৫৮৯২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৯২-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। সে যুদ্ধে তাঁর সাথে অংশগ্রহণকারী ইসলামের দাবিদার জনৈক লোক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ লোকটি জাহান্নামী।
যুদ্ধ শুরু হলে সে ব্যক্তি প্রাণপণ যুদ্ধ করে মারাত্মকভাবে আহত হলো। অতঃপর এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! লক্ষ্য করুন। আপনি যে লোকটিকে জাহান্নামী বলেছেন, সে আল্লাহর পথে প্রাণপন লড়াই করে এখন মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় আছে। এবারও তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। (বর্ণনাকারী বলেন,) এ কথা শুনে কারো কারো মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। এমতাবস্থায় লোকটি ভীষণভাবে জখমের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে স্বীয় হাতখানা তীরদানের দিকে বাড়িয়ে তীর বের নিল এবং নিজের বুকের মধ্যে গেঁথে দিল (তথা আত্মহত্যা করল)। এটা দেখে মুসলিমদের কতিপয় লোক দৌড়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনার কথাটিকে সত্যে পরিণত করেছেন। অমুক লোকটি নিজেই আত্মহত্যা করেছে। এ সংবাদ শোনামাত্রই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলে উঠলেন, ’আল্ল-হু আকবার’। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
অতঃপর বললেন, হে বিলাল! উঠ! লোকেদের মধ্যে এ ঘোষণা দিয়ে দাও যে, পূর্ণ মুমিন ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর আল্লাহ তা’আলা (অনেক সময়) পাপী লোকের দ্বারাও এ দীন ইসলামকে শক্তিশালী করে থাকেন। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أبي هريرةَ قَالَ شَهِدْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُنَيْنًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ مَعَهُ يَدَّعِي الْإِسْلَامَ هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلَمَّا حَضَرَ الْقِتَالُ قَاتَلَ الرَّجُلُ مِنْ أَشَدِّ الْقِتَالِ وَكَثُرَتْ بِهِ الْجِرَاحُ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ الله أَرأيتَ الَّذِي تحدثت أَنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ قَدْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مِنْ أَشَدِّ الْقِتَالِ فَكَثُرَتْ بِهِ الْجِرَاحُ فَقَالَ أَمَّا إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَكَادَ بَعْضُ النَّاسِ يَرْتَابُ فَبَيْنَمَا هُوَ عَلَى ذَلِكَ إِذْ وَجَدَ الرَّجُلُ أَلَمَ الْجِرَاحِ فَأَهْوَى بِيَدِهِ إِلَى كِنَانَتِهِ فَانْتَزَعَ سَهْمًا فَانْتَحَرَ بِهَا فَاشْتَدَّ رِجَالٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ صَدَّقَ اللَّهُ حَدِيثَكَ قَدِ انْتَحَرَ فُلَانٌ وَقَتَلَ نَفْسِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ يَا بِلَالُ قُمْ فَأَذِّنْ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ وَإِنَّ اللَّهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدينَ بِالرجلِ الْفَاجِر. رَوَاهُ البُخَارِيّ رواہ البخاری (3062) [و مسلم (178 / 111)، (305)] ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা : ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি মহান বীরত্বের সাথে লড়াই করার পরেও আত্মহত্যা করেছিল। তার নাম ছিল 'কিরমান'। ইমাম খত্বীব আল বাগদাদী “জামিউল উসূল” গ্রন্থে বলেন, সে ছিল একজন মুনাফিক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
কিন্তু ফাতহুল বারীতে ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উক্ত ব্যক্তির নাম ছিল ‘কযমান আয যফরী'।
ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) দৃঢ়তার সাথে বলেন, এ ঘটনাটি ঘটেছিল উহুদ যুদ্ধের সময়। সে ছিল মুসলিমদের থেকে পিছনে মহিলাদের দলের সাথে। এক পর্যায়ে সে বেরিয়ে এসে প্রথম সারিতে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করা শুরু করল। তারপর সে বীরত্বের সাথে তরবারি দিয়ে লড়াই করল। অতঃপর যখন মুসলিমেরা বের হয়ে গেল তখন সে তার তরবারির হাতল ভেঙ্গে ফেলল এবং বলতে লাগল ‘পলায়ন করা থেকে আমার কাছে মৃত্যুবরণ করাই অধিক উত্তম'। তারপর কতাদাহ্ ইবনু নুমান তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলল, তোমার জন্য শাহাদাতের সুসংবাদ। তখন ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম, আমি দীন রক্ষার লক্ষ্যে যুদ্ধ করিনি। বরং আমি যুদ্ধ করেছি শুধু আমার সম্প্রদায়কে রক্ষা করার লক্ষ্যে। তারপর সে যখমের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে গেল এবং এক পর্যায়ে সে আত্মহত্যা করে ফেলল। (ফাতহুল বারী হা, ৪২০৩)

(لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ) অর্থাৎ শুধুমাত্র মু'মিন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখানে ঐ সকল মুমিন বান্দাদের কথা বলা হয়েছে যারা সফলতার সাথে প্রথমবারেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতএব প্রথমবারেই সফলতার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্যই একনিষ্ঠ, খাটি ও পূর্ণ মুমিন হতে হবে।
(وَإِنَّ اللَّهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدينَ بِالرجلِ الْفَاجِر) অর্থাৎ অবশ্যই আল্লাহ এই দীনকে পাপাচার লোকেদের মাধ্যমেও শক্তিশালী করে থাকেন।
এর ব্যাখ্যা জামি গ্রন্থে বলা হয়েছে, অবশ্যই আল্লাহ এই দীনকে এমন লোকেদের দ্বারাও শক্তিশালী করেন, যাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। ইবনু উমার (রাঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, অবশ্যই আল্লাহ এমন লোকদের দ্বারাও ইসলামকে শক্তিশালী করেন, যারা ইসলামের অনুসারী না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)