১৩৯

পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব

১৩৯-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মৃত যখন কবরের ভিতরে পৌঁছে, তখন (নেক) বান্দা কবরের ভিতর ভয়-ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্ত হয়ে উঠে বসে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? তখন সে বলে, আমি দীন ইসলামে ছিলাম। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? সে বলে, এ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর রসূল। আল্লাহর নিকট হতে আমাদের কাছে (হিদায়াতের জন্য) স্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছেন এবং আমরাও তাঁকে (পরিপূর্ণ) বিশ্বাস করেছি। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহকে কক্ষনো দেখেছ কি? সে উত্তরে বলে, দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। সে সেদিকে তাকায় এবং দেখে, আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তখন তাকে বলা হয়, দেখ! তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। তারপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। এখন সে জান্নাতের শোভা সৌন্দর্য ও এর ভোগ-বিলাসের প্রতি তাকায়। তাকে তখন বলা হয়, এটা তোমার (প্রকৃত) স্থান। কেননা তুমি দুনিয়ায় ঈমানের সাথে ছিলে, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছ। ইন-শা-আল্লাহ, ঈমানের সাথেই তুমি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন উঠবে।

অপরদিকে বদকার বান্দা তার কবরের মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? উত্তরে সে বলবে, আমি তো কিছুই জানি না। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? উত্তরে সে বলবে, আমি মানুষদেরকে যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হবে। এ পথ দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও এতে যা (সুখ-শান্তির উপায়-উপকরণ, সাজ-সরঞ্জাম) রয়েছে তা দেখবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দাও যেসব জিনিস হতে আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে রেখেছেন। তারপর তার জন্য আর একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর সে সেদিকে দেখবে আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তাকে তখন বলা হবে, এটা তোমার (প্রকৃত) অবস্থান। তুমি সন্দেহের উপরেই ছিলে, সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। ইনশা-আল্লা-হ, এ সন্দেহের উপরই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তোমাকে উঠানো হবে। (ইবনু মাজাহ্)[1]

باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ يَصِيرُ إِلَى الْقَبْرِ فَيَجْلِسُ الرَّجُلُ الصَّالح فِي قَبره غير فزع وَلَا مشعوف ثمَّ يُقَال لَهُ فِيمَ كُنْتَ فَيَقُولُ كُنْتُ فِي الْإِسْلَامِ فَيُقَالُ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُولُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَنَا بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَصَدَّقْنَاهُ فَيُقَالُ لَهُ هَلْ رَأَيْتَ اللَّهَ فَيَقُولُ مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَرَى اللَّهَ فَيُفْرَجُ لَهُ فُرْجَةً قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يُحَطِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَا وَقَاكَ اللَّهُ ثمَّ يفرج لَهُ قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلَى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَال لَهُ هَذَا مَقْعَدك وَيُقَال لَهُ عَلَى الْيَقِينِ كُنْتَ وَعَلَيْهِ مِتَّ وَعَلَيْهِ تُبْعَثُ إِن شَاءَ الله وَيجْلس الرجل السوء فِي قَبره فَزعًا مشعوفا فَيُقَال لَهُ فِيمَ كُنْتَ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي فَيُقَالُ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُولُ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قولا فقلته فيفرج لَهُ قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلَى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَا صَرَفَ اللَّهُ عَنْك ثمَّ يفرج لَهُ فُرْجَةً قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يُحَطِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ لَهُ هَذَا مَقْعَدُكَ عَلَى الشَّك كنت وَعَلِيهِ مت وَعَلِيهِ تبْعَث إِن شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان الميت يصير الى القبر فيجلس الرجل الصالح في قبره غير فزع ولا مشعوف ثم يقال له فيم كنت فيقول كنت في الاسلام فيقال له ما هذا الرجل فيقول محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم جاءنا بالبينات من عند الله فصدقناه فيقال له هل رايت الله فيقول ما ينبغي لاحد ان يرى الله فيفرج له فرجة قبل النار فينظر اليها يحطم بعضها بعضا فيقال له انظر الى ما وقاك الله ثم يفرج له قبل الجنة فينظر الى زهرتها وما فيها فيقال له هذا مقعدك ويقال له على اليقين كنت وعليه مت وعليه تبعث ان شاء الله ويجلس الرجل السوء في قبره فزعا مشعوفا فيقال له فيم كنت فيقول لا ادري فيقال له ما هذا الرجل فيقول سمعت الناس يقولون قولا فقلته فيفرج له قبل الجنة فينظر الى زهرتها وما فيها فيقال له انظر الى ما صرف الله عنك ثم يفرج له فرجة قبل النار فينظر اليها يحطم بعضها بعضا فيقال له هذا مقعدك على الشك كنت وعليه مت وعليه تبعث ان شاء الله تعالى» . رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: (انْظُرْ إِلى مَا وَقَاكَ اللّهُ) ‘‘দেখো! আল্লাহ তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে রক্ষা করেছেন।’’ অর্থাৎ- তুমি ঐ শাস্তির দিকে তাকিয়ে দেখো যে শাস্তি থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন স্বীয় কৃপায় তোমাকে কুফরী ও পাপ থেকে বিরত রেখে। যে পাপ মানুষকে ঐ শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করে তথা শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

(فَيَنْظُرُ إِلى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا) ‘‘অতঃপর সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও ভোগ-বিলাসের দিকে তাকায়।’’ অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি তখন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের যে নি‘আমাত সেটার মধ্যে যে দালান-কোঠা এবং হূর গেলেমান আছে সব দেখতে পাবে।

(فَيُقَالُ لَه هذَا مَقْعَدُكَ) ‘‘অতঃপর তাকে বলা হবে এটাই তোমার আবাসস্থল।’’ অর্থাৎ- কবর থেকে পুনরুত্থানের পর বান্দাদের হিসাব-নিকাশের পর এ জান্নাতই হবে তোমার আবাসস্থল, এখানেই তুমি অনন্তকাল থাকবে যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

(إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى) সন্দেহ সৃষ্টির উদ্দেশে বলা হয়নি। বলার কারণ দু’টি হতে পারে।

১. বারাকাতের উদ্দেশে।

২. নিশ্চয়তা বুঝানোর উদ্দেশে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)