লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাগ ও অহংকার
৫১০৭-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণ ঈমান থাকবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এবং যে ব্যক্তির অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَضَبِ وَالْكِبَرِ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ النَّارَ أحد فِي قلبه مِثْقَال حَبَّة خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ. وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ كبر» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (لَا يَدْخُلُ النَّارَ أحد فِي قلبه مِثْقَال حَبَّة) উক্ত হাদীসাংশে مِثْقَال حَبَّة এর অর্থ হলো কোন শস্যদানার ওজনের পরিমাণ। তুহফাতুল আহ্ওয়াযীর লেখক মাজমা‘ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, مِثْقَال শব্দটি মূলত ওজনের পরিমাণ বুঝায়। কম হোক বা বেশী হোক। কিন্তু লোকেরা শুধুমাত্র দীনারের হিসাব সংখ্যায় শব্দটিকে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করছে। যা মোটেও উচিত নয়।
(শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ৯১/১৪৭; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৮৭; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৮)
(مِنْ خَرْدَلٍ) বলা হয়েছে, خَرْدَلٍ হলো কালো বর্ণের শস্যদানা যা দেখতে ক্ষুদ্র অণুর মতো। অর্থাৎ একেবারে ছোট। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৮৭; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৮)
(مِنْ كبر) ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ অহংকারের ব্যাখ্যা দু’টি পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। ১. হতে পারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্ক এবং কুফরীমূলক অহংকারের উদ্দেশ্য করেছেন। কেননা হাদীসের শেষাংশে তিনি বিপরীত প্রতিদান হিসেবে জান্নাতের জন্য ঈমানকে দাঁড় করিয়েছেন আর ঈমানের বিপরীত হচ্ছে শির্ক ও কুফরী। কাজেই এখানে এমন অহংকার উদ্দেশ্য যা শির্ক বা কুফরীর সমতুল্য। এ অবস্থায় কেউ জান্নাতে যাবে না। ২. আল্লাহ সুবহানাহূ যখন কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে ইচ্ছা পোষণ করেন তখন তার অন্তর থেকে অহংকার দূর করে দেন। এভাবে সে অহংকার ও হিংসামুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ
‘‘এবং তাদের অন্তরে যে হিংসা বিদ্বেষ ছিল আমি তা দূর করে দেই...।’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ৪৩)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) উক্ত ব্যাখ্যা দু’টি সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদীসের শেষাংশে যে অহংকারের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের কাছে সুপরিচিত। তা হলো মানুষের সামনে নিজেকে বড় মনে করা এবং তাদেরকে অবহেলার চোখে দেখা, এমনকি সৎ বা সঠিক বিষয় সামনে আসলেও তা প্রত্যাখ্যান করে মিথ্যা বা ভুলের উপর অবিচল থাকা। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এ কথাটি পছন্দ করেছেন। কোন কোন মুহাক্কিক বলেছেন যে, কেউ যদি অহংকার করা বৈধ মনে করে তাহলে জাহান্নামে যাওয়াই হবে তার প্রতিদান। তবে যারা আল্লহকে এক বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে তার শাস্তি ভোগ করার পর একবার না একবার জান্নাতে যাবেই। কেউ বলেছেন, (لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ) এর অর্থ হলো প্রথমবারেই মুত্তাক্বীদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, বরং শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (لَا يَدْخُلُ النَّارَ) এর অর্থ হলো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমনটি নয় বরং আল্লাহ চাইলে সে জাহান্নামে যেতে পারে।
তুহফাতুল আহওয়াযীর লেখক বলেনঃ مِثْقَال حَبَّة مِنْ إِيمَانٍ এ কথাটিই প্রমাণ করে যে, ঈমান কমে এবং বাড়ে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৮৭; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৮; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)