৯৭৮

পরিচ্ছেদঃ ১৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৭৮-[১] মু’আবিয়াহ্ ইবনু হাকাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করি। যখন মুসল্লীদের মাঝে থেকে একজন হাঁচি দিলো তখন আমি ’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’ বললাম। ফলে লোকজন আমার প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপন করল। আমি বললাম, তোমাদের মা সন্তানহারা শোকাহত হোক। তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আমার দিকে এমন করে তাকাচ্ছ? মুসল্লীরা আমাকে নীরব করানোর জন্য নিজ নিজ রানের উপর হাত দিয়ে মারতে লাগল। আমি যখন লক্ষ্য করলাম তারা আমাকে চুপ থাকতে বলছে, তখন আমি নীরব হয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন। আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্যে উৎসর্গ হোক। তার চেয়ে এত চমৎকার শিক্ষাদানে কোন শিক্ষক তার পরবর্তীকালে বা তার পূর্ববর্তীকালে আমি দেখিনি। তিনি আমাকে না ধমকি দিলেন, না মারলেন, না বকলেন। তিনি শুধু এতটুকু বললেন, এ সালাতে মানবীয় কথাবার্তা বলা উপযুক্ত নয়। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ’তাসবীহ’ পড়া, ’তাকবীর’ বলা ও কুরআন পড়ার নাম। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি বলেছেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি জাহিলী যুগ ত্যাগকারী এক নতুন বান্দা। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসছেন। আমাদের মধ্যে অনেকে গণকের কাছে আসে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের কাছে আসবে না। আমি আবেদন করলাম, আমাদের অনেকে শুভ-অশুভ লক্ষণ মানে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা তারা নিজেদের মনের মধ্যে পেয়ে থাকে। তা যেন তাদেরকে কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)বলেন, আমি আবার বললাম, আমাদের মধ্যে এমন কতগুলো লোক আছে যারা রেখা টানে (ভবিষ্যদ্বাণী করে)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নবীদের মধ্যে একজন নবী রেখা টানতেন। অতএব কারো রেখা টানা এ নবীর রেখা টানার সাথে মিল থাকলে ঠিক আছে। (মুসলিম; মিশকাত সংকলকের উক্তি- তিনি বলেন, আমি ’’ওয়ালাকিন্নী সাকাততু’’-কে সহীহ মুসলিম ও হুমায়দীর পুস্তকে এভাবে পেয়েছি। তবে জামিউল উসূল-এর লেখক লাকিন্নী শব্দের উপর كذا শব্দের দ্বারা বিশুদ্ধতার প্রতি ইশারা করছে।)[1]

بَابُ مَا لَا يَجُوْزُ مِنَ الْعَمَلِ فِي الصَّلَاةِ وَمَا يُبَاحُ مِنْهُ

عَن مُعَاوِيَة ابْن الْحَكَمِ قَالَ: بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ. فَرَمَانِي الْقَوْم بِأَبْصَارِهِمْ. فَقلت: وَا ثكل أُمِّيَاهُ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَيَّ فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا كَهَرَنِي وَلَا ضَرَبَنِي وَلَا شَتَمَنِي قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ من كَلَام النَّاس إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ» أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قلت: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَقد جَاءَ اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُونَ الْكُهَّانَ. قَالَ: «فَلَا تَأْتِهِمْ» . قُلْتُ: وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ. قَالَ: «ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ فَلَا يَصُدَّنَّهُمْ» . قَالَ قُلْتُ وَمِنَّا رِجَالٌ يَخُطُّونَ. قَالَ: «كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ فَمَنْ وَافَقَ خَطَّهُ فَذَاكَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ قَوْلُهُ: لَكِنِّي سَكَتُّ هَكَذَا وُجِدَتْ فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ وَكِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ وَصُحِّحَ فِي «جَامِعِ الْأُصُولِ» بِلَفْظَةِ كَذَا فَوْقَ: لكني

عن معاوية ابن الحكم قال: بينا انا اصلي مع رسول الله صلى الله عليه وسلم اذ عطس رجل من القوم فقلت: يرحمك الله. فرماني القوم بابصارهم. فقلت: وا ثكل امياه ما شانكم تنظرون الي فجعلوا يضربون بايديهم على افخاذهم فلما رايتهم يصمتونني لكني سكت فلما صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فبابي هو وامي ما رايت معلما قبله ولا بعده احسن تعليما منه فوالله ما كهرني ولا ضربني ولا شتمني قال: «ان هذه الصلاة لا يصلح فيها شيء من كلام الناس انما هو التسبيح والتكبير وقراءة القران» او كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. قلت: يا رسول الله اني حديث عهد بجاهلية وقد جاء الله بالاسلام وان منا رجالا ياتون الكهان. قال: «فلا تاتهم» . قلت: ومنا رجال يتطيرون. قال: «ذاك شيء يجدونه في صدورهم فلا يصدنهم» . قال قلت ومنا رجال يخطون. قال: «كان نبي من الانبياء يخط فمن وافق خطه فذاك» . رواه مسلم قوله: لكني سكت هكذا وجدت في صحيح مسلم وكتاب الحميدي وصحح في «جامع الاصول» بلفظة كذا فوق: لكني

