১১৭৯

পরিচ্ছেদঃ ৩২/৪২. ইয়াহুদীদের তাগূত কা'ব বিন আশরাফকে হত্যা।

১১৭৯. জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাব ইবনু আশরাফের হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? কেননা, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) দাঁড়ালেন, এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ বললেন, তাহলে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ কা’ব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদাকা চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা’ব ইবনু আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে আমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে।

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দু’ ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুইয়ান বলেন, ’আমর (রহঃ) আমার নিকট হাদীসটি কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দু’ ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দু’ ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে, তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবনু আশরাফ বলল, ধারতো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, কী জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ।

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ তে বললেন, আপনি আরবের একজন সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কিভাবে, আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দু’ ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। শেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা) তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন।

এরপর তিনি কাব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই আবূ নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা’ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। তখন তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। ’আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কা’বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোটা ঝরছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কা’ব ইবনু আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত।

(বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) সঙ্গে আরো দু’ ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফইয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। ’আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কা’ব ইবনু আশরাফ) আসবে। আমার ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবূ আবস ইবনু জাবর হারিস ইবনু আওস এবং আব্বাদ ইবনু বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দু লোককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে।

তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কা’ব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্ৰাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। ’আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কা’ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্ৰান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি আবার বললেন, আমাকে আবার শুঁকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তারা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এ খবর দিলেন।

قتل كعب بن الأشرف طاغوت اليهود

حديث جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَامَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَتُحِبُّ أَنْ أَقْتُلَهُ قَالَ: نَعَمْ قَالَ: فَأْذَنْ لِي أَنْ أَقُولَ شَيْئًا قَالَ: قُلْ فَأَتَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ، فَقَالَ: إِنَّ هذَا الرَّجُلَ قَد سَأَلَنَا صَدَقَةً، وَإِنَّهُ قَدْ عَنَّانَا، وَإِنِّي قَدْ أَتَيْتُكَ أَسْتَسْلِفُكَ قَالَ: وَأَيْضًا، وَاللهِ لَتَمَلُّنَّهُ قَالَ إِنَّا قَدِ اتَّبَعْنَاهُ فَلاَ نُحِبُّ أَنْ نَدَعَهُ حَتَّى نَنْظرَ إِلَى أَيِّ شَيْءٍ يَصِيرُ شَأْنُهُ وَقَدَ أَرَدْنَا أَنْ تُسْلِفَنَا وَسْقًا أَوْ وَسْقَيْنِ فَقَالَ: نَعَمْ، ارْهَنُونِي قَالُوا: أيَّ شَيْءٍ تُرِيدُ قَالَ: ارْهَنُونِي نِسَاءَكُمْ قَالُوا: كَيْفَ نَرْهَنُكَ نِسَاءَنَا، وَأَنْتَ أَجْمَلُ الْعَرَبِ قَالَ: فَارْهَنُونِي أَبْنَاءَكمْ قَالُوا: كَيْفَ نَرْهَنُكَ أَبْنَاءَنَا، فَيُسَبُّ أَحَدُهُمْ فَيُقَالُ رُهِنَ بِوَسْقٍ أَوْ وَسْقَيْنِ، هذَا عَارٌ عَلَيْنَا، وَلكِنَّا نَرْهَنُكَ الَّلأْمَةَ (يَعْنِي السِّلاَحَ) فَوَاعَدَهُ أَنْ يَأْتِيَهُ، فَجَاءَهُ لَيْلاً وَمَعَهُ أَبُو نَائِلَةَ، وَهُوَ أَخو كَعْبٍ مِنَ الرَّضَاعَةِ فَدَعَاهُمْ إِلَى الْحِصْنِ، فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ؛ فَقَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: أَيْنَ تَخْرُجُ هذِهِ السَّاعَةَ فَقَالَ: إِنَّمَا هُوَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ وَأَخِي أَبُو نَائِلَةَ قَالَتْ: أَسْمَعُ صَوْتًا كَأَنَّهُ يَقْطُرُ مِنْهُ الدَّمُ قَالَ: إِنَّمَا هُوَ أَخِي مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ وَرَضِيعِي أَبُو نَائِلَةَ، إِنَّ الْكَرِيمَ لَوْ دُعِيَ إِلَى طَعْنَةٍ بِلَيْلٍ لأَجَابَ قَالَ: وَيُدْخِلُ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ مَعَهُ رَجُلَيْنِ فَقَالَ: إِذَا مَا جَاءَ فَإِنِّي قَائِلٌ بَشَعَرِهِ فَأَشَمُّهُ، فَإِذَا رَأَيْتُمُونِي اسْتَمْكَنْتُ مِنْ رَأْسِهِ فَدُونَكُمْ فَاضْرِبُوهُ وَقَالَ مَرَّةً: ثُمَّ أُشِمُّكُمْ فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ مَتَوَشِّحًا، وَهُوَ يَنْفَحُ مِنْهُ رِيحُ الطِّيبِ فَقَالَ: مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ رِيحًا، أَيْ أَطْيَبَ قَالَ: عِنْدِي أَعْطَرُ نِسَاءِ الْعَرَبِ وَأَكْمَلُ الْعَرَبِ؛ فَقَالَ: أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أَشَمَّ رَأْسَكَ قَالَ: نَعَمْ فَشَمَّهُ ثُمَّ أَشَمَّ أَصْحَابَهُ ثُمَّ قَالَ: أَتأْذَنُ لِي قَالَ: نَعَمْ فَلَمَّا اسْتَمْكَنَ مِنْهُ، قَالَ: دُونَكُمْ فَقَتَلُوهُ، ثُمَّ أَتَوُا النَبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرُوهُ


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