লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৭৩-[৮] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন মানুষ একে অপরে সমবেত অবস্থায় উদ্বেলিত ও উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়বে। তাই তারা সকলে আদম ’আলায়হিস সালাম-এর কাছে গিয়ে বলবে, আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে শাফা’আত করুন। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর খলীল। তাই তারা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই, বরং তোমরা মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও। কারণ তিনি কালীমুল্লাহ (যিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথন করেছেন)। এবার তারা মুসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই, বরং তোমরা ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর আত্মা ও কালিমাহ্। তখন তারা ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাবে। তিনিও বলবেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ (সা.) -এর কাছে যাও।
তখন তারা সকলে আমার কাছে আসবে। তখন আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। এবার আমি আমার প্রভুর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। এ সময় আমাকে প্রশংসা ও স্তুতির এমন সব বাণী ইলহাম করা হবে, যা এখন আমার জানা নেই। আমি ঐ সকল প্রশংসা দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং তার উদ্দেশে সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ। মাথা উঠাও। বল, তোমার বক্তব্য শুনা হবে। প্রার্থনা কর, যা চাবে তা দেয়া হবে। আর শাফা’আত কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! আমার উম্মত, আমার উম্মত। (অর্থাৎ আমার উম্মতের উপর রহম করুন, আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন) বলা হবে, যাও, যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তখন আমি গিয়ে তাই করব। অতঃপর ফিরে আসব এবং ঐ প্রশংসা বাণী দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব, তারপর সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার বক্তব্য শুনা হবে। চাও, যা চাবে তা দেয়া হবে। আর শাফা’আত কর গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! আমার উম্মত আমার উম্মত! (আমাকে) বলা হবে, যাও যাদের হৃদয়ে এক অণু বা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। অতএব আমি গিয়ে তাই করব। তারপর আবার ফিরে আসব এবং উক্ত প্রশংসা বাণী দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার কথা শুনা হবে, যাও যাদের হৃদয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমাণ ঈমান আছে, তাদের সকলকেই জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তখন আমি গিয়ে তাই করব।
তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসব এবং ঐ সকল প্রশংসা বাণী দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও এবং বল, তোমার কথা শুনা হবে। চাও, যা চাইবে তা দেয়া হবে। সুপারিশ কর, তোমার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। আমি বলব, হে প্রভু! যারা শুধু লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলেছেন, আমাকে তাদের জন্যও শাফা’আত করার অনুমতি দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার ’ইযযত ও জালাল এবং আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের শপথ করে বলছি, যারা লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলেছে, আমি নিজেই তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ فَيَأْتُونَ آدم فَيَقُولُونَ: اشفع لنا إِلَى رَبِّكَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ فَإِنَّهُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى فَإِنَّهُ كَلِيمُ الله فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى فَإِنَّهُ رُوحُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ فَيَأْتُونِّي فَأَقُولُ أَنَا لَهَا فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فَيُؤْذَنُ لِي وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُهُ بِهَا لَا تَحْضُرُنِي الْآنَ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ وَأَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تشفع فَأَقُول يارب أُمَّتِي أُمَّتِي فَيُقَالُ انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَنْطَلِقُ فأفعل ثمَّ أَعُود فأحمده بِتِلْكَ المحامدوأخر لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَقُولُ يارب أُمَّتِي أُمَّتِي فَيُقَالُ انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ أَوْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ ثُمَّ أَعُودُ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ المحامدوأخر لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَقُولُ يارب أُمَّتِي أُمَّتِي فَيُقَالُ انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةِ من خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجْهُ مِنَ النَّارِ فَأَنْطَلِقُ فأفعل ثمَّ أَعُود الرَّابِعَة فأحمده بِتِلْكَ المحامدوأخر لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَقُولُ يارب ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَالَ لَيْسَ ذَلِكَ لَكَ وَلَكِنْ وَعِزَّتِي وَجَلَالِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي لَأُخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ لَا إِلَه إِلَّا الله . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (7510) و مسلم (326 / 193)، (475) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের বিষয়বস্তু পূর্বের হাদীসের মতই। হাদীসের দীর্ঘ বর্ণনা ও স্পষ্টতা সর্বজনবিদিত, অতএব ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
কিয়ামতের দিন এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে যে মানুষের দিক-বিদিক জ্ঞান থাকবে না। মানুষ দিশেহারা হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে, অতঃপর কিছু মানুষ পরামর্শ করে আদি পিতা আদম এর কাছে আসবে এবং বলবে, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে একটু শাফা'আত বা সুপারিশ করুন, তিনি যেন দ্রুত হিসাবের নির্দেশ করেন যাতে আমরা একটু শান্তি পাই অথবা আমাদের প্রতিফল যাই হোক এটা পেয়ে যাই এবং হাশরের ময়দানের এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি পাই। আদম 'আলায়হিস সালাম বলবেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই বরং তোমরা ইবরাহীম-এর কাছে যাও তিনি আল্লাহর খলীল। লোকেরা ইবরাহীম-এর কাছে যাবে তিনিও একই কথা বলবেন। এভাবে বিভিন্ন নবীদের কাছে মানুষ যাবে কিন্তু কেউ শাফাআতের সাহস করবেন না। সকল নবী নিজ নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে ভীত এবং লজ্জিত হয়ে আল্লাহর সামনে যেতে সাহস করবেন না।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তারা সবাই বলবেন, আল্লাহ তা'আলা আজ এত রাগান্বিত হয়েছেন যা ইতোপূর্বে আর কখনো হননি এবং হবেন না। অতএব তার সামনে যেতে পারব না। অবশেষে লোকেরা যখন নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে আসবে তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমিই এ কাজের জন্য উপযুক্ত। অতঃপর তিনি (সা.) আল্লাহর নিকট যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করবেন, ফলে তাকে অনুমতি দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আল্লাহর সমীপে গিয়ে এমন প্রশংসা করবেন, যে প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে যাবেন। অতঃপর সিজদায় পড়বেন আল্লাহ তা'আলা তাকে মাথা উঠাতে বলবেন আর বলবেন, তুমি বল তোমার কথা শুনা হবে। প্রার্থনা কর (যা চাইবে) দেয়া হবে, আর শাফা'আত কর কবূল করা হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বলবেন, হে প্রভু! আমার উম্মত, আমার উম্মত। অর্থাৎ তাদের ক্ষমা কর তাদের প্রতি রহম কর। আল্লাহ বলবেন, যাও তোমার উম্মতের যাদের অন্তরে একটি যবের দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে তাদের জাহান্নাম থেকে বের কর। এভাবে তিনবার শাফা'আত করবেন এবং যার অন্তরে একটি সরিষা দানার ক্ষুদ্রতম অংশ পরিমাণ ঈমানও থাকবে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করবেন। চতুর্থবার আল্লাহর নবী (সা.) এই জীবনে একবার যারা লা- ইলাহা ইল্লাল্প-হ' পাঠ করেছে তাদের জন্য সুপারিশের অধিকার প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ বলবেন, এ অধিকার আপনার নয় বরং আমার। আমার ‘ইয্যত, মহত্ব, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ-যারা লা- ইলা-হা ইল্লাল্লহ পাঠ করেছে আমি নিজেই তাদের জাহান্নাম থেকে বের করব। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নিজেই জাহান্নাম থেকে তাদের বের করবেন। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা আল্লাহ তা'আলার মহত্ব ও নামের মহান মর্যাদার প্রতিশ্রুতি, এ মর্যাদা অন্য কারো থাকতে পারে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমল ছাড়া শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা আল্লাহ তা'আলার জন্য একান্ত, আর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও-এর ক্ষেত্রে শাফা'আতের বিশেষত্বের বিষয়টি বিশ্বাসের সাথে খুব নগণ্য হলেও আমলের শর্তে বিভিন্ন স্তরের মুমিনের বেলায় প্রযোজ্য। অতএব উভয়ের আলাদা-আলাদা বিশেষত্ব সুস্পষ্ট। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড ৫১ পৃ., হা. ৩২২)