৯৭৯

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৭৯-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সালামের জবাব দিতেন। আমরা যখন নাজাশী বাদশাহর নিকট থেকে ফিরে এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলাম, তখন তিনি আমাদের সালামের জবাব দেননি। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনাকে সালাতের মধ্যে সালাম দিতাম, আপনি সালামের জবাব দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের মধ্যে অবশ্যই ব্যস্ততা আছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِيِّ سَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْنَا فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فِي الصَّلَاةِ فَتَرُدُّ عَلَيْنَا فَقَالَ: إِنَّ فِي الصَّلَاةِ لَشُغْلًا

وعن عبد الله بن مسعود قال: كنا نسلم على النبي صلى الله عليه وسلم وهو في الصلاة فيرد علينا فلما رجعنا من عند النجاشي سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا: يا رسول الله كنا نسلم عليك في الصلاة فترد علينا فقال: ان في الصلاة لشغلا

ব্যাখ্যা: (فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِيِّ) যখন আমরা নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম। নাজাশী হাবশার বাদশাহের উপাধি। হাদীসে বর্ণিত নাজাশীর নাম ছিল ‘‘আসহামা’’ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সালে ইন্তিকাল করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে তার গায়িবী জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর নির্দেশে একদল সহাবা (সাহাবা) তাদের দীন রক্ষার্থে হাবশায় হিজরত করেন। অতঃপর তাদের নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, মক্কার মুশরিকগণ ইসলাম গ্রহণ করেছেন ফলে তারা স্বদেশে ফিরে আসে। এখানে এসে তারা দেখতে পায় যে, প্রকৃত অবস্থা তার বিপরীত। বরং তাদের উপর মুশরিকদের নির্যাতনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়। এতে তারা পুনরায় হাবশাতে হিজরত করেন। এবার তাদের সংখ্যা পূর্বের চাইতে আরো অনেক বেশী ছিল। উল্লেখ্য যে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) উভয় দলের সাথে হিজরতের সহযাত্রী ছিলেন।

প্রথমবার তিনি মক্কাতে ফিরে আসেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের পূর্বে। আর দ্বিতীয়বার তিনি ফিরে মদীনাতে আসেন যা বাদ্‌র (বদর) যুদ্ধের প্রাক্কালে ছিল। হাদীসে বর্ণিত ফিরে আসা দ্বিতীয়বার ফিরে আসাই উদ্দেশ্য। এতে প্রমাণিত হয় যে, সালাতে কথা বলার নিষেধাজ্ঞা মক্কাতে ছিল না। বরং এ নিষেধাজ্ঞা ছিল মদীনাতে যেমনটি যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-এর হাদীস থেকে জানা যায় তিনি বলেনঃ আমরা সালাতে কথা বলতাম। কোন ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় তার পাশের সঙ্গীর সাথে কথা বলত। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হল, وَقُوْمُوْا لِلّهِ قَانِتِيْنَ ‘‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়াও’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৩৮)। তখন আমাদেরকে নীরব থাকতে আদেশ দেয়া হল এবং কথা বলতে নিষেধ করা হল। অত্র আয়াতটি সর্বসম্মতিক্রমে মাদানী আয়াত। এতে বুঝা গেল যে, সালাতরত অবস্থায় কথা বলার নিষেধাজ্ঞা মদীনাতে জারী হয়।

‘‘আমরা তাকে সালাম দিলে তিনি আমাদের প্রতি উত্তর করলেন না’’ অর্থাৎ কথার মাধ্যমে তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিলেন না। ইবনু আবী শায়বাতে ইবনু সীরীন হতে মুরসাল সানাদে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারাতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর সালামের জওয়াব দিয়েছিলেন।

‘‘সালাতে ব্যাস্ততা আছে’’ ইমাম নাবাবী বলেনঃ মুসল্লীর কাজ হল তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিয়ে ব্যাস্ত থাকা। তিনি কি বলেন তা চিন্তা করা। অতএব সালাতের কাজ বাদ দিয়ে সালামের জওয়াব দেয়া বা অন্য কোন কাজে লিপ্ত হবে না।

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাতরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হলে তিনি সালাত শেষে কথার মাধ্যমে সালামের জওয়াব দিবেন। অথবা সালাতরত অবস্থায় ইশারায় সালামের জওয়াব দিবেন। যদি কথার মাধ্যমে সালামের জওয়াব দেন তাহলে সালাত বিনষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে সালাতরত অবস্থায় সালামের কোন জওয়াব দিবে না। না কথার মাধ্যমে না ইশারায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)