বর্ণনা কোন বর্ণনার পরিপন্থী নয় কারণ হতে পারে আল্লাহ আজকে রাতে প্রথম প্রহরে, পরের দিন অর্ধ রাতে তার পরদিন শেষ রাতে অবতরণ করেন ইত্যাদি।

ইবনু হাজার আস্ক্বালানী (রহঃ) বলেন, হতে পারে আল্লাহ একই রাতে বারবার অবতরণ করেন প্রথম প্রহরে মধ্যরাতে শেষ রাতে ইত্যাদি। সুতরাং কোন হাদীস কোন হাদীসের বিরোধী নয়। এরপর দু‘আ, সাওয়াল (চাওয়া) এবং ইস্তিগ্ফার (ক্ষমা প্রার্থনা) মোট তিনটির কথা বলা হয়েছে; এগুলো শব্দ পার্থক্য মাত্র অর্থ একই এর উদ্দেশ্যও এক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)