ব্যাখ্যা: (إِنَّ هذِهِ الصَّلَاةَ) এ বাক্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোন সালাতেই মানুষের সাথে কথা বলা বৈধ নয়। তা ফরয বা নফল যাই হোক।

ইমাম শাওকানী বলেন, (كَلَامُ النَّاسِ) দ্বারা উদ্দেশ্য অন্যের সাথে কথা বলা। ক্বাযী বলেনঃ কথাকে মানুষের দিকে সম্বন্ধ করার উদ্দেশ্য হল সালাতে দু‘আ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। অত্র হাদীসকে সালাতে যে কোন ধরনের কথা বলা নিষেধের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তা প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় যাই হোক। এমনকি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংশোধনের উদ্দেশে হলেও তা নিষেধ। এ অভিমত পোষণ করেন হানাফীগণ।

ইমাম মালিক-এর মতে সালাতের সংশোধন ব্যতীত স্বেচ্ছায় কথা বলা হারাম এবং এ ধরনের কথা সালাত বিনষ্ট করে। পক্ষান্তরে সালাতের সংশোধনের উদ্দেশে স্বেচছায় কথা বলা বৈধ। আর ভুল ও অজ্ঞতাবশতঃ কথা বললে সালাত বিনষ্ট হবে না। এর প্রমাণ যুল্ ইয়াদায়নের প্রসিদ্ধ হাদীস।

সালাতে হাঁচির জওয়াব দেয়া নিষেধ। আর তা এমন কথা যা সালাত বিনষ্ট করে।

হাঁচিদাতার জন্য স্বয়ং ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা বৈধ। কেননা তা মানুষের সাথে কথা বলার অন্তর্ভুক্ত নয়।

যারা সালাতের মধ্যে দু‘আ মাসূরাহ্ ব্যতীত দু‘আ করা অবৈধ বলেন তারা এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। এর জওয়াব এই যে, বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট দু‘আ করার অনুমতি পাওয়া যায়। আর দু‘আ মানুষের সাথে কথা বলা নয়। সালাতে কথা বলা হারাম হওয়ার বিষয় মক্কার ঘটনা। আর সালাতে দু‘আ করার অনুমতির ঘটনা মদীনার। অতএব সালাতে যে কোন ধরনের বৈধ বিষয়ে দু‘আ করা জায়িয।

(فَلَا تَأْتِهِمْ) তুমি তাদের কাছে আসবে না। ‘আলিমগণ বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (كُهَّانَ) গণকদের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তার কারণ এই যে, তারা অদৃশ্য বিষয়ে কথা বলে এবং এর মধ্যে কিছু সঠিক বলে প্রমাণিত হয় ফলে এর দ্বারা মানুষের ফিতনার মধ্যে পতিত হওয়ার আশংকা রয়েছে এজন্য যে, শারী‘আতের অনেক বিষয় সম্পর্কে মানুষদেরকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। আর অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা গণকদের নিকট যাওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত এবং তাদের কথা বিশ্বাস করাও নিষেধ।

(يَتَطَيَّرُوْنَ) তারা শুভাশুভ গ্রহণ করে। জাহিলী যুগে লোকেরা বিভিন্ন পশু পাখী দ্বারা শুভাশুভ গ্রহণ করত। পশু-পাখী ডানদিকে গেলে তা শুভ মনে করত। আর বামদিকে গেলে অশুভ মনে করত। এটা তাদের উদ্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে বাধা প্রদান করত। ফলে শারী‘আত এ ধরনের কার্যকলাপ অসার বলে সাব্যস্ত করেছে এবং এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছে।

(كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ) নাবীদের মধ্যে কোন এক নাবী রেখা টানতেন সে নাবী কে ছিলেন? বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ইদরীস (আঃ) অথবা দানিয়াল (আঃ)। যার রেখা টানা সেই নাবীর রেখা টানার সাথে মিলে যাবে তা বৈধ। কিন্তু তার রেখার পদ্ধতি কি ছিল তা জানার কোন সুস্পষ্ট পন্থা জানা নেই। তাই রেখা টানা বৈধ নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)