পরিচ্ছেদঃ ৩৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্বিয়ামুল লায়ল-এর প্রতি উৎসাহ দান
১২২২-[৪] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়িয়ে গিয়ে এ কথা বলতে বলতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন, ’সুবহা-নাল্ল-হ’ আজ রাত্রে কত ধন-সম্পদ অবতরণ করা হয়েছে। আর কত ফিতনাহ্ অবতরণ করা হয়েছে। হুজরাবাসিনীদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিবে কে? তিনি এর দ্বারা তাঁর স্ত্রীদেরকেই বুঝিয়েছেন। যেন তারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। কত মহিলা দুনিয়ায় কাপড় পরিধান করে আছে, কিন্তু আখিরাতে তারা উলঙ্গ থাকবে। (বুখারী)[1]
بَابُ التَّحْرِيْضِ عَلى قِيَامِ اللَّيْلِ
وَعَن أم سَلمَة قَالَتْ: اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَزِعًا يَقُولُ: «سُبْحَانَ اللَّهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْخَزَائِنِ؟ وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الْفِتَنِ؟ مَنْ يُوقِظُ صَوَاحِبَ الْحُجُرَاتِ» يُرِيدُ أَزْوَاجَهُ «لِكَيْ يُصَلِّينَ؟ رُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الْآخِرَة» أخرجه البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীতু হয়ে পড়ছিলেন। এ ভয় ছিল তিনি যে ভয়াবহ দৃশ্য দর্শন করেছিলেন তা দেখে। সেটি ছিল নানা ‘আযাব ও গযব সেটাকেই (فِتَنِ) ‘ফিতান’ শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মালাকগণের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ‘আযাব-গযবের সংবাদ পেশ, যা আল্লাহর কাছে নির্ধারিত রয়েছে এবং অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন স্বপ্নে তাই দেখছিলেন যে এখনই তা ক্বায়িম হতে যাচ্ছে। অনুরূপভাবে তার কাছে (বিশ্বের সমস্ত) ধন-ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। অথবা আল্লাহ তা‘আলা তার নিদ্রার পূর্বে ওয়াহী দ্বারা তাকে অবহিত করেছিলেন সেটাকেই তিনি ‘মা-যা- উনযিলাল লাইলাতা মিনাল খাযা-য়িনি’ শব্দে প্রকাশ করেছেন। এটা আল্লাহর রসূলের মু‘জিযাসমূহের একটি মু‘জিযা বিশেষ। এই ধন ভান্ডার হতে পারে রোম ও পারস্যের ধন ভান্ডার কেনানা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে খবর দিয়েছেন যা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র স্ত্রীগণ সালাতের মাধ্যমে রাতের ফিতনাসমূহ থেকে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন এজন্য তিনি সর্বাগ্রে তাদের প্রতিই উদ্দেশ্য করেছেন। আরো একটি কারণ হলো যে সময় তিনি রাতে অবতীর্ণ ফিতনাহ্ দর্শন করেছিলেন এবং তা ব্যক্ত করেছিলেন সে সময় উম্মুল মু’মিনীনগণই উপস্থিত ছিলেন। অথবা এ নাসীহাতের বিশ্বজনীন ঘোষণা নিজ পরিবার দিয়েই শুরু করেছেন। এ হাদীস থেকে আরো প্রতীয়মান হয় যে, এই জাগানোটা ছিল রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের লক্ষ্যে অন্যথায় শুধু খবর দেয়ার জন্যই হলে তিনি দিনের বেলায় তা দিতে পারতেন। রাতের সালাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করা সংক্রান্ত এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাত্রিকালীন সালাতটা ওয়াজিব নয়।
(رُبَّ) শব্দটি ‘অনেক’ এবং ‘কম’ উভয় অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (رُبَّ كَاسِيَةٍ) এবং (رُبَّ عَارِيَةٍ) শব্দের উদ্দেশ্য নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেছেনঃ এর অর্থ হলো, (رب امرأة) অনেক মহিলা। কেউ এর অর্থ করেছেন, (رَبَّ نَسَمَةٍ) অনেক আত্মা, কেউ আবার (رَبَّ نَفْسٍ) অনেক ব্যক্তি অর্থও করেছেন। যা হোক উদ্দেশ্য হলোঃ
১। এরা দুনিয়াতে অর্থের কারণে ভাল ভাল কাপড় পড়ে থাকবে কিন্তু আখিরাতে ‘আমল এবং সাওয়াববিহীন (উলঙ্গসম) উঠবে।
২। এরা দুনিয়াতে এত পাতলা এবং মসৃণ কাপড় পরিধান করত যে, মানুষের মনে হতো যেন ওটা পোষাকই নয়, বরং কাপড় পরেও হয়েছে তা উলঙ্গসম। এরই পরিণামে তারা আখিরাতে উলঙ্গ হয়ে উঠবে।
৩। তারা দুনিয়াতে আল্লাহর নি‘আমাত দ্বারা আবৃত কিন্তু তার শুকরিয়া আদায়ে মুক্ত বা উলঙ্গ থেকে আখিরাতে তারা সাওয়াব বা পুরস্কার থেকে বঞ্চিত থাকবে।
৪। তাদের দেহ হবে পোষাক আবৃত কিন্তু পিছন থেকে ওড়না বাঁধা থাকায় বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাবে, ফলে তারা উলঙ্গসম হয়ে পড়বে আর এজন্য ক্বিয়ামাতে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।
৫। সে নেককার স্বামীর সাথে যেন পোষাক আবৃত অবস্থায়ই ছিল কিন্তু ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন নিজের ‘আমল শূণ্য উলঙ্গ হয়ে উঠবে।